ছোট গল্প ঃ নিসর্গ ও নন্দিনী
কলমে- প্রদীপ মিশ্র
হলদিয়া
নিসর্গের সঙ্গে নন্দিনীর প্রথম দেখা হয়েছিল এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়। বইয়ের দোকানের ভেতর দাঁড়িয়ে দু’জনেই বৃষ্টি কমার অপেক্ষা করছিল। নন্দিনীর হাতে ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’, আর নিসর্গ দেখছিল বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’।
অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টি চলছে, থামার লক্ষণ মাত্র নেই, ঘরে যদিও জানিয়ে রেখেছে মাকে আসতে লেট হবে, তবুও মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি চলছে, বাধ্য হয়েই নিসর্গের সঙ্গে কথা শুরু হলো, নন্দিনী একটু হাসল, “আপনিও বইপ্রেমী?”
নিসর্গ হেসে বলল, “বই ছাড়া জীবন কল্পনাই করতে পারি না। জীবনের যত দুঃখ কষ্ট সমস্ত কিছুই আমি সাহিত্য থেকে সংগ্রহ করে দিতে পারি। সাধারণ মানুষকে অনেক সময় বেইমান কিন্তু বই কখনো মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছে কেউ বলতে পারবে না। হয়তো কিছু ক্ষেত্রে মতের মিল নাও হতে পারে, তবে লেখকের সঙ্গে পাঠকের আলাদা একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।”
এরপর বৃষ্টি থেমে যায় কিন্তু দুজনের মধ্যে কথাবার্তা চলতেই থাকে। সময় আরো অনেক চলে যায় খেয়াল থাকে না দুজনের। তারপর দোকানের লোকজন যখন অনেক কমে গেল তখন দুজনের একই সঙ্গে চিন্তা এলো যে ঘরে ফিরতে হবে। আগামী দিন দেখা হবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুইজনের দুজনের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলল।
এইভাবেই শুরু। পরিচয়, বন্ধুত্ব। সব সময় দেখা হওয়া নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা তর্ক-বিতর্ক মান-অভিমানের পর্যায়ে সমস্ত কিছুই চলতে থাকে। তারপর অবচেতনে একে অপরের দিকে টান অনুভব করল তারা। একজন আরেকজনের থেকে দূরে থাকতে পারে না কোন রকমে। দুজন দুজনের প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করে। যে যার মনের কথা চোখের পাতাতেই বুঝতে পারতো বলতে হতো না। এই না বলা কথাগুলো দুদিনের মধ্যে দুজনেই শেয়ার করত তারপরে আরো সম্পর্ক খুব গভীর হয়ে গিয়েছিলো। এইভাবে সম্পর্কটা প্রেমে পরিণত হয়।
নন্দিনী ছিল মুক্তচিন্তার মেয়ে, স্বপ্ন দেখত পাহাড়ের কোলে একটা স্কুল গড়ে তুলবে। পাহাড়ের উন্মুক্ত পরিবেশে নিজেকে আরও বিকশিত করে তুলবে। সেখানকার সমস্ত গরিব মানুষের ছেলেমেয়েদের নিজে থেকে দায়িত্ব নিয়ে জীবনের নতুন পথ দেখাবে। দেশ মাকে ভালবাসতে শেখাবে, জীবনের স্বার্থপরতা ভুলে গিয়ে প্রকৃত মানববন্ধনে নিজেদের মধ্যে আবদ্ধ হবে।
আর নিসর্গ? সে ভালোবাসত প্রকৃতি, নির্জনতা, বইয়ের পাতা থেকে বাস্তবের জগতে হারিয়ে যেতে।
একদিন, গঙ্গার ধারে বসে নন্দিনী বলল, “তুমি কি কখনও শহর ছাড়তে পারবে?”
নিসর্গ চুপ করে রইল। শহর, চাকরি, ভবিষ্যৎ—সব মিলিয়ে সে দ্বিধাগ্রস্ত। কিন্তু নন্দিনীর চোখের গভীরতায় একটা অনির্বচনীয় আকর্ষণ ছিল।
তারপর হঠাৎ করেই নন্দিনী চলে গেল। নিসর্গ কিছুই বুঝতে পারল না। ফোন বন্ধ, ঠিকানায় কেউ নেই।
মাস দুয়েক পর, এক চিঠি এলো—
“আমি তোমাকে জানাতে পারিনি, কিন্তু স্বপ্ন সত্যি করার জন্য চলে যেতে হয়েছে। যদি পারো, একদিন চলে এসো পাহাড়ে।”
নিসর্গ আর অপেক্ষা করল না। সমস্ত কিছু ছেড়ে সে পাহাড়ের পথে রওনা দিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক সকালে, কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটা স্কুলের সামনে এসে দাঁড়াল।
স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল নন্দিনী। তাকে দেখে বিস্ময় মাখা হাসি ছড়িয়ে পড়ল নন্দিনীর মুখে।
নিসর্গ ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে বলল, “আমার উত্তর পেয়ে গেছো?”
