দাদুর সময়

কলমে – শ্যামল মুখার্জ্জী

 

গ্রামের নাম মধুপুর সেই গ্রামে তিনশত ঘর বসতি আছে সেই গ্রামে একটি পরিবারের গল্প বলছি দাদুর নাম ভুবনতার দুটি ছেলে, বড় ছেলের নাম সুবল ছোট ছেলের নাম বীরবল চাষী বাসী ঘর দাদু হলেন পেনশন ভোগী সুবল   বীরবল চাষ করেন সুবলের চারটি ছেলে দুটি মেয়ে বীরবলের তিনটি ছেলে একটি মেয়ে এই দশ জন নাতিনাতনিকে নিয়ে দাদুর আনন্দের সংসার দাদু খুবই হিসাবী সেইজন্য নাতিনাতনিদের সাথে তার ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে দাদু খাবারের কোটা বেঁধে দিয়েছেন সপ্তাহে একদিন মাছ, একদিন মুরগির মাংস এবং বাকি দিনগুলি নিরামিষ খাবার নাতিনাতনিদের দাবি সপ্তাহে তিন দিন মাংস করা হোক, না হলে আমরা ভাত খাব না দাদু তো এই কথা শুনে রেগে লাল দাদু বলেন, তোরা ভাত না খেলে, আমার কিছুটা টাকা বেঁচে যাবে আচ্ছা আমি নাতিনাতনিদের কথা রাখছি সপ্তাহে আমি তিন দিন মাংস খাওয়াবো ,তবে আমি তোদের শামুকের মাংস খাওয়াব শামুক তো মাংসের মতোএই ভাবে দাদু সপ্তাহে তিন দিন শামুক আনেন এবং মাসের শেষে হিসাব করে দেখেন টাকার সাশ্রয় হচ্ছে দাদুর কিপটেমির জন্য ঠাকুমা বৌমারা দাদুকে সহ্য করতে পারেন না প্রত্যেক বৎসর দুর্গাপূজা দীপাবলিতে নাতিনাতনিদের দুইশত করে টাকা চাই এতে দাদুর খুবই কষ্ট হয় তাই দাদু ২০২৩ সালের দূর্গা পূজার সময় একটি বুদ্ধি বার করলেন তিনি নাতি নাতনিদের ডেকে বললেন, তোরা আমার একটা কথা শোন তাই শুনে নাতি নাতনিরা বলে উঠল কি কথা দাদু? দাদু তখন বললেন আমি এই বছর ঠিক করেছি, সপ্তমীর দিনে যারা ভোর চারটার সময় উঠে আমার কাছে আসবে, তাদের আমি প্রত্যেককে দুইশত টাকা করে পূজা দেখতে দেব নাতি নাতনিরা তাই করল দশজনের  মধ্যে মাত্র ছয় জন ভোর চারটার সময় উঠল দাদু কথামতো ছয় জনকে বারোশত টাকা দিল বাকি চার জনকে কিছু দিল না দাদুর আটশত টাকা বেঁচে গেল দাদু তখন ঠাকুমাকে বলল, গিন্নি জানো তো, আমার বুদ্ধির জোরে আটশত টাকা বেঁচে গেল ঠাকুমা সবকিছু শুনে রেগে গেল এবং দাদুকে লাঠি নিয়ে তাড়া করল কিন্তু সে তো মাত্র কিছুক্ষণের জন্য তাই দাদু আবার দীপাবলির সময় নাতিনাতনিদের বলল, দীপাবলির দিন ভোর চারটার সময় যে উঠবে তাকে আমি দুইশত টাকা দেব আলোর বাতি করার জন্য কয়েকজন নাতিনাতনি অলস তারা উঠল না মাত্র চারজন গেল কথামতো দাদু চারজনকে আটশত টাকা দিলেন দাদুর দীপাবলিতেও বারোশত টাকা বেঁচে গেল দাদু তো আনন্দে অস্থির যে নাতি নাতনিরা টাকা পেল না, তাদেরকে ঠাকুমা টাকা দিলো ঠাকুমা দাদুকে শাস্তি স্বরূপ খাওয়া বন্ধ করে দিলেন দাদু দুইদিন খাবার পেল না দাদু তখন ঠাকুমাকে বলল, আমাকে খেতে দাও আমি আর কিপটেমি করবো না নাতিনাতনিদের কথা মতো কাজ করব ঠাকুমা তখন বললেন ঠিক কথা বলছো তো?

দাদু বললেন, আমি ঠিকই বলছি আমাকে তোমরা সবাই শিক্ষা দিলে   ঠাকুমা দাদু কে খেতে দিল, দাদু কিপটেমি ছেড়ে দিল এবং সংসারে যা প্রয়োজন তাই এনে দিল এবং সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো, নাতি নাতনিদের সাথে দাদুর সংসার একটা সুখের সংসার গড়ে উঠলো

 

 গল্পটির নীতি শিক্ষাকিপটেমি অনেক সময় অশান্তি ডেকে আনে যা সংসারের পক্ষে ক্ষতিকর সুতরাং সংসারে যা প্রয়োজন তা আনা দরকার এতে সংসার সুখে শান্তিতে ভরে ওঠে

 নমস্কার

 121 total views,  4 views today