জ্বালায় উপশম

বিশ্ববাংলা সেরা সম্মান ২০১৮, মাদার টেরেজা স্মারক সম্মান ২০১৮,

 বঙ্গরত্ন গৌরব সম্মান ২০১৮ দ্বারা অলংকৃত

আচার্য্য শিবু শাস্ত্রী

আচার্য্য, শাস্ত্রী, প্রাক শাস্ত্রী, রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থানম

(ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত)

জ্যোতিষ ভারতী, জ্যোতিষ শাস্ত্রী, জ্যোতিষ আচার্য, তান্ত্রিকাচার্য্য,

জ্যোতিষ এশিয়াশ্রী উপাধি প্রাপ্ত (স্বর্ণপদক প্রাপ্ত)

যোগাযোগ – ৯৮৩০২৯২১৭৪

Email : acharyashibusastri@gmail.com

সাপ্তাহিক রাশিফল ২৩ মে – ২৯ মে ২০২১

নীল শিবানন্দ কয়, আজ চারিদিকে দেখি শুধুই ক্ষয়

উন্নত বিজ্ঞান, শিক্ষিত মানুষজন তবে কেন এমন হয়?

নীলা বলে মানবের নিজের দোষে নিজের পরাজয়

হিংসা, লোভ ত্যাগে সেবা আর সাধনায় হবে শান্তিময়

বেশ কয়েকদিন ধরে বহু পাঠক পাঠিকাদের থেকে বেশ কিছু ফোন এলো। এরকম মাঝে মাঝেই আসে। তাদের সমস্যাগুলি নিয়ে লেখার জন্য। তারা আগাম কিছু কথা জানতে চায়। আমি যথাসম্ভব তার উত্তর দেওয়া বা সতর্ক থাকার কথা সাপ্তাহিক রাশিফলে লিখি।

তবে বর্তমানে একটি প্রশ্ন অনেকেই করেছেন এবং এর সাধারণ প্রতিকার চেয়েছেন, যা শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। তা হলো মহামারী পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সকলেই আছি। প্রত্যেকেই আতঙ্কে ঘর বন্দী। আবার কেউ কেউ ভাবতে শুরু করেছে এই বুঝি ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে গেল। এই গ্রীষ্ণের তপ্ত মেদিনীতে নানা রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। করোনা আতঙ্ক ছাড়াও তার মধ্যে একটি হচ্ছে জ্বালা। একজন জ্যোতিষী ভালো বন্ধু হতে পারে। আমি দীর্ঘদিন ধরে সকলের বন্ধু হতে চেষ্টা করে এসেছি। অনেকের কাছে হয়ত বন্ধু হতে পেরেছি। তাই টেলিফোনে অনেকেই নানান প্রশ্ন রাখেন আমার কাছে। আমি নীল তারা মায়ের আর্শীবাদে যতটুকু জ্ঞান লাভ করতে পেরেছি তার থেকেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি। মানব জীবনে জ্বালা হচ্ছে বেঁচে থাকার এক বড় সমস্যা। জ্বালা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- (১) প্রেমের জ্বালা (২)আর্থিক কষ্টের জ্বালা (৩)কামের জ্বালা (৪) দাম্পত্য সম্পর্কের জ্বালা (৫) গরমে শারীরিক জ্বালা । এছাড়াও আরো দুটি বিষয়ে অনুরোধ রয়েছে (৬) পরকীয়া সম্পর্কের  জ্বালা (৭) প্রস্রাবের জ্বালা। আমি এই বিষয়ে জ্যোতিষ ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ আর বৈদ্যগণের থেকে জানা ভেসজের দ্বারাই যা প্রতিকার করা যায় তারই আলোচনা করা হল।

 (১) প্রেমে জ্বালা – জন্মের পর থেকেই দিনে দিনে বয়স বাড়বেই। নিির্দষ্ট বয়সে বা বেশী আমিষ ভক্ষণের ফলে পূের্বই যৌবন আসবে জাতক জাতিকার মধ্যে। যৌবনের হাতছানিতে জাতক-জাতিকা প্রেমে পড়ছে। জন্মছকে সপ্তমপতি, পঞ্চমপতি, এবং শুক্র ও চন্দ্রের অবস্থান অশুভ হলে তাদের মধ্যে আসবে অধিক চাওয়া পাওয়া বা প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা। শুরু হয় প্রেমের জ্বালা। জাতক-জাতিকার জন্মছক বিচার করে সঠিকভাবে তার প্রতিকার বা শুক্র ও চন্দ্রের প্রতিকার করিয়ে নেওয়া।

