পুরুষ মাহাত্ম
কলমে ✍️: – মহামায়া রুদ্র
সমীরণ বাবু একটি বিশেষ বিত্তশালী পরিবারে অত্যন্ত সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে অতি যত্নে মানুষ হয়ে ছিলেন । অতি যত্নের আতিশয্যে মানুষ কখনও কখনও বিহ্বল ও অস্থির হয়ে ওঠে। একই নির্দিষ্ট নিয়মের গতানুগতিক ধারাবাহিকতার মধ্যে জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে।বাইরের পরিবেশ ডাক দেয় মুক্তির স্বাদ আহরণের উদ্দেশ্যে। তেমনি সমীরণ বাবুর ও পরিবারের অতি আদর যত্নে একসময় অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। একঘেয়ে জীবনের বৈচিত্রাহীনতা নিজেকে অপরাধীর মতো লাগছিল ।
তাই অনেক কষ্ট করে একদিন নাগপাশের বন্ধন ছিন্ন করে পা বাড়ালেন বাস্তবের মাটিতে।
একটা চাকরি জোগাড় করে পরিবার থেকে দূরে থাকার ব্যবস্থা করে নিলেন। কর্মসূত্রে অজপাড়া গাঁয়ে, চাষের ক্ষেতে জল সরবরাহের (সেচের) চাকরি। মাইনে ১০ হাজার টাকা,ভীষণ কষ্টের জীবন,চারিদিকে খাল, বিল, আর ধুধু ফাঁকা মাঠ।
কিছুদিন পর বাস্তবের কঠিন জীবন আস্তে আস্তে বুঝে নেয় বেঁচে থাকার মাটি টা অনেক শক্ত।স্বপ্নের রঙ ফিকে হতে হতে অসহ্য হতে শুরু করে। আর যেন পারা যায় না , একটু শীতল ছোঁয়ার মৃদু ইচ্ছে ক্রমশ গাঢ় হয়।যা বেতন পান তা দিয়ে নিজের পেট চালানো ভীষণ কঠিন, তবুও বাড়িতে ফিরবেন না বলে মনে সঙ্গে চলছে যুদ্ধ।
এই সময় একদিন সকাল 11 টা নাগাদ অফিস থেকে মাঠের দিকে রওনা দেওয়ার সময় হঠাৎ হোয়াটস অ্যাপে টুং করে একটা মেসেজ এলো।
একটা অজানা নম্বর থেকে একটা সুন্দরী মেয়ের ফটো এল। লাল একটা শাড়ি পরা, কানে ঝুমকো পাশা , স্বর্গের অপ্সরা মনে হচ্ছে। সমীরণ বাবু হাঁটা থামিয়ে, ছবিটা জুম করে দেখতে আরম্ভ করলেন। ইতিমধ্যে আরো একটা ছবি এলো। তসরের শাড়ি পরিহিতা অন্য একটা মেয়ে। কোথায় যেন একটা শীতল ছোঁয়ার স্পর্শ অনুভব করলেন। পরক্ষণে আবার একটি ফটো।ছোটো হাতা ব্লাউজ, গলায় সোনার নেকলেস পরে গাছের ফাঁকা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক সুন্দরী হাঁসছেন পাপড়ি মেলা ফুলের মতো, উজ্জ্বল দাঁতগুলো মুক্তর মত উজ্জল। সমীরণ বাবু এবার ওই ফটোটা জুম করে, দেখতে আরম্ভ করলেন। আহা , কি মিষ্টি হাসি , হারিয়ে যাচ্ছিলেন ফটো টার মধ্যে। হটাৎ ওই একই নাম্বার থেকে আর একটা ফটো এলো। জিন্স প্যান্ট আর সাথে একটা মিনি টপ। নানা ধরনের মোট পাঁচ খানা ছবি এলো উনার ফোনে।
অনেক দিন পরে হঠাৎ মনে নতুন রঙের জোয়ার অনুভব করছেন। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে- পড়ছে বুকের মধ্যে।
বিলে পাট পচার গন্ধ তখন মনে হচ্ছে ভোরের শিউলির গন্ধ! চারপাশটা দেখে মনে হচ্ছে” কলাবাগান নয়, এ তো ইছামতি নদীর ধারে বসন্তের হিমেল হাওয়ায় শিমুল পলাশের মাখামাখি। নিজেকে তখন স্বপ্নের রাজপুত্র মনে হচ্ছে। ঘোড়া ছুটিয়ে ধীরে ধীরে মেয়েটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
