ঊনিশ পয়সা
সোনালী মুখার্জী
……………………..
তেরো জন ভাইবোন।অভাবের সংসার।নুন আনতে পান্তা ফুরোয়।এদের আবার রথের মেলা?শিশু মন তবু কী বোঝে? জিলিপি,পাঁপড় ভাজা,কত রকমের মিস্টি,আম কাঁঠালের দোকান।কত খেলনা।বিশেষ করে বাঁশি।রথের মেলা যেনো ডাকছে।আয় আয়। জগন্নাথ বড্ড পাজি।ওদের জন্য কিছুই নেই। এক ভাই বোন মাত্র দুই বছরের তফাতে তফাতে।বড়ো গুলো তবু বোঝে।ওদের পয়সা নেই।ওরা কী করে যাবে রথের মেলায়।মেলায় যাবে হেঁটে কিন্তু কত কিছু খাবার আছে কিছুই তো কিনতে পারবে না আর খেতেও পাবে না।মেয়েগুলো বায়না ধরে মা আমরা রথ টানবো।মা হেসে বলেন ধুর বোকা কোথাকার,মেয়েদের রথ টানতে নেই। ওরা মনে দুঃখ নিয়ে চলে যায়।ছেলেমেয়েরা বাবা মায়ের বাধ্যের।
ওরা বড়ো হ য়েছে।লেখাপড়া শিখেছে। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলে গেছে। ওদের সকলের বিয়ে হয়েছে।ছেলেমেয়েরা বড়ো হ য়ে গেছে।অভাব অভিযোগের গল্প আর ছেলেমেয়েদের কাছে ওরা করে না।কারণ এরা অভাব কী তাই জানে না।না চাইতে সব কিছু ই পেয়ে যায়।
রথের দিন ফোনে দিদির সাথে ভায়ের কথা হচ্ছে।বল্ দিদি আমি ঊনিশ পয়সা নিয়ে হেঁটে হেঁটে রথের মেলায় গিয়েছিলাম। ঘুরে ঘুরে সব দেখে কল থেকে জল খেলাম পেট ভরে।আবার হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি চলে এলাম।একটা পাঁপড় ভাজা দশ পয়সা দাম।একা খাবো?ভাই বোনেরা জানলে কত কাঁদবে। তাই ঊনিশ পয়সা ফেরৎ এনে বাবার হাতে দিয়ে দিয়েছি। আমাদের কাছে সকলে পাঁপড় ভাজা আর জিলিপি খাওয়াটা বিলাসিতা ছিল।
অথচ দিদি বল্ আজ চারিদিকে কত খাবার।খাবার লোক নেই।রথ টানার আবেগ নেই।মজা আছে,লোক দেখানো ব্যাপার আছে।কেহ ফিরেও তাকায় না ঘরে জিলিপি আর পাঁপড় ভাজা হচ্ছে কি না?যার যখন যেমন খুশি খাবার খাচ্ছে।
বল দিদি,সারাদিন ধান কেটে শীতের চাদর কিনেছি।এখন ছেলে মেয়েকে এসব কথা বললে ওরা হাসবে।বলবে বেকার গল্প।তাই অনর্থক সব কথা আমাদের ভাইবোনেদের মধ্যেই থাক।
দিদি বলে,বল ভাই তালের আঁটি খেয়েই দিন কেটেছে।কাঁঠাল খেয়ে দিন কেটেছে।এখন উৎসবে দু-চার কোয়া কাঁঠাল কেনা হয়।কাঁঠালের গন্ধ ছেলেমেয়েরা পছন্দ করে না।
তবে সেরা গল্প ছিল ঊনিশ পয়সার রথের মেলা।কলেজে পড়তুম যখন একদিন গোল টেবিল করে সকলের সাথে ছেলেবেলার গল্প হচ্ছিল।আমি বলেছি প্যাকাটি দিয়ে কড়া থেকে দুধ খাওয়ার গল্প।গরুর বাঁট থেকে মুখে করে দুধ খাওয়ার গল্প। ওরাও বলেছে ওদের ছেলেবেলার গল্প তবে ঊনিশ পয়সায় রথের মেলার গল্পটা ওদের খুব ভালো লেগেছে।দিদি সেদিন যেটা ওরা গল্প বলছিল আমি তখন আমার ছেলেবেলায় ফিরে হাঁটতে হাঁটতে সব খাবারের দিকে তাকাতে তাকাতে রথে বসে থাকা জগন্নাথ,বলরাম,সুভদ্রাকে দেখেছিলাম।প্রশ্ন করেছিলাম প্রভু মানুষ এত গরিব কেন হয়?
সেদিন নিরাশ হয়ে ফিরলেও আজ আমি জানি মানুষ কেন গরিব হয়।