(২) আর্থিক কষ্টের জ্বালা – এটি একটি সমাজের দাবানলের মতো জ্বালা। যে সঠিক কর্মী, জ্ঞানী সে সমাজে দাম  পান না। তার কপালে উপযুক্ত কর্ম জোটে না। আবার অজ্ঞানী, অযোগ্য ব্যক্তি মামু, কাকা বা দাদা-ভাইয়ের আর্শীবাদে জুটিয়ে নিচ্ছে চাকুরি, আর ফাঁকি দিয়ে সমাজের ক্ষতি করছে। কারণ তার জ্ঞানের ভান্ডার শূন্য। সে শুধু চাটুকারিই করতে পারে। জ্যোতিষ বলে এক, পাঁচ, সাত, দশ, এবং এগারো দেখ, আর প্রতিকার করে এগিয়ে চলো।

(৩) কামের জ্বালা –  এই জ্বালা সমাজে এক কর্কট রোগের মতো। ১৬ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এই জ্বালা আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলে উঠছে। এর ফলে সমাজে ঘটে চলেছে, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন-এর মতো ঘটনা। এই জ্বালা প্রতিরোধ করতে পারলে নিজের ও সমাজের উপকার সাধন হয়। জ্যোতিষ মতে জন্মছক বিচার করে এর প্রতিকার করা সম্ভভ। আবার কবিরাজী মতে নিয়ম করে বিল্বচূর্ণ, ত্রিফলা চূর্ণ, আর নিরামীষ আহার সেবন, আধ্যাত্মিক চিন্তা ভাবনার দ্বারাই এই জ্বালা উপশম সম্ভব।

(৪) দাম্পত্য সম্পের্কর জ্বালা –  আজকাল পান থেকে চুন খসলে দাম্পত্য সম্পর্ক আদালতে করাঘাত করছে। ‘পিরিতে মজলে মন, সবকিছুই দেখে গুন’। কিছুদিন যৌবন জ্বালা মিটে গেলে তার সবগুন হয়ে যায় বেগুন। জ্যোতিষ বলে যোটক বিচার করে বিবাহ করুন। সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বন্ধনে আবদ্ধ হন। অশুভ ভাবের প্রতিকার করিয়ে নিন। মাঝে মাঝে গৃহে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করুন। স্বামী-স্ত্রী এক সাথে গুরু দীক্ষা নিয়ে সংসার জীবনে থেকে আধ্যাত্মিকতা পালন করুন।

(৫) গরমে শারীরিক জ্বালা –  আমাদের বাংলায় ৩-৪ মাস বেশ গরম থাকে। রোদের তেজ প্রখর থাকে। এই সময় ত্বকে বেশ জ্বলন হয়। ঘামাচি হয়ে থাকে। আয়ুের্বদ শাস্ত্রের শিবকালী ভট্টাচার্য মহাশয়ের পুস্তক  চীরঞ্জীবি বনৌষধী হতে পাই মটর ডাল বেটে গায়ে মাখলে সেরে যায়। তেজপাতা চন্দনের মত করে বেটে গায়ে মেখে ঘন্টাখানেক থাকার পর স্নান করে নিলে উপশম হয়। তবে বেশী কষ্ট হলে সুচিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

