মাইগ্রেন শব্দটি ফরাসি, এর উৎপত্তি ল্যাটিন হেমিক্রেনিয়া থেকে। হেমি=অর্ধেক, ক্রেনিয়া= মাথার খুলি (করোটি)। মেয়েদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। সাধারণত ২০-৩০ বছর বয়সে এই রোগের শুরু হয়। যে কোনো পেশার লোকেরই মাইগ্রেন হতে পারে। বাংলায় আধকপালি। বিশ্বে শতকরা প্রায় ১১ জন বয়স্ক মানুষ মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথায় ভোগেন। ২৫-৫৫ বছর বয়সে এর ব্যাপ্তি বেশি হয়।

মাইগ্রেন : মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাথার যে কোনো এক পাশ থেকে শুরু হয়ে তা বিস্তৃত আকার ধারণ করে। আমাদের শরীরে রক্তে সেরোটোনিন বা ফাইভ এইচটি-এর মাত্রা পরিবর্তিত হলে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে সেগুলো মাথাব্যথার প্রারম্ভে স্ফীত হয়ে ফুলে যায়। এছাড়া কারও কারও প্রচণ্ড মাথাব্যথার সঙ্গে বমি হওয়া এবং বমি ভাব রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে।

কেন এবং কাদের বেশি হয় : মাইগ্রেন কেন হয় তা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হতে পারে। এটি সাধারণত পুরুষের চেয়ে মহিলাদের বেশি হয়। পুরুষ ও মহিলাদের অনুপাত ১:৫। মহিলাদের মাসিকের সময় এ রোগটি বেশি দেখা দেয়। চকোলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদির কারণে এ রোগ হতে পারে। এ ছাড়া মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো এই রোগকে ত্বরান্বিত করে।

মাইগ্রেনের লক্ষণ : মাইগ্রেন বয়ঃসন্ধিকাল থেকে শুরু হয় এবং মাঝ বয়স পর্যন্ত কিছু দিন বা কয়েক মাস পর পর হতে পারে। মাথাব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথা, বমি বমিভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তিবোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে। মাথার যে কোনো অংশ থেকে ব্যথা শুরু হয়। পরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। মাইগ্রেনকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যেমন : কমন, ক্লাসিক্যাল, অপথালমোপ্লেজিক, ব্যাসিলার আর্টারি, হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন ইত্যাদি।

কমন মাইগ্রেন : মাথাব্যথার সঙ্গে বমি বা বমিভাব কিন্তু কোনো প্রকার দৃষ্টি বিভ্রম বা চোখের সামনে আলোর ঝলকানি থাকে না।

ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেন : প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে। এমতাবস্থায় রোগী চোখের সামনে আলোর ঝলকানি ও চোখে শর্ষে ফুল দেখে। রোগীর হাত, পা, মুখের চারপাশে ঝিনঝিনে অনুভূতিসহ শরীরের এক পাশে দুর্বলতা ও অবশভাব হতে পারে। তারপর শুরু হয় মাথাব্যথা, যা মাথার এক পাশ থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে পুরো স্থানেই বিস্তৃত হয়। প্রচণ্ড দপদপে ব্যথা, প্রচুর ঘাম বের হওয়াসহ বমি কিংবা বমি ভাব কাহিল করে ফেলে।

মাইগ্রেন থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু উপায় : প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে পরিমিত। অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা। কড়া রোদ বা তীব্র ঠাণ্ডা পরিহার করতে হবে। উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা। বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা। মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি), বিশ্রাম করা, ঠাণ্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।

খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে : ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক। বিভিন্ন ফল বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর মাইগ্রেন বা মাথাব্যথা উপশম করে। সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়। ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আদার টুকরো বা রস দিনে ২ বার জিঞ্জার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন ।

কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন : চা, কফি ও কোমলপানীয়, চকোলেট, আইসক্রিম, দই-ডেইরি প্রোডাক্ট। এছাড়া আপেল, কলা, চিনাবাদাম, পিঁয়াজ ইত্যাদি। তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নোট করে রাখতে পারেন কোন কোন খাবার ও কোন কোন পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ব্যথা বাড়ছে বা কমছে। এরকম এক সপ্তাহ নোট করলে নিজেই সমাধান পেয়ে যাবেন। তবে ব্যথা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ওষুধ : মাইগ্রেন চিকিৎসায় দুটো ধাপ রয়েছে- একটি এবোরটিব এবং অন্যটি প্রিভেনটিব। যাদের বার বার ব্যথা হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় তাদের জন্য প্রিভেনটিব। মনে রাখতে মাইগ্রেন এক ধরনের প্রাইমারি হেডেক, যা নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। নিউরোলজিস্টের অধীনে এবং চেকআপের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা উচিত।

 

__________________________________________________________

 

 

 

__________________________________________________________

_______

 

 

 

 

 

 

 

  

Loading