। অনুগল্প।

 ইসমাইল স্যার

✍️ – কেয়া দেবনাথ

গ্রা+ডাক দক্ষিণ চাতরা, থানা-বাদুড়িয়া, উত্তর চব্বিশ পরগণা, সূচক–৭৪৩২৪৭

********

রিণি—-

তখন  আমি দ্বিতীয় শ্রেণি, প্রোমোশন পেয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে  কিন্তু থ্রিতে উঠবো না, খুব কাঁদছি– মা বলছে, তুই নতুন ক্লাসে উঠেছিস প্রথম দিন ক্লাসে গিয়ে বসবি, এ তো পরমানন্দের কথা– তা না মেয়ে কেঁদেই চলেছে কিরে ক্লাসে উঠবি না? দেখ্ তো কি করে বোঝাই তোকে এখন– না না একদম না ওরে বাবা!  থ্রি-ফোর এ ইসমাইল স্যর ছড়ি নিয়ে ঢোকে,  খুব মারে পড়া না করলে বা  স্কুলে না আসলে। তার মুখটাও ভয়ংকর। জানো মা দেখলেই ভয় করে। ও— তুই তো সোনা মেয়ে কথা শুনিস, পড়া করিস, তোকে মারবে না দেখিস-

 এক বুক ভয় নিয়ে বাবার সঙ্গে স্কুলে গেলাম প্রথমদিন, বাবা হাই স্কুলের মাস্টারমশাই, আমাকে পৌঁছে দিয়ে স্কুলে চলে গেল।   হ্যাঁ সেই সময় মায়েরা স্কুলে দেওয়া-নেওয়া করত না।

 সেদিনও কিছু ছাত্র-ছাত্রী প্রচন্ড মার খেলো আর আমি ভয়ে কেদেই ফেললাম।                                                                 মাসখানেক পর শরীর খারাপের জন্য দুদিন স্কুলে যেতে পারিনি। বাবাকে চিঠি লিখে দিতে বলেছিলাম কিন্তু বাবা  ভুলে গিয়েছিল তাই চিঠি আর নিয়ে যাওয়া হয়নি। এদিকে আমি তো ভয়ে ভয়ে আছি- প্রথম পিরিয়ডি অংকের- যথাসময়ে ছড়ি নিয়ে ঢুকলেন স্যার আমি মেয়েদের সারির প্রথম বেঞ্চের ঠিক পাশে বসি। তাই আমার দিকেই নজর টা পড়ে গেল প্রথমে, বজ্র দৃষ্টিতে দেখলেন আমাকে,– কিরে দুদিন আসিস নি কেন? কই চিঠি দেখি— ভয়ে তো কাঁপতে  লেগে গেছি, তো তো করছি—সপাৎ–সপাৎ–সপাৎ।

 সেদিন বিকালে আদর করতে গিয়ে বাঁ হাতের বাহুর পাশে তিনটি কালো দাগ দেখলে বাবা জিজ্ঞাসা করল স্নেহভরে,– এটা কিসের দাগ রে মা,? না প্রথমে বলতে পারিনি, বাবা মাথায় হাত রাখতেই আদ্যোপান্ত ধীরে ধীরে বলে যাই, কেঁদেও ফেলি আহ্লাদে, বাবা বলল,- অমানুষ একটা। পাটকাঠির মতো হাত শরীরটা দেখলেও মায়া হয় না? ততক্ষণে বাবার চোখে ও জল।

Loading