নিজস্ব প্রতিনিধি – মহামারী করোনাভাইরাস পৃথিবীকে বহুভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির সেই সঠিক চিত্র হয়তো আমরা কখনোই পাবো না। লাখ লাখ মানুষ করোনায় মারা গেছে। কিন্তু করোনায় সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ার কারণেও অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০২০ সালে ভারতে আত্মহত্যা করেছে সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থী।প্রতিদিন দেশটিতে গড়ে আত্মহত্যা করেছে ৩৪ জনের বেশি শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। অথচ করোনার কারণে গত বছর শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ তেমন ছিল না। ২০২০ সালে ভারতে আত্মহত্যা করেছে মোট ১২ হাজার ৫২৬ শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ২১ ভাগ বেশি। চাপ, হতাশা থেকে মানুষ আত্মহত্যা করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত দেয়।
মনোবিদরা বলছেন, করোনাভাইরাস, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক পরিবেশের অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের কারণে হয়তো ভারতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।
এনসিআরবি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১১,৩৯৬ জন শিশু আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯,৬১৩ জন। ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ সালে এই মৃত্যুর হার ১৮ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯,৪১৩ জন। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে আত্মহত্যায় শিশু মৃত্যু। তারপরেই মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে ‘ প্রেমের সম্পর্ক ’ ( ১ , ৩৩৭ ) এবং অসুস্থতা ( ১ , ৩২৭ ) । শিশুদের আত্মহত্যার পেছনে অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে আদর্শগত কারণ বা বীর – উপাসনা , বেকারত্ব , দেউলিয়াপনা , পুরুষত্বহীনতা বা বন্ধ্যত্ব এবং মাদক সেবন ।
এই বিষয়ে ভারতের সেভ দা চিলড্রেন সংগঠনের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক উপপরিচালক প্রভাত কুমার বলেন , ‘ যদিও আমরা একটি সমাজ হিসাবে জাতীয় মানবিক পুঁজি তৈরির জন্য শিক্ষা এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো বাস্তব বিষয়গুলি সম্পর্কে সচেতন , মানসিক সুস্থতা বা মানসিক – সামাজিক সমর্থন প্রায়শই পেছনের আসনে থেকে যায়। শিশুদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার সংখ্যা একটি পদ্ধতিগত ব্যর্থতা প্রতিফলিত করে। ’
ভারতের ক্রাই – চাইল্ড রাইটসের নীতি গবেষণা এবং অ্যাডভোকেসির পরিচালক প্রীতি মাহারা এই বিষয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন , গৃহবন্দী থাকার কারণে শিশুরা প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং মানসিক আঘাতের মুখোমুখি হয়েছে। তা ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে এবং সীমিত সামাজিক যোগাযোগের কারণে বন্ধু , শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। এই কারণেও শিশু আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে থাকতে পারে।