কবিতা :- মহামায়া
কলমে – সুমিতা পয়ড়্যা
চাপা কান্না ছিল, গোঙানির অস্পষ্ট স্বর ছিল
মাকে চাইছিল, বাবাকেও; শক্তির পরীক্ষায় হয়তো বা হার মেনে ছিল
ভীষণভাবে চাইছিল ভালোবাসাকে, ঘুমাতেও চেয়েছিল
আত্মবিশ্বাসের ভর দিয়ে চলতেও চেয়েছিল
মুখোশগুলো খুলে ফেলতে চেয়েছিল
শক্তিরূপে মহামায়া জাগাতে চেয়েছিল সবাইকে।
বাতাসে বিষবাষ্প, ধরণীতে যে বিষ বৃক্ষের ছড়াছড়ি
অলিতে গলিতে অন্ধকারে চোরা স্রোতের কারবার
কখন যে পা হড়কাবে তা অজানা ছিল
তিলোত্তমা হয়তো জানতো না এসব;
না না সেই মেয়ে মহামায়া, সব জেনে ফেলেছিল।
জেনে ফেলেছিল বলেই তো মৃত্যু এলো শিয়রে
সে কি ভীষণ যন্ত্রণা; কি ভীষণ ভয়ংকর রূপ
প্রতিকারহীন; নিষ্ফল আবেদন নিবেদনের মৃত্যু
অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন— আরো কত কি যে!
বড্ড ভারি ভারি কঠিন কঠিন বুক ভার করা শব্দ
কান্নায় জল ছিল না, ছিল রক্ত—
রক্ত আর রক্ত, যেন রক্তের বন্যাউৎসব!
ভেসেছিল সেই মেয়ে-আমাদের তিলোত্তমা
কিন্তু ক্ষমতায়নের উর্ধ্বে ছিল যে তিলোত্তমা
সেটা ওরা জানতো না।
জানতো না যে ওই তিলোত্তমা সেই মহামায়ার আরেক রূপ
সেই শক্তি কখনও বিন্ধ্যবাসিনী, কখনো যোগমায়া, কখনো বা নারায়নী, কখনো আবার দেবী দুর্গা রূপে।
মৃত্যু যে শুধু মৃত্যু নয়; অমরত্বও আছে
যে মৃত্যু বিশ্বকে কাঁপিয়ে তোলে তাকে অমরত্ব ছাড়া আর কি আখ্যা দেওয়া যায়!
আর তাই তো হত্যাকালে তিলোত্তমা মহামায়ার অরূপ রূপ ধারণ করে
আর গগনভেদী আর্তকণ্ঠে আকাশে বাতাসে নিনাদিত হয়—
“তোমারে বধিবে যে
গোকুলে বাড়িছে সে।”