নন্দিনী মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, “হ্যাঁ।”
পাহাড়ের বাতাস তখন আরও মিষ্টি হয়ে উঠল।।
……………………………………………………………………………………………
জন্ম ১লা জুলাই ১৯৬৮, পিতা (ঈশ্বর) অমূল্য কুমার মিশ্র ও মাতা (ঈশ্বর) গীতা রাণী মিশ্র এর কোল আলোকিত করেন কবি প্রদীপ মিশ্র। জন্মস্থান দক্ষিণ ২৪ পরগনা কৈলাসপুর গ্রাম যা বর্তমানে বাসস্থান পূর্ব মেদিনীপুর হলদিয়া তে। ছোটবেলা থেকে জীবনের দুর্গম আলো আঁধারি পথ অতিক্রম করে বর্তমানে আলোর পথের দিশায় সাহিত্যের পথে পথ চলা। ছোট থেকে লেখার প্রতি ঝোঁক থাকলেও তা ফলপ্রসু হয়নি। হঠাৎ একদিন কাগজ-কলম নিয়ে লেখা শুরু করলেন যা এতগুলো বছর ধরে খাতার পাতায় বন্দি ছিল। গত দু’বছর আগে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করতে সক্ষম হন। এইভাবে সাহিত্যের প্রতি কবির ভালোবাসা গভীর থেকে গভীরতর হয়। গুণীজনদের আশীর্বাদে কবির কলম চলছে অবিরত সাহিত্যের আঙিনায়। কবি ৩০ বছর ধরে জ্যোতিষ চর্চা করছেন। পাঁচটা ফুল মুভিজ সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রানী হালদার, অভিষেক দে, চুমকি চৌধুরী, দেবিকা মিত্র এই সকল অভিনেতা এবং অভিনেত্রীর সঙ্গে। সোশ্যাল ওয়ার্ক করেন। প্রদীপ মিশ্র ( বিশিষ্ট কবি প্রাবন্ধিক ) ‘ মাতৃভাষা জয়ী কৃতি বাঙালি সম্মান ‘
‘ মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্বর্ণ মুদ্রা সম্মান ‘ এবং ‘ রৌপ্য মুদ্রা সম্মান ‘ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও পত্রিকা থেকে উনার সৃষ্টি বেরিয়েছে। ‘ আন্তর্জাতিক সাহিত্য দিশারীর ‘ ‘জেনারেশন অ্যাচিভার ‘ এছাড়াও ছোট-বড় মোট আড়াই বছরে ৫০ খানা সম্মাননা পেয়েছি এবং একক কাব্যগ্রন্থ ও গল্প সংকলন ১৫ খানা বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম সৃষ্টি – অমৃত ভান্ড ( কবিতার বই ) দ্বিতীয় – সৌরিন ( কবিতার বই ) তৃতীয় -গীতামা ( কবিতার বই ) তৃতীয় – অমূল্যধন ( কবিতার বই ) চতুর্থ – অর্ঘ্যদীপ ( কবিতার বই ) পঞ্চম – শিব ঠাকুরের বিয়ে ( গল্পের বই ) ষষ্ঠ – দুরূহ জীবন ( গল্পের বই ) সপ্তম – অপেক্ষা মায়া সংসার ( কবিতার বই )।খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশিত হতে চলেছে। অষ্টম – ক্ষনিকের পরিচয় ( গল্পের বই ) নবম – কৃষ্ণ প্রেম ( গল্পের বই )
দশম – টাপুর টুপুর ( কবিতার বই )। একাদশ – স্বর্ণ সন্ধানে ( গল্পের বই )। প্রেসে কাজ চলছে – ভুতের গল্প, খুন খারাপির গল্প, জ্যোতিষ তান্ত্রিক কথা- আত্মজীবনী কলম চলছে অবিরাম।
148 total views, 2 views today