শান্তি রায়চৌধুরী: পুজো এসে গেল। বাংলা ও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব । যে উৎসব আবার শুধু বাঙালীর নয় সর্বধর্ম মানুষের। এই পূজাকে ঘিরে কত না ঘনঘটা। সারা বছরের এখান থেকে অথবা ছমাসের রুটি-রুজির  ব্যবস্থা হয় ।প্রতিমা শিল্পী থেকে ঢাকি বস্ত্র ব্যবসায়ী পাদুকাশিল্প প্রসাধনী ডেকোরেটার্স প্রত্যেকেরই আশার আলো দেখার অপেক্ষায় দিন গোনে। দুর্গাপুজো মানে একটা ইন্ডাস্ট্রি । লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্নের নীড়। শরতের উড়ো মেঘ। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি । যা দুর্গাপুজোর কথা মনে পড়ায়। এর সঙ্গে সফেদ কাপন। কাশফুলের কাপন এরই মধ্যে প্রশ্ন ওঠে , দুর্গাপুজো আসা মানেই কি সবার ভালো থাকা বা সুখে থাকা প্রমাণ হয় । সবাই কি ভালো থাকে ? সব শিশু অঙ্গে কি নতুন জামা ওঠে যে জামা পড়ে সে পূজোর প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরে। থাকে নাকি মলিনতা ? যে প্রতিমা বারোয়ারি পুজো প্যান্ডেলে বা গৃহস্থের চণ্ডীমণ্ডপে আবাহন হয়, সেই মূর্তি গড়ার কারিগররা কি খুব সুখে থাকেন । অনেক অনেক প্রশ্ন? উত্তর কিন্তু মোটেই সোজা সরল নয়। এইসব প্রশ্ন ভাবায় ? সত্যি কি ভাবায়? কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী, কিংবা কালীঘাটের পটো পাড়ার, দ্বিতীয় হুগলি সেতুর নিচে অথবা রিষরা হুগলী কিংবা আরো আরো সব জায়গার শিল্পীরা । তারা সব কেমন কাটান পুজো।  তাদের হাতেই তো দুর্গার আবির্ভাব । ঠিক মতন ব্যবহার কি তারা পান ?  অনেক দুঃস্বপ্ন জড়িয়ে আছে কুমারটুলির প্রতিটা ইটে্র মধ্যে। শুধুই বা কুমোরটুলি কেন, সর্বত্র কেউ ভালো আছে ভাবতেও ভালো লাগে। কিন্তু ভালো থাকলেও আছে দীর্ঘশ্বাস।  ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই শিল্পে না আনার অদম্য এক জেদ। তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে এই শিল্পটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে? অনেকে কেন এই কাজে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আনতে চাইছেন না?  কারণ ক্রেতার থেকে পাওনা অসম্মান আর অবজ্ঞা, মা দুর্গার মূর্তি যাচ্ছে বিদেশে ।

ভালো অর্থ আসছে। তাই ভাল দিকও আছে। ফাইবারের প্রতিমা বিদেশে রপ্তানির তো সকলের কপালে নেই। বিদেশের বরাত যারা পাচ্ছেন তাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। কিন্তু বাকিরা? অথবা নামী শিল্পীদের কাছে যারা কর্মী? তাদের কথাই বা কে ভাবে? সরকারি সাহায্য দুর অস্ত।

তবুও তাদের দুঃখের শেষ নেই। এই বোঝা বইবে কে? কথায় বলে, ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়। অথচ ওই সাধারণ মৃৎশিল্পীরা নিজেরাই যে ভগবানের বোঝা বইতে বইতে ক্লান্ত। ভগবান মুখ তুলে ওদের দিকে চায়না। সুতরাং এরপর কে আর দুঃখের বোঝা বইতে এই শিল্পে আসবে। আর এটাই মৃৎশিল্প এবং মৃৎশিল্পীদের  আগামী দিনের সবচেয়ে বড় সংকট।

Loading