আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে
ভারতের বর্তমান কূটনীতি
প্রফেসর ডক্টর কুশল সেন
অধ্যাপক (ফলিত সংখ্যাতত্ত্ব), Astrological Research Institute of Krishnamurti Paddhati (ARIKP)
সদস্য, মার্গদর্শক মন্ডল, ভারতীয় বৈদিক জ্যোতিষ সংস্থানম্, বারানসী
e-mail : kooshoeg@gmail.com
ডঃ কুশল সেন (বিশেষ প্রতিনিধি) – বিগত ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখ আফগনিস্তান তালিবাদের দখলে যাওয়ার পরেই এক অন্তবর্তীকালীন সরকারের গঠন হয় প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মহম্মদ হাসান আকুন্দের তত্ত্বাবধানে। এই হাসান আকুন্দই আফগানিস্তানের বামিয়ানে বুদ্ধমূর্তি ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছিলেন।এরপরে মোল্লা আব্দুল গনি বরাদরকে উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি তালিবান সরকারের উপ-প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তাকে আইএসআই ২০১০ সালে গ্রেপ্তারের করে এবং ২০১৮ সালে রেহাই করে। তিনিই প্রথম তালিবানি নেতা যিনি আমেরিকান রাষ্ট্রপতির সাথে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছিলেন। এছাড়াও তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমর –এর পুত্র মোল্লা ইয়াকুব তালিবানি সরকারের রক্ষামন্ত্রী হয়েছেন। হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিশ্বস্ত মুখপাত্র মুল্লা তাড় মীর জবাদ, ডেপুটি ইন্টেলিজেন্স চীফ এর দায়িত্ব পেয়েছেন।
আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এফবিআই-এর ওয়েবসাইটের সূত্রানুসারে সিরাজুদ্দিন হাক্কানী প্রকৃতপক্ষে আফগানিস্তানের পূর্বতন রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাইয়ের হত্যার প্রচেষ্টাতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। গোপন তথ্যভান্ডারের সূত্রানুসারে, বর্তমান আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের ক্যাবিনেটে ৩৩ জনের মধ্যে ১৭ জন মন্ত্রীই তালিবানী গ্রুপ এবং হাক্কানী নেটওয়ার্কের সক্রিয় সদস্য। আফগানিস্তানের এই সন্ত্রস্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক সমীকরণ ধীরে ধীরে বদল হচ্ছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন ও তুর্কী এই চারটি দেশ নিয়ে মধ্য এশিয়াতে এক নতুন জোট তৈরী হল, অপরদিকে ভারত, রাশিয়া ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে এই মুহূর্তে রাজী নয়।
এই নতুন সমীকরনের মাঝেই বিগত ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ভারতের এনএসএ (জাতীয় সুরক্ষা পরামর্শদাতা) অজিত দোভাল এবং রাশিয়ার এনএসএ (জাতীয় সুরক্ষা পরামর্শদাতা) নিকোলাই পেত্রোশভ এক উচ্চ পর্যায়ের মিটিং করেছেন এবং ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩ম ভার্চুয়াল ‘ব্রিক্স’ (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না, সাউথ আফ্রিকা)সম্মেলনে ভারতের যশস্বী প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আরও একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই দুই উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক বৈঠকে বর্তমান পরিবর্তিত আফগান পরিস্থিতিতে; মধ্য এশিয়াতে তুর্কী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী ‘আইএসআইএস’ এর মদতপুষ্ট বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের দ্বারা ভয়াবহ সন্ত্রাসজনক কার্যকলাপ হওয়ার চিন্তাজনক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভারত অবশ্য আফগানিস্তান পরিস্থিতিতে সমদূরত্ব বজায় রেখে এই মুহূর্তে পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে।
কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতবর্ষ ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি হয়ত এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ; কিন্তু পৌরানিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরবর্তী অনুচ্ছেদটি হয়ত খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হয়।
৩১৩৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের পৌষ মাসে সমাপ্ত হয় মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ধ্বংসবশেষের মধ্যে শরশয্যাতে শায়িত পিতামহ ভীষ্ম একাকী সূর্যের উত্তরায়ণের প্রথম একাদশী তিথির জন্য প্রতীক্ষারত, কারণ তাঁর ইচ্ছামৃত্যুর বরদান ছিল।তখন এক পরিচিত মধুর কন্ঠস্বর তাঁর কানে এসে পৌঁছালো … ‘প্রণাম পিতামহ’। তখন ভীষ্মের শুষ্ক ওষ্ঠে এক মৃদু হাস্য ও প্রত্যুত্তরে তিনি বলে ওঠেন … ‘‘এসো দেবকীনন্দন, তুমি স্বাগত। আমার অন্তিম সময় আগত, আমি বহুক্ষণ ধরেই তোমাকে স্মরণ করছিলাম।’’
তখন সেই বহু প্রতিক্ষীত ক্ষণে পিতামহ ভীষ্ম শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। ‘এই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যা হয়েছে তা সবই কী ঠিক?’ তখন বাসুদেব কয়েকটি যুগান্তকারী কথা বলেছিলেন ‘‘ পিতামহ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া হয় কিন্তু নির্ণয় সর্বদা বর্তমানের পরিস্থিতির আধারে নিতে হয়। পাপ-এর পতন আবশ্যক পিতামহ, সে যে উপায়েই হোক। ভবিষ্যৎ; কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ এর থেকে আরও ঋণাত্মক হবে। তখন মানুষকে কৃষ্ণের থেকে আরও কঠোর হতে হবে। নাহলে ধর্মের অস্তিত্ব থাকবে না। যখন ক্রুর ও অনৈতিক শক্তিগুলি ধর্মকে সমূলে নাশ করার জন্য উদ্যত হয়, তখন নৈতিকতা অর্থহীন হয়ে যায় পিতামহ। প্রতিটি যুগ তার নিজস্ব তর্ক ও আবশ্যকতার আধারে নিজের নায়ককে চয়ন করে। সেই নায়ক সমাজের প্রতিটি ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে প্রীয় নাও হতে পারেন’’।
উন্নত ভারতবর্ষ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে; যুগের উপযোগী নায়ককে চয়ন করে নেবে এই আশা রাখি। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত, রাশিয়া, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েল ও জাপানের মতো শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি নতুন যুগের সূচনা করবে এই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এই নতুন যুগের কর্মযজ্ঞে ভারতের যশশ্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই কিন্তু যুগপযোগী নায়ক হয়ে উঠবেন, তারই সূচনা বিশ্ববাসী উপলব্ধী করতে পারছে। ।