(৬) পরকীয়া সম্পের্কর জ্বালা –  আমি নানান গ্রন্থ পড়ে দেখেছি পরকীয়া প্রেম বলতে জ্ঞানী জনেরা বলতে চেয়েছেন আধ্যাত্মিক জগতের ঐশ্বরিক প্রেম, যার জন্য সর্বদা হৃদয় কাতর হবে। থাকবে না চাওয়া-পাওয়া। অপরকে ঈশ্বর ভেবে ভালোবেসে যাবে। যেমন রাধা-কৃষ্ণের প্রেম, কৃষ্ণের সাথে চৈতন্য, মীরা, সুদামার প্রেম, চৈতন্যর সাথে হরিদাস, নিত্যানন্দের প্রেম, মা তারার সঙ্গে বামাক্ষ্যাপা, প্রতিটি সাধকের সাথে ইষ্টের প্রেম। তাতে শান্তি আছে, সুখ আছে। নানা কষ্টের মধ্যেও সুখের অনুভূতি আছে। তবে ঘোর কলিতে এই সম্পর্ক বিকৃত হয়েছে। অপরের বৌ বা স্বামীকে নিয়ে

টানাটানি করছে। কেউ আর একজনকে নিয়ে সুখী হতে পারছে না। অনেকে এর থেকে শান্তি পেতে প্রতিকারের জন্য আমার কাছে আসে। এছানাও টেলিভিসনে প্রায় সিরিয়ালে দেখা যায় বেশিরভাগ নায়ক নায়িকা দুই নৌকায় পা দিয়ে টানাটানি করছে। আর টানাটানির এতই মজা যেন রসগোল্লার রস চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে। আর দর্শকগণ চেটেপুটে নিচ্ছে। আবার সেই জ্বালার প্রভাব সংসারে পড়ছে। আমার মনে হয় সবই ঘুরে ফিরে বাসনার জ্বালা। এর থেকে উপায় হচ্ছে মনকে শান্ত রাখুন। দাম্পত্যকে সম্মান করুন। একে অপরের ভালো থাকার উপায় খুঁজুন। স্বামী-স্ত্রী মিলে সঠিক গুরু নির্বাচন করে তন্ত্রমতে দীক্ষা নিয়ে কর্তব্য পালন করুন।তখন দেখবেন তৃতীয় জনের প্রতি নজর যাবে না।

(৭) প্রস্রাবে জ্বালা –  আজ বর্তমান সমাজ বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। তাতে নিরামিশ থেকে আমিষে রসনায় তৃপ্তিবোধ বেশি। তাতে শরীরে দেখা দেয় নানা উপসর্গ। তাতে বেশির ভাগ প্রভাব পড়ে ত্বকে আর নিম্নাঙ্গে। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে এর প্রভাব বেশী পড়ে। এছাড়া জাতকের জন্মছকে শুক্র, চন্দ্র, রাহু, কেতু অশুভ থাকে তবে তার ভোগান্তি অনেক বেশি। এই বিষয়ে সঠিক জ্যোতিষিকে দিয়ে জন্মছক বিচার করিয়ে পূের্ব গ্রহের প্রতিকার করান। এছাড়া আর্য়ুবেদে কিছু প্রতিকার আছে। এর প্রতিকার খুঁজতে গিয়ে আর্য়ুবেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য মহাশয়-এর অমূল্য পুস্তক হতে জানতে পারি বেশ কয়েকটি ভেষজের নাম। সেই বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করছি।

প্রস্রাবের জ্বালা কমাতে ব্যবহার করুন তুলসী, জল জামানী, সমদূতিকা, কুলত্থ।

তুলসী তুলসী বীজ জলে ভেজালে পিচ্ছিল হয়। সেই জল ছেঁকে নিয়ে তার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খেলে প্রস্রাবজনিত পীড়া বা প্রস্রাবের জ্বালা-যন্ত্রণা উপশম হয়।

ধাত্রী (আমলকী) –  আজকাল মাতৃজাতির প্রায় এই ব্যধী দেখা যায়। কৈশরারম্ভে ব্যাপকভাবে দেখা যায়। ছোট দুটি কাঁচা আমলকীর রস একটু মধুর সঙ্গে খেলে বেশ উপকার হয়।

জল জমানী এই ভেষজের পাতা (নানা মেহ বা শুক্র মেহ) শরবত করে ব্যবহার করলে উপকার হয়। তবে পরিমাপ অভিজ্ঞ কবিরাজের কাছে জেনে নিতে হবে।

জমদূতিকা (তেঁতুল) –  পিত্ত বিকারজনিত কারণে প্রস্রাবের জ্বালা হয়। তখন এক চা চামচ আন্দাজ এই পাতার রসের শরবত খেলে উপশম হয়ে থাকে।

