শিশুর বয়স ছয় মাস হওয়ার পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়ানো শুরু করতে হয়। কিন্তু কোন বয়সে শিশুকে কখন কতটুকু খাবার দিতে হবে, এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা অনেকের মধ্যেই কম। বেশির ভাগ মা মনে করেন, শিশুকে বেশি বেশি খাবার খাওয়ালে তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশ দ্রুত হবে। কিন্তু নিয়ম মেনে খাবার না খাওয়ালে অনেক সময়ই খাবার খাওয়ার উপকারিতা থেকে শিশুরা বঞ্চিত হতে পারে।

তা ছাড়া একেক বয়সী শিশুদের একেক পরিমাপের খাবার দেওয়া প্রয়োজন। তাই শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য নিয়ম মেনে পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের খাবার খাওয়াতে সাধারণত তেমন কোনো বেগ পোহাতে হয় না। কেননা এই বয়সী শিশুরা কথা বলতে শিখে যায়।

খাবারদাবারসহ যেকোনো বিষয়ে তাদের ভালো-মন্দ মতামত প্রকাশ করতে পারে। কোন খাবার সে খেতে পারছে, কোনটা খেতে পছন্দ নয়, পেট ভরল কি না কিংবা খিদে পাওয়ার বিষয়গুলো তারা নিজ থেকেই বলতে পারে। আবার কোনো কিছু বুঝিয়ে বললেও সেটি বুঝতে পারে। এ জন্য এই বয়সী শিশুদের খাবারে শুধু পুষ্টিগুণ আর পরিমাণের দিকে মনোযোগ রাখতে হবে অভিভাবকদের।

পাঁচ বছর বয়স থেকে শিশুরা স্কুলে যেতে শুরু করে। এই বয়স থেকে শিশুর বৃদ্ধি দ্রুত ঘটতে থাকে। খেলাধুলা ও বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরির কারণে তাদের বেশি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। ছয় থেকে ১২ বছর বয়সীদের খাবারে সবচেয়ে বেশি দরকার প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট। ভাত, রুটি, নুডলস, আলুজাতীয় খাবারে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।

এগুলোর যেকোনো একটি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকলেই কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণ হবে। তবে অনেক শিশুই এই বয়সে প্রোটিনের অভাবে ভোগে। প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে, লম্বা হবে। স্বাস্থ্য সুস্থ ও সুন্দর হবে। মাছ, মাংস, সয়াবিন, বিভিন্ন ডাল বা দানাজাতীয় খাবার ও শাক-সবজি থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগান পাওয়া যায়। তাই শিশুর প্রতিদিনের খাবারে এজাতীয় খাদ্য থেকে যেকোনো একটি রাখলেই হবে। শিশু বেশি চঞ্চল হলে সাধারণত তাদের খিদে বেশি পায়। এ জন্য বাড়তি ক্যালরি জোগাতে প্রতিদিন একটি করে ডিম সিদ্ধ করে খাওয়াতে হবে। শিশু যদি হজম করতে পারে, তবে প্রতিদিন দুটি ডিম খেতে দেওয়া যেতে পারে।

পাঁচ বছরের আগ পর্যন্ত শিশুদের শরীরে একটু বেশি ফ্যাটের প্রয়োজন হয়। তবে পাঁচ পেরিয়ে গেলে বেশি ফ্যাটের প্রয়োজন হয় না। সামান্য ফ্যাটের চাহিদা পূরণ হলেই যথেষ্ট। এ জন্য শিশুর খাবারে ঘি, মাখন, তেল ব্যবহার করতে হবে। শিশুর খাবার রান্নায় অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল ব্যবহার করতে পারেন। ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে বা সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধ খাওয়ালে শিশুর দ্রুত বিকাশ ঘটবে।

শিশুর খাবারে বেশি চিনি, বেশি তেল বা বেশি লবণ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুর জন্য মিষ্টিজাতীয় খাবারে চিনির বদলে আখের গুড় ব্যবহার করতে পারেন। গুড়ে যথেষ্ট আয়রন রয়েছে। শিশুদের ক্লান্তিবোধ, কোনো কিছু দ্রুত ভুলে যাওয়ার মতো সমস্যা সাধারণত আয়রনের অভাবেই হয়ে থাকে।

এই বয়সী শিশুদের প্রতিদিন একটি বা দুটি মৌসুমি ফল খেতে দিতে হবে। মৌসুমি ফলমূলে মৌসুমি রোগবালাইয়ের প্রতিকার পাওয়া যায়। পেয়ারা, আপেল, কমলা, কলা, পেঁপে বেশি খাওয়াতে পারেন। পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা বাইরের খাবারের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো নয়। এসব খাবার পরিহার করতে হবে।

সকাল, দুপুর ও রাত—এই তিন বেলা মূল খাবার খেতে দিতে হবে। এর বাইরে সকাল ও দুপুরের আগে একবার এবং দুপুর ও রাতের মধ্যে একবার নাশতা খেতে দিতে হবে। নুডলস, পিঠা, পায়েস, খিচুড়ি, সবজি, ঘরে তৈরি কেক, পিত্জা বানিয়ে নাশতা হিসেবে খাওয়াতে হবে।

Loading