ছোট গল্প
পরাজয়
কলমে: শর্মিষ্ঠা সেন
নালিকুল, হরিপাল, হুগলি
“এটা পুলিশকেস,থানা থেকে লোক না এলে চিকিৎসা শুরু করা যাবে না।তাছাড়া তোমাদের কাছে এই নার্সিংহোমে চিকিৎসা করানোর টাকা আছে?” বেশ গম্ভীরভাবে বললেন মধ্যবয়সী নার্সটি।আলুথালু বেশের ভিখারী মহিলাটি বলল,”আমরা ফুটপাতে থাকি,আমরা টাকা কোথায় পাব!আর এই হাসপাতালটা কাছে বলেই নিয়ে এয়েচি।”
নামকরা নার্সিংহোমটির কাছেই একটি বড় বেপরোয়া গাড়ি রাতের অন্ধকারে ফুটপাতে শুয়ে থাকা তিনজনকে চাপা দেয়।দুজন সঙ্গে সঙ্গে মারা গেলেও ভিখারী মহিলাটির ছবছরের ছেলে এখনও জীবিত, যদিও সঙ্কটজনক।
ডাক্তার সমীরণ সরকার একটু দূর থেকে নার্স আর মহিলাটির কথোপকথন শুনছিলেন।হঠাৎই মহিলাটি তাঁর কাছে এসে হাতে পায়ে ধরতে লাগল। ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার সমীরণের মনে পড়ল তিরিশ বছর আগের এক ঘটনা।
বারো বছরের সমীরণ রোজ স্কুল যাবার সময় তারই বয়সী একটি ছেলেকে ভিক্ষা করতে দেখত।টাকা না দিতে পারলেও নিজের টিফিনের ভাগ তাকে দিত। একদিন ছেলেটিকে তার জায়গায় না দেখতে পেয়ে ভারী ভাবনায় পড়ে গেল। খানিকদূর এগোতেই মোড়ের মাথায় ভিড় দেখে এগিয়ে গেল।একটা বেপরোয়া বাসের সাথে রাস্তা পার হতে গিয়ে ভিখারী ছেলেটির ধাক্কা লেগেছে।আঘাত ভয়াবহ হলেও সময়ে চিকিৎসা হলে বেঁচে যেতে পারে।বারো বছরের কিশোর সমীরণের অনুরোধ কেউ রাখল না।কেউ একটু হাসপাতালে পৌঁছে দিল না।মারা গেল ভিখারী ছেলেটি।সেদিন দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিজ্ঞা করেছিল সে ডাক্তার হবে।
কিন্তু এখন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে কি তিনি আজ যেতে পারবেন?তাঁর মেয়ে বিদেশে পাঠরত।ঘরে বৃদ্ধ বাবা,মা ও স্ত্রী।চিকিৎসা জগতে তাঁর নামডাক সব এই নার্সিংহোমের দৌলতে।
হঠাৎ এক মায়ের বুকফাটা কান্নায় কেঁপে উঠল গোটা নার্সিংহোম। সেইসঙ্গে বারো বছরের কিশোর সমীরণের কাছে পরাজিত হলেন ৪২ বছরের ডাক্তার সমীরণ সরকার।
………………………………………………………………………………………………….
-
-
-
-
__________________________________________________________
-
-
-
-
-
-
-
__________________________________________________________
-
-
_______
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-