কবিতা – তুমি এসে গেছো

কলমে – সোনালী মুখার্জী

……………………..

সেদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর কলেজে আর কোনো ক্লাস হলো না।তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেল অর্থাৎ  এর পর যে যে ক্লাশগুলো ছিল সেগুলো সেদিন আর হবে না।তাই বসে না থেকে বেড়িয়ে এলাম কলেজ থেকে।বাসে দেখা হলো পরমার সাথে।ভীষণ ভালো মেয়ে।খুব গল্প করতে ভালোবাসে তবে আবোল তাবোল গল্প নয়।আমাকে বললো,চলনা আমাদের বাড়ি।দুপুরটা কাটিয়ে বাড়ি যাবি।আমি বললাম  টিউশন আছে।বললো,ও একদিন না গেলে  কিছু হবে না।

আমি পরমাদের বাড়ি গেলাম। একজন পরমাসুন্দরী কে দেখলাম,বয়স এই চল্লিশের ভিতর।আমাকে বললো,তুমি এসে গেছো। আমি বললাম হ‍্যাঁ।উনি আমার দিকে না তাকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বারান্দার দিকে চলে গেলেন।কৌতূহল যথেষ্ট হলো,কিছু জানতেও  পারছি না কী ব‍্যাপার?

ওদিকে পরমা এদিকে আয়, ওদিকে চল,কী খাবি বল?মা শুয়ে আছে।আমরা গল্প করি চল্।মুড়ি মাখবো খাবি?তাহলে চটপট এগরোল করি তুই একটু বসে থাক।

আমি তো সেই এক চিন্তায় আছি তুমি এসে গেছো?তার সাথে ঘড়ির দিকে তাকানো।কী পরিপাটী করে শাড়ি পরে সাথে ম‍্যাচিং ব্লাউজ।গায়ের রঙ ফেটে পড়ছে।একটা বড়ো হাতখোঁপা ঘাড়ের নীচে।কী মিষ্টি গলার স্বর।

আমার চিন্তায় ছেদ টেনে পরমা এলো এগরোল নিয়ে।দুজনে এটা ওটা গল্প করতে করতে খেলাম। তারপর চা করে আনলো।চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম,মাসিমা শুয়ে,মেসোমশাই অফিসে তাহলে যিনি আমাকে বললেন,তুমি এসে গেছো,আমার তো আসার কথা ছিল না।তাছাড়া ওনাকে আর দেখতেও পাচ্ছি না।উনি কে?

চায়ের কাপ রেখে পরমা বলতে শুরু করলো,

উনি আমার মাসিমা।আমাদের এখানেই থাকেন। আর তোকে কথাটি বলেননি।উনি ঐ একটি বাক‍্য ছাড়া আর কোন কথা—ই বলেন না।সব সময়  পরিপাটি হ য়েই থাকেন। আজ থেকে বছর দশেক আগের ঘটনা।

মাসির বিয়ে হয়েছিল ধূমধাম করে এক ধনী পরিবারে।মাত্র দুবছরের সংসার।নেমে এলো ঝড়।মেসো মাসিকে ভীষণ ভালো বাসতো।অফিস যাবার সময়  মাসি তাঁদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে  মেসোকে টা–টা করতেন।আবার ফেরার সময়  হলেও একমুখ হাসি নিয়ে বারান্দায় থাকতেন।সেদিন মেসো আফিসে গেলেন।এক ঘন্টা পরে খবর এলো মেসোর সেরিব্রাল এ‍্যাটাক হ য়েছে।হসপিটালে যেন বাড়ির লোক চলে যায়। মাসিকে খবর টা না জানিয়েই বাড়ির লোক হসপিটালে যায়।এদিকে হসপিটালে যাবার পথেই মেসোমশাই মারা যান। এবার সব নিয়ম মেনে একেবারে ডেড বডি নিয়েই বাড়ির লোক ফেরে ঠিক মেসোমশাই ঐ সময়েই অফিস থেকে ফিরতেন।মাসিমা বারান্দায়  দাঁড়িয়ে  ঐ দৃশ‍্য দেখে একটা কথাই বলেছিলেন”তুমি এসে গেছ”—–

তারপর থেকে ঐ একটা সময়েই ঐ বাক‍্যটি বলেন।চোখের জল ওনার পড়ে না।পাথর হয়ে গেছেন।কোন কিছুতেই অস্বাভাবিক কিছুই  নেই।চুপচাপ কাজ করেন।নিজের জামাকাপড় পরিপাটি। কী বলবো,মাসির জন‍্য আমাদের সকলের সবসময়  মন খারাপ থাকে।ডাক্তার দেখেনি, এই সমস‍্যার জন‍্য? হ‍্যাঁ,

ডাক্তারদের একটাই কথা কোন ঘটনায় উনি যদি চিৎকার করে ওঠেন তবেই উনি কথা বলবেন।যে আঘাত উনি পেয়েছেন তাতে উনি স্তম্ভিত।তাই নীরব।

মনটা খুব খারাপ হ য়ে গেল।এমনি বৃষ্টি হলেই আমার অজানা একটা মনখারাপ হ য়।আজ আবার নূতন একটা ঘটনা আমার মন খারাপের কারণ হলো।

পরমাকে বললাম  চলি রে,পরমা বললো,আসবি একদিন অনেক গল্প হবে।

আমার চোখে সেই দৃশ‍্য আর কানে ঐ বাক‍্য বাজছে”তুমি এসে গেছ”

 

Loading