প্রেমিকার আত্মা

✍ – শ্রী সুবোধ চন্দ্র সরকার,  (আইনজীবি)

বেহালা,কলকাতা

পিন্টু মুখার্জী অর্থাৎ পিন্টুর নেশা ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো৷ অল্প বয়সী ছেলে এবং মেয়েদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়৷ তার  রিকোয়েস্ট এ অনেকেই সাড়া দিয়েছে৷ নয় নয় করে প্রায় তার হাজারের বেশী ফেসবুক বন্ধু হয়ে গিয়েছে৷ আবার অনেকে চলেও গিয়েছে৷ কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার প্রথম ফেসবুকে রিকোয়েস্ট করে যে বন্ধুকে পেয়েছিল, আজ চার বছর হয়ে গেল কিন্তু কেহ কাউকে সাক্ষ্যাৎ করেনি৷ পিন্টু একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক সে         ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এ্যাকসেপ্ট করেছিল যার সে ও ছিল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের একজন শিক্ষিকা৷ তাই প্রথমেই যেন তাদের একটা সৌহার্দ্য তৈরী হয়েছিল৷ যখনই অনলাইনে থাকে তারা উভয়ে তাদের মনের কথা আদান প্রদান করে৷ যা হয় আর কি! বিভিন্ন উৎসব গুলিতে উভয়ে উভয়কে ম্যাসেজ পাঠায়৷

এইভাবে চলার পর একদিন সাহস করে পিন্টু সুমিত্রার সাথে ঘর বাঁধার প্রস্তাব জানায়৷ সুমিত্রা বলে আমাকে দেখলেন না আমি কেমন দেখতে সুন্দরী না কুৎসীৎ কিছু না জেনেই ঘর বাঁধার প্রস্তাব দিলেন৷ পিন্টু বলে তোমাকে আমি কতবার দেখতে চেয়েছি, তোমার সঙ্গে ঘুরতে চেয়েছি, তুমি এড়িয়ে গিয়েছো বারবার বলেছো এখন নয় পরে৷ তোমার সাথে কথা বলে যা জেনেছি তোমার সঙ্গে ঘর বাঁধার পক্ষে আমার কাছে যথেষ্ট৷আমি তোমাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসি।যাকে মন দিয়েছি, যার বুকভরা ভাল বাসা পেয়েছি  তার চেহারায় কি আসে যায়। পাগলামি করোনা৷ যদি ঈশ্বর আমাদের মিলনের সুযোগ দেয় তাহলে শুভকাজ নিশ্চয় হবে৷ এই বলে পিন্টুকে থামিয়ে দেয়৷ ঘর বাঁধার কথা আর সাহস করে বলে না একে অপরের মনের কথা সারাদিন কিভাবে কাটিয়েছে সেই সব কথা বলে তাদের আলাপ শেষ হয়৷ পিন্টু হতাশ হয়ে যায়৷ সে ফেসবুকে একটা বিজ্ঞাপন দেয় GF চাই বলে৷ দেখা গেল তিনশোর অধিক তরুনী তার প্রস্তাবকে লাইক করেছে এবং তার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে৷ পিন্টু মনে মনে ভাবল তাকে বন্ধু করা এবং দেখা করার জন্য এত GF সাড়া দিচ্ছে৷ সে চিন্তা করতে লাগল কি করবে৷ তার মনে একটা জেদ চেপে গেল, স্থির করল সুমিত্রাকে সে আর কোন ম্যাসেজ করবে না তার সঙ্গে একদম আলাপ চারিতা বন্ধ করে দিল৷ নতুন ফেসবুক বন্ধুদের সাথে হায় হ্যালো শুরু করল৷ সুমিত্রাও কি ভাবল আর ম্যাসেজ করে না৷ একদিন রাত্রি ২টোর সময় পিন্টুর ফোনটা বেজে উঠল, এত রাতে কার ফোন বাজছে কৌতুহলে ফোন রিসিভ করে বলল, হ্যালো কে, কে বলছেন, ওপার থেকে সাড়া এল আমি সুমিত্রা, তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।  এত রাতে ফোন করছো? দেখলাম, তুমি রাগ করেছো, তোমার সাথে বিয়ে করতে চাইনি বলে । আমি ঠিক করেছি আমি তোমার সঙ্গে একদিনের জন্য একটা জায়গা ঘুরতে যেতে চাই৷  একটা শর্তে তুমি আমাকে স্পর্শ করবেনা৷ শুধু তোমার সাথে আমার কথপোকথন হবে৷ তুমি রাজী ? পিন্টু বলল রাজী৷ তাহলে কাল ভোর ৫টায় স্টেশনে আমার সঙ্গে দেখা করবে৷ ঠিক আছে, বলে ফোন কেটে দিল৷