ভাবতে ভাবতে-এগিয়ে যেতে যেতে রাস্তার ধারে একটি জল শূন্য গাড্ডায় ধপাশ করে পড়ে গেলেন। আবার মোবাইল ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো। ফোনটা ধরলে ওপার থেকে চেনা কন্ঠস্বর ভেসে এলো কি গো””কোন ড্রেস গুলো নেব? মনে তখন উদাস পূরবী হাওয়া। চেনা কণ্ঠস্বরের মানুষটাকে চিনতে পারলেন না।
ওর মধ্যে দাঁড়িয়ে ওই মেয়েগুলোর ছবি জুম করে দেখতে শুরু করলেন। আবার টুং করে মেসেজ ঢুকলো। এবার লেখা …কি হল কথা বলছো না যে-কোন গুলো নেব ,কোনটা পরলে আমায় ভালো লাগবে বলবে তো ? সঙ্গে সঙ্গে সমীরণ বাবু উত্তর দিলেন “তুমি যা পরবে সব কিছুই তোমাকে সুন্দর লাগবে। তুমি সবগুলো নিয়ে নাও। আবার মেসেজ …..টাকা পাঠাও।
ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থাকলেন। তারপর মেসেজ পাঠালেন কত? একটু পর টুং করে মেসেজ এলো।
“9700 টাকা , ফোনের ওপার থেকে টুং আওয়াজ করে একটি লিঙ্ক এল। মনের সাথে যুদ্ধ করে গুগল পে করে দিলেন।
মনে তখন আবেগের ঢেউ। গতকাল সেলারি পেয়েছেন।
এখন চোখের সামনে শুধু ছবি গুলি নেচে বেড়াচ্ছে।
ফোনের ওপার থেকে, আর কোন সাড়া শব্দ এলোনা ।
সমীরণ বাবু কিছুটা হতাশা গ্রস্থ হলেন।
টাকার শোকে বুকের ধক ধক শব্দ গুলি নিজেই শুনতে পাচ্ছেন।
যে নাম্বার টায় ছবি গুলি এসেছিল ঐ নাম্বারে উনি কল করলেন। ৫-৬ বার রিং করার পর ফোনটি একটি মেয়ে ধরল । ধরে বলল দাঁড়ান দিচ্ছি। ফোনের ওপাস থেকে উত্তর এলো আমি তোমাকে ফোন করতাম জামা গুলো ট্রায়াল দিচ্ছিলাম।
সমীরণ বাবু যেন ভূতের কণ্ঠস্বর শুনলেন। আবার চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন হ্যালো কে আপনি? ফোনের ওপাস থেকে উনার স্ত্রী উত্তর দিলেন।
কি -গো” দেরি হয়েছে বলে ওইভাবে রাগ করেছ? আমি বুঝতে পেরেছি !
এই ড্রেস পরে আমাকে কেমন দেখতে লাগছে, তুমি না দেখা অব্দি শান্তি পাচ্ছ না । তাইতো? দাঁড়াও আমার বান্ধবীকে বলছি ফটো তুলে তোমাকে পাঠাতে।
ঐ ফটোগুলো আমার বান্ধবীর। কারণ আমি আমার বান্ধবীর শাড়ির শোরুম এসেছি । ও ড্রেস গুলো পরে তোমাকে পছন্দ করাচ্ছিল। আমি বলেছিলাম তুমি যা পছন্দ করবে সেটাই নেবো। কিন্তু তুমি সবগুলোই কিনে দিলে।
তুমি আমার কাছ থেকে দূরে, গিয়ে আমার জন্য খুব উতলা হয়ে উঠেছ তাই না ? এইসব মডার্ন ড্রেস কিনে দিয়েছো, আগে তো পরতেই দিতে না, ঠিক আছে তুমি যখন দিয়েছো তো সবই পরবো””
আর ছুটিতে বাড়ি আসার সময় কি কি আনতে হবে সেগুলো বলতে শুরু করলেন।
ফোনের ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ আসছে না। স্ত্রী হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছেন। সমীরণ বাবু তখন স্ত্রীর কথা শুনতে শুনতে জ্ঞান হারিয়েছেন।
………………………………………………………………………………………………………………