নাগরিক

কলমে – নন্দ দুলাল মন্ডল

লেখক পরিচিতি :  নন্দ দুলাল মন্ডল,

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে কর্মরত।  ২০০০ সালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মেদিয়া নামক একটি ছোট্ট গ্রামে জন্ম। মা ঝর্না মন্ডল।  সেখানেই মেদিয়া বাস্তুহারা  উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবন শেষ করে পরবর্তীতে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি ) থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনে বিটেক। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংশোধনাগার দপ্তরে একটা সময় বেশ কিছু দিন কাজ করার সুযোগও হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং এর পাশাপাশি চলতো লেখালিখিও। আমি কোনো কবি বা লেখক নই, আমার অনুভূতি মিটারে যে সমস্ত বলতে না পারা অনুভূতি বারেবারে ধরা দিয়েছে তাই বেরিয়েছে আমাদের কলমের খোঁচায়।

 ২০১৭-১৮ সাল থেকে শুরু বিভিন্ন পত্রিকা,সংকলন গুলোতে লেখালেখি।

২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ত্রিপুরা আগরতলা বইমেলাতে থেকে প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস “জেলের গরাদ ভেঙে সন্ন্যাসী ” ।

এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে নীলবাতি, বিরহীনির মতো  গল্প গুলোর পাশাপাশি একাধিক কবিতা।বর্তমানে সমাজধারা, সমাজ ভাবনা,আলোর সন্ধানে, উৎস(অনলাইন) ইত্যাদি পত্রিকা গুলোতে কমবেশি নিয়মিত লেখালেখি করা হয়ে থাকে।

……………………..

আমি নাগরিক,

শরৎ রোদের উজ্জ্বলতায় আমি পথ হারিয়েছি, হারিয়েছি চেনা উঠোন,চেনা মাঠ,চেনা রাস্তা,চেনা কঙ্কনা,   শৈশব, কিংবা আম বাঙানের গুলির সেই প্রিয় পিলটিকে।

তাতে আমার কোনো আপসোস নেই।

বড়জোর রাতের আধারে বিষাদে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে পারে,বা প্রবল শীতে বড়জোর ঘামে ভিজে যেতে পারে মোটা উলের পোশাকটি,

এর থেকে বেশি কিছু নয়।

শুনতে পাচ্ছো? আমি নাগরিক।

মাস্কাটের নলের সামনে আমি দাঁড়িয়ে,

বুলেটে বুক পেতেছি, রক্ত দিয়েছি রুক্ষ জমিতে,কিন্তু ফসল ফলেনি এখনো,

শুধু আমার মায়ের চোখের জল ছাড়া।

শুধু নাগরিক হওয়ার তাগিদে, আমার উঠোন ছেড়েছি, নিঃশব্দে ছেড়েছি পেছনের বারান্দার রোদ্দুরকে,ছেড়েছি পড়ন্ত  বিকেলের হৈ-হুল্লোড় কিংবা রাতে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক৷

কেউ আছো? আমি নাগরিক।

আমি রাতের আধারে ঘুরে চলেছি একা একা।

কেউ কোথাও নেই৷ যে সর্বহারা জননী মৃন্ময়ীকে তুমি বুকে ধরে ছিলে সেও আজ নিরুপায়। তার পায়েও শিকল দেওয়া।

শুনতে পাচ্ছো আমায়?আমিও পথহারা এক নাগরিক৷

তেরো বছরের প্রেম ভেঙেছে,

ভেঙেছে প্রদেশ, ভাঙছে জেলা।

চোখের জলের বাঁধ ভেঙেছে

দিক হারিয়েছে দাঁড়হীন ভেলা।

শীতল পাটি বিছিয়ে দিতাম,

তালের পাতার হাত পাখাতে

গ্রীষ্মরাতে হাওয়া ধরতাম,

বিলের বুকে ছিপ ফেলতাম,

লাটাই- ঘুড়ি, মাঞ্জা সুঁতো

ঘুড়িটিই আজ দেশ চ্যুত।

শুনতে পাচ্ছো? আমিও নাগরিক।

এইতো আজও আমি মাটিতেই দাড়িয়ে।

খোলা আকাশের দিকে চেয়ে দেখি কোথাও কোনো সীমানা নেই, নেই কোনো দেশ-বিদেশের খেলা।

হিরোশিমা, নাগাসাকি কিংবা

নির্ভয়া কামদুনির সন্ধ্যাবেলা।

কনকনে শীতে নিস্তব্ধ রাতে আমার রক্তাক্ত দেহকে তারা বুকে তুলে নিতে এসেছে।

অসময়ে বৃষ্টি হয়ে নেমে এসেছে আমার চোখের জলকে মিশিয়ে দিতে।

তবুও আমি নাগরিক হতে পারিনি।

ফুটন্ত পলাশে আগুনের ঝলক

কোলিকের ডাক,ক্ষুধার্ত শিশু

ক্লান্ত  চোখের পলক।

মৃত মেসোপোটেমিয়া শ্মশান-কবর এ,

আমি নেতাজির মা,

আর কতদিন পথ চেয়ে রবো রে?

আমি কেমন হতবাক হয়ে চেয়ে আছি

এ নাকি আমার বিশ্বজয়ী বিবেকানন্দ, বীর সুভাষের মহান দেশ।

তবুও আমি নিরুপায়, আমার ক্লান্তি নেমে এসেছে আমার হাত পাখার প্রবাহের গতিতে। এখানে আজ বায়ু চলাচল হয়না।

শুনতে পারছো আমি নাগরিক,আমি নাগরিক, আমরা নাগরিক।

Loading