চমক
কলমে – অদিতি মুখার্জী সেনগুপ্ত
কয়দিন ধরেই শুভ-এর মনে সন্দেহের ডানাটা একটু একটু করে বাসা বাঁধছিল। অন্বেষার এই আকস্মিক পরিবর্তন যেন বড় বেশী চোখে লাগছিল। আজকাল যেন সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশী সময় কাটাচ্ছে। ফোনে কার সাথে যেন অনেক রাত অবধি চ্যাট করে। শুভ-এর সাথে অবশ্য ব্যবহারের কোনো পরিবর্তন দেখতে পায়না। শুভ-ই তো ওকে একদম সময় দিত না। কখনই রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়নি বা সিনেমা দেখানো তো দূরস্থ।
অফিস থেকে ফিরে এসে শুভ দেখল, সোহিনির নতুন হেয়ার স্টাইল, দারুণ অ্যাট্রাকটিভ লাগছে ওকে। নাচের ক্লাসেও বোধহয় আবার যাওয়া চালু করেছে আজকাল। সেরকমটাই তো শুভ-এর মা চারুবালা দেবী বলেছিলেন ওকে। অবশ্য ওটা চারুবালা দেবীর ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে সোহিনি শুরু করেছিল। শুভ দেখল সোহিনি কার সাথে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। আচমকা শুভ ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরবে বলে যেই ঠিক করল, ও শুনতে পেল, সোহিনি বলছে, “ইয়েস, মাই ডিয়ার, আই অ্যাম ইন লাভ, অ্যান্ড নাথিং ক্যান স্টপ মি ফ্রম রিচিং মাই গোল।” শুভ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না। এসব কী বলছে সোহিনি!
সোহিনি ফোন রাখতেই, শুভ ওকে আচমকা টানতে টানতে নিয়ে গেল চারুবালা দেবীর কাছে, আর বলল, “মা, আমি তোমার কাছে বিচার চাই, ওকে এক্ষুনি জিজ্ঞেস করো, আমি থাকতে ও কার প্রেমে পড়েছে?” শুভ-এর কথা শুনে শাশুড়ি-বৌমা দুজনেই হো-হো করে হেসে উঠল। চারুবালা দেবী বললেন,”কী রে, সোহিনি কেমন চমক দিলাম, বাপ্পাই কে?” শুভ অবাক হয়ে বলল, “মানে, কী এইসবের?” সোহিনি বলল,”আমি মায়ের পরামর্শে, নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছি। নিজের অন্তরে লুকোনো প্রতিভাকে মেলে ধরতে শিখেছি। লেখালেখির জগতে একটু-আধটু নাম করেছি। মায়ের থেকে উৎসাহ পেয়ে লেখা জমা দিয়ে মঞ্চে স্মৃতি পুরস্কার পেতে চলেছি। আবার শিশির মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করার আমন্ত্রণ ও পেয়েছি। সেটাই ফোনে দিদিভাই মানে আমার আদরের ননদ, রুমিকে জানাচ্ছিলাম। তোমার তো ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটে, আমার জন্য সময়ই নেই, তাই নিজের বাঁচার রসদ এভাবেই বেছে নিলাম। তা শুভ বাবু, চমকটা কেমন ছিল?” শুভ-এর মুখেও এবার হাসির রেখা ফুটল। ও হেসে বলল,”আচ্ছা, তাহলে পূজোর সময় কাশ্মীর ঘুরতে যাবে? এটা না হয় আমার তরফ থেকে একটা চমকপ্রদ উপহার, কী বলো গিন্নি?” তাই শুনে সোহিনি গেয়ে উঠল, “এমনি করে যায় যদি দিন যাকনা…।”