এখন সময়টা যেন নানান ধরণের প্রযুক্তির। প্রযুক্তি জীবনের নানান কাজে নানান ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনলাইন একদিকে যেমন নানান সুযোগ তৈরি করছে। তেমনি নানান সংকটের মুখে ফেলছে নারীদের।
সামান্য মুঠোফোনের বার্তা থেকে শুরু করে ভিডিও চ্যাট, ডিপফেক ভিডিওর মত নানান বিষয়ে নারীরা বিপদে পড়ছেন। অনলাইনে বিপদ দেখলে নারীরা যা করবেন তা নিয়ে লিখছেন নন্দিতা সুরক্ষা নামের নারী অধিকার ও নারীর দক্ষতা উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তাহিয়াতুল জান্নাত।
১৯ বছরের তরুণী প্রীয়া (ছদ্মনাম)। বাবা একজন দিনমজুর।
প্রীয়া মুঠোফোনের যোগাযোগের জন্য আছে একটি অ্যাপ আছে। সেই অ্যাপের অ্যাকাউন্টে অচেনা নম্বর থেকে ক্রমাগত ভিডিও কল আসছে গেল কিছুদিন। কল রিসিভ করে না প্রীয়া। মোবাইলের ইনবক্সে প্রবেশ করে প্রীয়া ভয় পেয়ে যায়।
ভিডিও কল থেকে স্ক্রিনরেকর্ডের এক ভিডিওতে তার ছোট বোন মীরা দেখা যায়। বিবস্ত্র অবস্থায় মীরাকে দেখে চমকে যায় প্রীয়া। সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের ব্ল্যাকমেইলের মুখে পড়ে দুইবোন। সহিংসতার নানান মাত্রায় বিপন্ন হচ্ছে নারীর জীবন।
নারীদের বিপদ অনেক: নানাভাবে নারীরা অনলাইন দুনিয়াতে বিপদে পড়ছেন। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ অনলাইনে সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, বান্দরবান, কুড়িগ্রাম এবং লালমনিরহাট এই ছয়টি জেলায় ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৫৯ জন নারীর ওপর একটি সমীক্ষাটি পরিচালনা করে। সমীক্ষায় বলা হয়ে, ২০২২ সালে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে যেমন ফেসবুকে ৪৭.৬০ শতাংশ, মেসেঞ্জারে ৩৫.৩৭ শতাংশ, ইনস্টাগ্রামে ৬.১১ শতাংশ, ইমোতে ৩.০৬ শতাংশ, হোয়াটসঅ্যাপে ১.৭৫ শতাংশ এবং ইউটিউবে ১.৩১ শতাংশ নারী হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আর ভিডিও কল, মোবাইল ফোন এবং এসএমএসের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪.৮০ শতাংশ নারী। সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, ৮০.৩৫ শতাংশ নারী ঘৃণ্য এবং আপত্তিকর যৌনতাপূর্ণ মন্তব্য, ৫৩.২৮ শতাংশ ইনবক্সে যৌনতাপূর্ণ ছবি গ্রহণ এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব আর ১৯.১৭ শতাংশ নারী বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। সমীক্ষায় আরো বলা হয়, ৩.০৬ শতাংশ নারী বলেছেন, যৌন নিপীড়নের সময় তাঁদের ছবি তোলা বা ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। পরে সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। ২.৬২ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশের হুমকি দিয়ে তাঁদের ব্ল্যাকমেইল করা হয়। ১.৭৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের ছবি সম্পাদনা করে পর্নোগ্রাফি সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। অনলাইনের নানান বিপদ থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে হবে: এখন নিত্য নতুন প্রযুক্তি বা অনলাইন অ্যাপ আমাদের সামনে চলে আসে। সামাজিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে নানান আর্থিক অ্যাপ আমরা ব্যবহার করি। মোবাইল ফোন নির্ভর নানান প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। যেকোনো প্রযুক্তি বা অনলাইন সেবা ব্যবহারের আগে তা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। ব্যবহারকারী হিসেবে কোন অ্যাপ ব্যবহার করছেন, সেই অ্যাপ আসলেই বৈধ বা নিবন্ধিত কোন প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ কিনা তা জানতে হবে। জেনে ব্যবহার করা শিখতে হবে। অনেক অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইলের ছবি বা অন্যান্য তথ্যাদি চুরির খবর পাওয়া যায়, তাই সতর্ক থাকতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের হাতে মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি তুলে দেয়ার আগে তাদের সাইবার সিকিউরিটির নানান বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। এখনকার পাঠ্যবইতে এসব বিষয়ে অনেক তথ্যাদি আছে, সে সব পড়তে হবে। প্রয়োজনে স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে অভিভাবকেরা সাইবার সিকিউরিটির নানান বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
আইনগত সহায়তা নিতে হবে: কোন কারণে তথ্য চুরি বা ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা ঘটলে আইনের সহায়তা নিতে হবে। পুলিশের সহায়তা নিন। এখন নারীর তথ্যাদি রক্ষায় অনেক আইনকানুন আছে, এসব বিষয় জানতে হবে। কোন কারণে ভিডিও বা ছবিসংক্রান্ত নির্যাতনের মুখে পড়লে লুকিয়ে থাকবেন না। সরাসরি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
নিরাপদ রাখতে হবে নিজেকে: মোবাইলে কোন অ্যাপ ব্যবহার করছেন, কোন ধরণের অ্যাপ থেকে ডেটা চুরি হয় তা জানতে হবে। উন্মুক্ত স্থানে ওয়াইফাই বা উন্মুক্ত চার্জার পয়েন্ট ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। উন্মুক্তস্থানে মোবাইল ফোন চার্জে রেখে সরে যাওয়া যাবে না। মোবাইল বা ল্যাপটপে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে কলব্লকারসহ বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।
তথ্য প্রকাশে সতর্ক থাকুন: আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান ধরণের ছবি ও তথ্যাদি প্রকাশ করি। এসব ছবি ও তথ্যাদি প্রকাশে সতর্ক থাকুন। কিশোর-কিশোরী ও নারীদের এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। শুধু স্ট্যাটাস হিসেবে নয়, মেসেজের বার্তায় কোন ধরণের তথ্যাদি দিচ্ছেন তা খেয়াল রাখুন। যেকোনো সময় তথ্য চুরির সম্ভাবনা আছে, তাই সাবধানে থাকুন।
যা দেখছেন তা বিশ্বাস করবেন না: ইন্টারনেট দুনিয়াতে আমরা যা দেখি, তার সব সত্যি না কিন্তু। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ ডিপফেকসহ নানান প্রযুক্তির কারণে ফাঁদে পড়ার সুযোগ থাকে। যা দেখছেন তা সহজে বিশ্বাস করবেন না। অনলাইনে সহজে প্রতারণার সুযোগ থাকে। কেউ অর্থ চাইলে, ফোন করে পিন বা পাসওয়ার্ড চাইলে কখনই শেয়ার করবেন না।
__________________________________________________________
__________________________________________________________
__________________________________________________________