কুলত্থ১০ গ্রাম কুলত্থ অল্প থেতো করে ৪ কাপ জলে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে জলটা ঢেলে নিয়ে হাফ সকালে হাফ বিকালে খেলে প্রস্রাবে জ্বালা, মায়েদের শ্বেতপ্রদর-এ উপকার হয়।

অশ্মরী রোগের প্রতিকার সিদ্ধ যোগতন্ত্রে লিখিত আছে, ছোট এলাচ, জষ্ঠিমধু, গোক্ষুর, রেনুক, বাসক ছাল, পিপুল ও পাথর কুচি পাতা নিির্দষ্ট ওজনে নিয়ে জলের সাথে কাত্থ করে মুত্র রোগের কৃচ্ছতা এবং শর্করা ও অশ্মরী রোগ সারে।

মুত্র পাথুরী রোগের প্রতিকার যোগিনী তন্ত্রে লিখিত আছে গোক্ষুর, সেঁদাল আঠা, উলুমূল, দুরালডা, পাথরকুচি পাতা, এবং হরিতকি সিদ্ধ করে খেলে মূত্রপাথুরী রোগ সারে।

মূত্রকৃচ্ছ রোগের প্রতিকার সিদ্ধ যোগতন্ত্রে লিখিত আছে গুলঞ্চ, শূট, আমলকী, অশ্বগন্ধা, এবং গোক্ষুর প্রয়োজনমতো ওজন নিয়ে জলের সঙ্গে সিদ্ধ করে একটু মধু মিশিয়ে খেলে মূত্রকৃচ্ছ রোগের প্রতিকার হয়।

মূত্রাঘাত রোগের প্রতিকার শুশ্রুত সংহিতায় লিখিত আছে সন্ধক  লবণের মিহি চূর্ণ একটু ভালো কারণ সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার হয় বা দাড়িম্বের রস ছোট এলাচের গুঁড়ো ও শুটের সঙ্গে পরিমাণ মতো মিশিয়ে সৈন্ধব লবনের সঙ্গে একটু কারণ মিশিয়ে খেলে মূত্রাঘাতের কষ্ট দূর হয়।

নানান জ্বালা থেকে আমাদের সুরক্ষিত থাকতে হবে। দুঃখকে জয় করাই হচ্ছে তন্ত্রশাস্ত্রের মূল বিষয়। এই পৃথিবীতে যতদিন থাকব ভালো থাকবো। এটাই কম্য। ঝড় আসবে, আবার থেমেও যাবে। আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। বর্তমানে চারিদিকে কলঙ্ক ছড়িয়ে আছে। তার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। কিছু কলঙ্ক শরীরে প্রবেশ করবে। চিকিৎসার দ্বারাই তার থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আর কিছু নিয়মে চলতে হবে জ্যোতিষের প্রতিকার দ্বারা। এখানে কিছু ভেষজের বা ঔষধের কথা লিখলাম। এগুলি ব্যবহারের পূের্ব অভিজ্ঞ করিবাজ হতে জেনে নিয়ে তা ব্যবহার করবেন। কারণ এর প্রয়োজনের পরিমাপ সঠিক হওয়া চাই। ইহা সঠিক ব্যবহারে অমৃত আর বেঠিক ব্যবহারে বিষ ক্রীয় হতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতি অতি সঙ্কটময়। মৃত্যু মিছিল চলছে বিশ্বময়

। সকলকে সংযত হয়ে সাবধানে থাকতে হবে । নিমিত্ত গ্রহণে তাঁকে (ঈশ্বর)

কে শুদ্ধাচারে ডাকতে হবে।  ঝড় থেমে যাবে, কালো মেঘ সরে যাবে, মেদিনী আবার সোনালী আলোয় ভাসবে।

বি.দ্র- রোগ আরোগ্যের বিধানগুলি ব্যবহার করার পূের্ব পরিমাপ জানতে অভিজ্ঞ কবিরাজের পরামর্শ নিন। কারণ অপব্যবহারে বিষক্রিয়ার সমান।

Loading