কভিড অতিমারির পর ফুসফুসের নানা রকম সংক্রমণ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। তবে সচেতনতা কখনো কখনো ৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমনঅতি সম্প্রতি পাশের দেশের মতো আমাদের দেশেও ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণকারী একটি ভাইরাসের প্রকোপ। নামঅ্যাডেনোভাইরাস

শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশ; যেমননাক, গলবিল, শ্বাসনালিকে সংক্রমণকারী এই ভাইরাস একটি পরিচিত ভাইরাস। প্রতিবছর শীতের শেষে বা শুরুতে যেসব ভাইরাস আমাদের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটনায় তার মধ্যে অন্যতম প্রধান ভাইরাস এটি।

এর সংক্রমণের প্রদাহের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে হলেও এর জন্য রোগীর যে সাময়িক ভোগান্তি, সেটি কখনো কখনো সমস্যার উদ্রেক করে। তবে নির্দোষ সর্দিকাশিঠাণ্ডা হিসেবে চিহ্নিত না করে এই ভাইরাসের ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষত শিশু, বয়োবৃদ্ধ, গর্ভবতী এবং বিবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে বড় ধরনের দুর্ভোগের শিকার হতে পারে। তাই এই ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়।

অ্যাডেনোভাইরাস কী

. অ্যাডেনোভাইরাস করোনাভাইরাসের মতোই একটি রেসপিরেটরি ভাইরাস, যা শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর উপসর্গগুলোও অনেকটা কভিডের মতোই এবং এটিও অত্যন্ত ছোঁয়াচে বা সংক্রামক।

. যেকোনো বয়সীরাই অ্যাডেনোভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। কিন্তু ঠিক কভিডের মতোই এখানেও শিশু, বয়স্ক এবং যাদের দীর্ঘমেয়াদি অন্য রোগ রয়েছে, তাদের আক্রান্ত হয়ে জটিল পর্যায়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

. অ্যাডেনোভাইরাস সাধারণত চোখ, শ্বাসযন্ত্র, মূত্রনালি স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার দুই দিন থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। এই ভাইরাসের সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণগুলো হলো জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, ব্রংকাইটিস, কনজাংটিভাইটিস ইত্যাদি। খুব কম ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া, ব্রেন স্পাইনাল কর্ডের জটিলতা হতে পারে।

কিভাবে ছড়ায়

এই সংক্রামক ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচিকাশি থেকেই ছড়ায়। রোগীর ছোঁয়া কোনো জিনিসের সংস্পর্শে এলেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হাঁচিকাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসও সরাসরি আক্রমণ করতে পারে ফুসফুসকে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

. বেশি তাপমাত্রার জ্বর হলে।

. শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে।

. চোখ লাল হয়ে কনজাংটিভাইটিস হলে।

. শরীরের অক্সিজেন লেভেল নিচে নেমে গেলে।

. ডায়রিয়া হলে।

. মাথা ব্যথা, বমি, জন্ডিস দেখা দিলে।

চিকিৎসা

এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণত লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। জটিল অবস্থায় অ্যান্টিভাইরালজাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

. বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। শিশুদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস করা।

. বাইরে থেকে এসে জামাকাপড় বদল করে এবং হাত ধুয়ে তবেই শিশুদের কাছে যেতে হবে।

. ভিড় থেকে শিশুদের দূরে রাখা। জনবহুল স্থানে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করা।

. হাঁচিকাশির শিষ্টাচার মেনে চলা।

আক্রান্ত হলে করণীয়

করোনার মতোই অ্যাডেনোভাইরাস সংক্রামক। তাই আক্রান্ত হলে বিশেষ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা জরুরি :

. অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা উপসর্গ দেখা দিলে শিশুদের স্কুলে পাঠাবেন না।

. বড়দের কারো যদি সংক্রমণ হয়, তাহলে তিনি শিশু, অতিবৃদ্ধ গর্ভবতী মহিলা থেকে দূরে থাকবেন।

. প্রতিদিন হালকা গরম লবণ  জলদিয়ে গার্গল করুন। ছোট বাচ্চাদের হালকা গরম  জলবা অন্য যেকোনো গরম পানীয় বারবার খেতে দিন।

. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক বা কফ সিরাপ দেবেন না।

বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় আমরা বহুদূর এগিয়ে গেলেও এখনো ক্ষুদ্র জীবাণু; যেমন—ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কাছে অসহায়। তাই প্রতিকারের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করাই সময়ের দাবি।

__________________________________________________________

Loading