নিজস্ব প্রতিনিধি – কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরুতে বসবাস হারেকালা হাজাব্বার। পেশায় একজন কমলালেবু বিক্রেতা। সড়কে, কখনও বাস স্টান্ডে ফল বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। অথচ এই সাধারণ মানুষটিই অর্জন করলেন ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পদক।
সোমবার ৮ নভেম্বর রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের কাছ থেকে এই সম্মাননা নিয়েছেন হারেকালা। তার পদ্মশ্রী জয়ের গল্প ভারতের নাগরিকদের মন জয় করেছে।
এই কমলালেবু বিক্রেতাকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করার মূল কারণ ম্যাঙ্গালুরুর হারেকালা-নিউপাদু গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলে বর্তমানে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত ১৭৫ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
জানা যায়, ১৯৭৭ সাল থেকে ম্যাঙ্গালুরুর বাস ডিপোতে কমলালেবু বিক্রি করেন হাজাব্বা। নিরক্ষর এই কমলালেবু বিক্রেতা কখনও স্কুলে যাননি। ১৯৭৮ সালে একজন বিদেশি পর্যটক ম্যাঙ্গালুরু বাস ডিপোতে হাজাব্বার কাছে কমলালেবুর দাম জানতে চেয়েছিলেন। ইংরেজি বুঝতে না পারায় সঠিকভাবে তার সঙ্গে দামাদামি করতে পারেননি হাজাব্বা। এরপর অনুশোচনা থেকে নিজ গ্রামে শিক্ষায় বিপ্লব ঘটানোর আকাঙ্ক্ষা জেঁকে বসে হাজাব্বার মনে।
পদ্মশ্রী জয়ী এই কমলালেবু বিক্রেতা জানান, ওই বিদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় আমার খারাপ লেগেছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবো। আমি শুধুমাত্র কান্নাদা ভাষাই জানতাম, ইংরেজি কিংবা হিন্দি কিছুই জানতাম না। বিদেশিকে সাহায্য করতে না পারায় বিষণ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমার গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছিলাম।
ওই ঘটনার প্রায় ২০ বছর পর তার এই স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। জনহিতকর কাজ করায় ‘অক্ষর সান্তা’ খেতাব পেয়েছিলেন তিনি। ২০০০ সালে এই স্কুলের অনুমোদন দিয়েছিলেন তৎকালীন বিধায়ক ফরিদ।
হাজাব্বার প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল মাত্র ২৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে সেখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৭৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে।
গত বছরের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকার পদ্ম জয়ীদের নাম ঘোষণা করে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান স্থগিত হয়। সোমবার দিল্লিতে প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ পদ্মশ্রী জয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন।