অনুগল্প – পথেই পরিচয়

কলমে – পিয়ালী রায় কুণ্ডু

বি/এ, ৫/6, তালতলা, জোড়ামন্দির, বাগুইআটি, স্বাগতম ভিলা, কলকাতা – ৫৯

 

রক্তের সম্পর্ক ছাড়া সুন্দর কিছু সম্পর্ক আজ ও গড়ে ওঠে এই পৃথিবীতে।

বেশ কিছুদিন আগের কথা,  নন্দন থেকে একটি অনুষ্ঠানের পর বাড়ি ফেরার জন্য

 কিছু সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম, যথারীতি বাস পেলাম,  দূরগামী ওই বাসে লেডিস, জেন্টস বলে আলাদা কোন বসার সিট ছিল না, তাই আমি সিনিয়র সিটিজেন সিটের পাশেই নিজের জায়গা করে নিলাম। তিন-চারটে স্টপেজ এগোনোর পর একজন বয়স্ক ভদ্রলোক উঠলেন। যেহেতু তিনি  সিনিয়র সিটিজেন এর মধ্যে পড়েন , তাই ওখানেই সিটের দাবি জানালেন। আসলে ওই সিটে বসেছিল অবাঙালি দুজন মধ্যবয়সী  মহিলা, তারা কিছুতেই তাদের প্রাপ্ত জায়গা ছেড়ে উঠতে চাইল না। এমনকি সিনিয়র সিটিজেন শব্দটার অর্থ ও তারা বুঝতে পারেনি।

তাই সকলের কথায় তারা অবাক হলো , একটু বিরক্ত বোধ করল।

 আমি পাশেই বসেছিলাম তাই আমার পাশেই একটু জায়গা করে দিলাম ওই বয়স্ক ভদ্রলোককে। অনেকক্ষণ ধরে  কথার বচসা চলছিল শুধুমাত্র বসার তাগিদে , অবাঙালি মহিলা দুজন কথার না অর্থ  বুঝতে পারলো আর না তাদের সিট ছেড়ে অন্যকে বসার জায়গা করে দিল। এই সকল কথার মাঝে আমিও বয়স্ক ভদ্রলোকটির সাথে দু একটি কথা বলতে শুরু করলাম। একটু উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন উনি, অন্যায় আচরন করার জন্য। আমি উনাকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। যখন ওই অবাঙালি মহিলারা কথা বুঝতেই চাইছিল না।

বেশ কিছু সময় এইভাবে যাওয়ার পর কন্ডাক্টরের হাতে টাকা দিলাম টিকিট করার উদ্দেশ্যে।  ভদ্রলোকটিও ওনার টিকিট কাটলেন গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য।  জানা গেল উনি আমার প্রতিবেশী পাড়ায় থাকেন । শুনে ভীষণ আনন্দ পেলাম সাথে উনিও ভীষণ আনন্দ পেলেন। তারপর একটার পর একটা আলাপ চলতে লাগলো। আস্তে আস্তে ঠিকানাও জানা হয়ে গেল। আমি সম্বোধন করে কাকু ডাকতে শুরু করলাম,  কাকু ও আমার সাথে কণ্যা  স্নেহস্বরূপ আলাপচারিতা জুড়ে দিলেন। উনি ছিলেন অফিস ফেরত যাত্রী। এই সকল কথাবার্তার মধ্যে জানা গেল কাকুও বিগত কোনো  এক সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। আমার লেখা একটি কবিতা শুনতে চাইলেন আমি কাকুর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠালাম। মুগ্ধ হলেন, এটাই আমার ছিল পরম পাওয়া।

যথারীতি সময়ে যে যার  গন্তব্যস্থলে এসে পৌঁছোলাম। এখন হোয়াটসঅ্যাপেই কাকুর সাথে কথা হয় নিয়মিত।

অমোঘ টান সৃষ্টি হয়েছে এই পরিচয়ের বিনিময়ে।

এখন আর তুমি না এখন আমি কাকুর আরো একটি মেয়ে, যার সম্বোধন শীঘ্রই তুই এ পরিণত হয়েছে। আর আমিও আপনির বদলে তুমি তে পা রেখেছি।

তাঁর মন্তব্যে, তাঁর ৭৬ বছরের জীবনে এইরকম কোনো দিন কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।

এইভাবে তাঁকে কেউ আপন করতে পারেননি। আমাকে নিয়ে কাকুর অনেক গর্ব,  অনেক আশীর্বাদের হাত রেখেছেন আমার মাথায়।

আমার কাছে এটি জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। বাপির মতোন এইরকমই আমাকে আগলে রেখো কাকু।

দুটো বছর পর ঈশ্বরের আশীর্বাদে আবার বাবার অবর্তমানে একজন প্রণম্য মানুষের নাগাল পেলাম।‌

ঈশ্বর গড়ে তুলুক এইরকম হাজারো সম্পর্ক যা পৃথিবীতে, সমাজে সুন্দর স্থান পায়। উভয়ের সম্মানে প্রাপ্ত মর্যাদা পায়।

Loading