তান্ত্রিক দেবতার রূপ জগন্নাথ

প্রফেসর ডক্টর কুশল সেন

অধ্যাপক (ফলিত সংখ্যাতত্ত্ব), Astrological Research Institute of Krishnamurti Paddhati (ARIKP)

সদস্য, মার্গদর্শক মন্ডল, ভারতীয় বৈদিক জ্যোতিষ সংস্থানম্‌, বারানসী

Vice Principal

Astrological Research Institute of Krishnamurthi paddhati
Agartala Tripura
Niti Aayog, Govt. of India.

 

সাধনমার্গের পথে বলা হয় যে, ‘নিমের রসেই হয় কামের দহন’। কামজিত জগন্নাথ দেব। নিমের মধুর রস পান করে, সাধককেও কামজিৎ ভগবান হতে হয়, দেহকে করতে হয় কামনাহীন কাঠ, তখন দেহ হয়ে ওঠে দারুব্রহ্ম। আবার অশ্বত্থ গাছ হচ্ছেন শক্তিরূপীনী দেবী সুভদ্রা, জগন্নাথ দেবের শক্তিও বটে।

    জগন্নাথ দেবের বিগ্রহের যখন নবকলেঘর হয় পুরনো মূর্তির নাভিদেশের ব্রহ্মমনি নতুন বিদ্রোহের নাভিতে প্রতিস্থাপন করে দেওয়া হয় যাকে শাস্ত্রীয় ভাষায়  ‘ন্যাসদারু’ বলা হয়। এই নাভির স্থানান্তর প্রক্রিয়া দ্বিধাহীন ভাবে একটি তান্ত্রিক প্রক্রিয়া। দেহের প্রবাহমান বায়ুকে মনিপুর চক্রে স্থির করে চিত্তবৃত্তিকে নাশ করে সাধককে হতে হয় জগন্নাথ। এমনকি নব কলকভারের প্রক্রিয়ার সময় নীলাচলের দারুঘরে মূর্তি বানানোর আগে যাগ-যজ্ঞের পাশাপাশি শোল মাছ বলি দেওয়ার প্রথা আছে। বৈদিক ক্রিয়ার সাথে সাথেই জগন্নাথ দেবের পুজোতে এমনভাবে তান্ত্রিক ক্রিয়া সংমিশ্রণ ঘটেছে।

   জগন্নাথ দেবের স্নান পূর্ণিমার কিছু আগে পরে সংঘটিত হয় সাধনার মহা তিথি অম্বুবাচী। বর্ষার প্রারম্ভে দ্যুলোক থেকে গড়িয়ে পড়ে জল অর্থাৎ প্রজননের বীজ। ঠিক তখনই সূর্য উত্তরায়ণ ে চরম বিন্দুতে গিয়ে ঢলতে শুরু করে দেয়, পাশাপাশি মানব শরীর যেন ঢলে না পরে তার জন্য সতর্ক থাকতে হয় এবং কুন্ডলিনীকে কামনাকে জয় করতে হয়। সৃষ্টির পালনকর্তাই জগন্নাথ দেব।

 নিম গাছকে সাধকেরা বলেছেন ব্রক্ষবৃক্ষ, এই বৃক্ষ এক থেকে বহু হয়েছে, তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে—

বৌদ্ধশাস্ত্রে রয়েছে একটি কথা জগজ্যোতি: , অর্থাৎ জগন্নাথই বুদ্ধ। বুদ্ধ, ধর্ম ,সংঘ এই ত্রিরত্ন আমাদের জগন্নাথ দেব বলরাম এবং সুভদ্রা। বলরাম বুদ্ধ সংঘের যোগশক্তি এবং সুভদ্রা হলেন বুদ্ধদেবী প্রজ্ঞাপারমিতা ।

     উড়িষ্যাতে মা লক্ষ্মীকে গজলক্ষী হিসাবে পূজা করা হয়। এই গজলক্ষী দেবী বিমলা, সাধক তান্ত্রিকেরা তাকে দেখেন জগন্নাথ দেবের শক্তি হিসেবে, জগন্নাথ দেবের মন্দির চত্বর এর ভেতরে অংশ দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বিমলা দেবীর মন্দির পাশের রোহিনী কুন্ডু। স্থানীয় তান্ত্রিকেরা পূর্বমুখী বিমল আর ছোট্ট মন্দিরটিকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, জগন্নাথ দেবের শক্তি দেবী বিমলা দেবীই গোটা মন্দিরের এলাকার রক্ষাকত্রী। জগন্নাথ দেবের পুজোর আগে পুজো পান বিমলা দেবী এবং রোহিনী কুন্ডের জল মাথায় ছুঁয়ে তান্ত্রিকেরা মায়ের পুজো করেন। বিমলা দেবীকে নিবেদন করা হয় জগন্নাথ দেবের প্রসাদ আলাদা করে মা বিমলার ভোগ রান্না করা হয় না মাকে নিবেদিত প্রসাদ হয়ে ওঠে মহাপ্রসাদ।

   মন্দিরের গর্ভ গৃহ রয়েছেন মা বিমলা, তার ডান হাতের একটিতে জপমালা, অপরটিতে বর মুদ্রার ভঙ্গি। উপরের বাঁ হাতটিতে অমৃত কুম্ভের পাত্র নিচের হাতে নাগপাশ দুলছে। দেবী বিমলার উপাসকরা বলে থাকেন ‘মায়ের ভৈরব হলেন স্বয়ং জগন্নাথ দেব’ l

Loading