পিন্টু তার ব্যাগপত্তর গুছিয়ে নিয়ে বাড়ী থেকে ভোর ৪-৩০ এ বের হল স্টেশনে যেতে তার মিনিট ২০ সময় লাগে৷ স্টেশনের কাছাকাছি এসে দেখল একটি মেয়ে স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে৷ পিন্টু আনন্দে এমনি আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল, ছুটে গিয়ে তাকে জাপটে ধরে বলতে গেল ,আমি এসে গেছি৷ কিন্তু হঠাৎ তার মনে হল, সুমিত্রা তো তাকে স্পর্শ করতে বারন করেছে৷ তাই সংযত হয়ে আস্তে আস্তে তার কাছে এসে দাঁড়ালো৷ সুমিত্রা এমনভাবে তার পোষাক পড়েছে দেহের সমস্ত অংশ ঢাকা শুধু মুখটা দেখা যাচ্ছে তাও আবার অস্পষ্ট৷ পিন্টু বলল, কোথায় যাবে স্থির করেছো৷ ট্রেন আজ লেট আছে, ৫টার ট্রেন ৬টায় আসবে ততক্ষণ আমরা ঐ গাছের তলায় বসে একটু গল্প করি৷ ভোরবেলা একেবারে নির্জন নিস্তব্ধ জায়গা৷ সুমিত্রার পিছু পিছু পিন্টু চলতে লাগল৷ সুমিত্রা বলল, আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ কারণ  আমাকে না দেখেও আমাকে বিবাহের  প্রস্তাব দিয়েছো৷ আমি চিন্তা করছিলাম তোমার সাথে ঘর বাঁধা ঠিক হবে কিনা তাই তোমাকে এখানে ডেকেছি, আচ্ছা তুমি আমায় কতখানি ভালোবাসো৷ পিন্টু বলল তুমি আমার অন্তরের অন্তিমস্থলে যেভাবে বিরাজ করছ, কতখানি ভাল বাসি তার কিভাবে পরিমাপ করব৷ তবে জনমে মরনে তোমাকে ভালবাসি….তোমাকে ভালবাসি৷ সুমিত্রা বলল সত্যি বলছ জনমে মরনে আমার সাথী হবে৷ তবে শোন, তুমি আজ যার সঙ্গে কথা বলছ, সেই সুমিত্রা আমি নই আমি তার প্রেতাত্মা৷ তোমাকে বিয়ে করার কথা বলাতে আমার বাবা আমাকে ভয়  দেখিয়েছিল যে তোমাকে মেরে ফেলবে৷ আমি সেই ভয়ে গতকাল আত্মহত্যা করেছি৷ তাই তোমাকে বলেছিলাম আমাকে স্পর্শ করবে না৷ আমি পরজন্মে তোমার জন্য অপেক্ষা করব৷ বলেই একটা কাক কা কা করে চিৎকার করে উঠল এবং একটা ঘূর্ণী ঝড়ের মতো হাওয়া তার সামনে মেয়েটিকে উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল৷ পিন্টু এই কান্ড দেখে অজ্ঞান হয়ে গেল।

তারপর তার কিছু মনে নাই। যখন জ্ঞান ফিরল পিন্টু বাড়ীতে বিছানায় শুয়ে৷ মা তাকে বললে ভোর  বেলায় কোথায় গিয়েছিলে৷ জানিস না,   ঐখানে কাদের একটা মেয়ে কাল রেলে মাথা দিয়ে আত্মহত্যা করেছে৷ এখন পিন্টুর কাছে সব পরিস্কার হয়ে গেল সুমিত্রার ব্যাপারে৷ তাকে শেষ কথা জানাবে বলে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল৷ সে মাকে সব কথা খুলে বলল৷ মা তখন বলল রাম রাম আজ ভগবান তোকে রক্ষা করেছেন৷

……………………………………………………………………………………………………

 

 

 

Loading