কবিতা – রথের কথা

কলমে – শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য্য

কবি পরিচিতি ঃ জন্মস্থান:  বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ। শিক্ষা: স্নাতক, পেশা : কবি, বাচিক শিল্পী, আবৃত্তিকার ও অঙ্কন শিক্ষিকা, কাব্যচর্চা, কবিতা, অনুগল্প ও নাট্য শিল্পী,ও নৃত্যনাট্য শিল্পী । ইস্কুল জীবনে নৃত্যনাট্যে  শিল্পী হিসেবেও নাম ছিল, থিয়েটারেও বেশ কয়েকবার অংশ গ্রহণ করে ছিলাম।  সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে  আমার  বেড়ে ওঠা।

“রথযাত্রা লোকারন্য মহা ধুমধাম ভক্তরা লুটায়ে সেথা করিছে প্রনাম, পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব হাসেন অন্তর্যামি” কবি গুরু 🙏

পূর্ণ অর্জনের জন্য ভক্তরা ছোটে মন্দিরে মন্দিরে।

এই রথযাত্রা বাঙালিদের  বড় ধর্মিয় অনুষ্ঠান , এই উপলক্ষে মেলা হয় । এই মেলাতে সেজে গুজে সবাই রথ দেখতে যায়।

পাপর ভাজা, জিলাপি,কাঁচের চুড়ি নানা ধরনের পুতুল,  নানা ধরনের তৈজসপত্র ইত্যদি পসরা নিয়ে রথের মেলায় বসে। ঐ রথের মেলায় পূণ্যার্থীরা রথের রশি ধরে টানের পরে ঐ মেলায় ইচ্ছা মত পছন্দের জিনিসপত্র ও নানা ধরনের খাবার, ভাজাভুজি পাপর ভাজা সহযোগে ছেলে মেয়েদের মন ভরায়, এখানে নানাধরনের মানুষ জমায়েত হয়। উদ্যেশ্য  প্রভু জগন্নাথ, দাদা বলরাম, বোন সুভদ্রা কে ভক্তিভরে দর্শন করে প্রনাম করে ধার্মিক মনের তিতিক্ষা পূর্ণ করে সাথে দু এক টাকার তালপাতার বাঁশি ও আধুনিক না না কিসমের  বাঁশি  কিশোর কিশোরীদের মনের আনন্দের যোগান দেয়। এই মেলা সবার কাছে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এক মহামিলনমেলা হয়ে দাঁড়ায় । পূণ্য লোভাতুর নরনারী এই রথযাত্রা উৎসবে  পূর্ণের সাথে প্রাণের আদান প্রদান করে আর হয়ে ওঠে এক হৃদয়মেলা।  এই মেলাতে বঙ্কিমবাবুর সৃষ্ট কিশোরী রাধারাণী জলে কাদায় মহাবানবের ভীড়ে পথ হারিয়েছিল । এই কিশোরীর হাত ধরেছিল সে কোন পুরুষ যে তাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল। সে পুরুষ কিশোরীর শুধু হাত ই ধরেনি ঘরে পৌঁছে দেয়ার সাথে সাথে তার মনেও পৌঁছে গিয়েছিল সে আর কেউ নয় রুক্মিণী কুমার রায়। ঐ মহামিলনের মাঝে এই দুই নারী পুরুষের ভবিষ্যতে মিলনের বীজও প্রকিত হয়েছিল।এতো গেল গল্পকথা। অধ্যাতিক ভাবনা যা উধৃত কাব্যাঙ্শে উপজিব্য বিষয়  তা সবার মনকে নাড়িয়ে দেয়। রথযাত্রায় আগত নরনারী প্রভু জগন্নাথ আর সব দেবদেবী রথের রশি আর যে পথ দিয়ে রথ চলবে সেই রথচলার পথে আভুমি প্রনাম জানায়,  শ্রদ্ধা জানায় ।এই ধার্মিক মনোভাবের বাতাবরণ রথ, মূর্তি, পথ,দড়ি সকলের বিভিন্ন ভাবনা বিভিন্ন আঙ্গিকে বিচ্ছুরিত হয়েছে । এরা সকলেই নিজেকে দেব বলে ভাবছে কিন্তু সবার অলক্ষ্যে থাকা অন্তর্যামী ভগবান এক চরম আনন্দ পাচ্ছেন কারণ তিনি জানেন  এই শ্রদ্ধা ও প্রনাম কারো তরে নয় এ যে সব ই অন্তর্যামী ভগবানের নিবেদিত। শ্রদ্ধা সাথে নিজেদের জীবনের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও হিত প্রার্থনা করে।

Loading