কবিতা :- দুর্গা মাকে খোলা চিঠি
কলমে – সুমিতা পয়ড়্যা
মা,
বছরে তুমি একবার আসো পিত্রালয়ে চার দিনের জন্য
তুমি পিত্রালয়ে আসতেই পারো অকালবোধনের নিয়মে
তুমি এলে আমাদের সকলেরই আনন্দই হয়
তুমি এলে আকাশে বাতাসে আগমনীর সুরে মন উদ্বেল হয়ে ওঠে
তুমি এলে জীবনে প্রাণ ফিরে আসে
তুমি এলে উৎসব মুখরিত হয়ে ওঠে আনন্দ গানে।
কিন্তু তুমি জানো না এখন এই সময় কি চলছে এই মর্ত্য ধামে
তোমার সুন্দরের আরাধনা হবে কিনা বলতে পারিনা!
সবার মন খারাপের বেলা চলছে সেই কবে থেকে
চারিদিকে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার।
মানুষের সঙ্গে মানুষের অহংবোধের লড়াই
চারিদিকে শকুন, হায়নার লোলুপতা
সহস্র দিকে চোরা স্রোতের সংকটকাল, এক ভীষণ সংশয়
কে বাঁচবে আর কে বাঁচবে না তা কেউ জানে না!
প্রত্যেকের পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে; অপরিচিত হয়ে উঠেছে মানব রূপ।
তাইতো কি আর্তনাদ আর হাহাকার, উন্মত্ততা সারা পৃথিবী জুড়ে
তুমি শুনতে পাচ্ছ না? আকাশে বাতাসে সেই আর্তস্বর ক্রমাগত নিনাদিত হচ্ছে।
আকাশের রং, বাতাসের বিষ বাষ্প জুড়ে শুধু রক্তের দাগ
তীক্ষ্ণ নখের আঁচড়ে সকলের ক্ষত উন্মুক্ত
সবাই বন্দী হয়েছে নরখাদক দলের হাতে
তোমার দিব্যদৃষ্টি দিয়ে তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না?
তুমিই বলো এমন পরিস্থিতিতে কি আনন্দ, খুশি বিলানো যায়!
তুমি প্রতিবছর দশপ্রহরনধারিণী হয়ে এই মর্ত্যধামে আসো
বরাভয়দায়িনী, সর্বং স্বাহা, কল্যাণময়ী রূপেও তোমার আগমন
মাগো এখন তো সেই দিন আর নেই!
যেখানে চেতনা নেই, বোধ নেই, অনুভূতি নেই, উপলব্ধি নেই
শুধু হিংস্রতা, স্বার্থপরতা, পরশ্রীকাতরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা আছে
আরো কত কি যে আছে…!
আর তাইতো চলছে অবিচার আর অবিচার
মঙ্গল শাঁখ বাজছে ; মোমবাতি প্রজ্জ্বলন হচ্ছে সঠিক বিচারের আশায়
গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হচ্ছে স্বৈরাচারীর দখলদারিতে
মাগো,সকলেই কালের করাল গ্রাসে বন্দি।
ডুবতে ডুবতে হাঁপিয়ে উঠেছে সবাই; নিঃশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে মা গো!
তুমি কি পারবে সেই রূপ নিয়ে আসতে?
তুমি কি পারবে সেই যেমন ভাবে অসুর নিধন করেছিলে?
তুমি কি পারবে সেই উগ্রচন্ডীর রূপ ধারণ করে মর্ত্যধামে আসতে?
শুধু চলবে অসুর নিধনযজ্ঞ! আর সেই যজ্ঞের আমরাই সাক্ষী থাকবো তোমার পাশে।
জানো মা, সভ্যতার বর্বরতার ইতিহাসে খচিত হলো আর একবার নির্লজ্জ নগ্ন অমানবিকতা!
নিকষ ঘন অন্ধকারের দিনরাত্রি যেখানে সূর্যের তীব্র তেজে রশ্মি মলিনতায় ঢেকে রয়েছে।
তুমি বলো মা, এমন পরিস্থিতিতে আমরা তোমার উৎসব আরাধনা করতে পারি।?
তুমি আসতেই পারো তবে অসুর নিধন যজ্ঞের রূপে এস।
এই খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে!
পৈশাচিকের দল তোমার কাছে এই চিঠি পৌঁছাতে দেবে কিনা জানিনা!
তবে তোমার দিব্যদৃষ্টি জাগ্রত করো একবার।
দেখো এই আঁধারে আমাদের কত যন্ত্রনা!
মাগো, পরিত্রান পাবো কবে! কিভাবে!