আয় রে খোকা ফিরে আয়

 

কলমে – মাধব ব্যানার্জী ( হীরক জ্যোতি)

১১৮/১, দাসপাড়া রোড, লিলুয়া, হাওড়া,

 

সমুদ্রের শোভা দেখিবার তরে উতলা হল অবুঝ মন,

দ্বাদশ বর্ষিয় এক গ্রাম্য বালক তার নামটি সনাতন।

উত্তাল সমুদ্র সে দেখে নি কভু দেখার ইচ্ছে প্রবল যে তার,

তাই তো মায়ের কাছে  বারে বারে করছে সে আবদার।।

শান্ত ছেলের চঞ্চল মন আজি নীল সমুদ্র দর্শণে,

 অশান্ত সাগর যে সদাই ডাকে তাকে  নিদ্রিত স্বপনে।

দিন দরিদ্র বিধবা মায়ের সে যে একমাত্র অবলম্বন,

তাই তো সমুদ্রে যেতে চাইছে না দিতে মায়ের ক্লান্ত ভীরু মন।।

কিছুতেই ছেলে শুনলো না মায়ের সকাতর নিবেদন,

সোহাগে জড়িয়ে ধরলো সে যে মায়ের দুটি চরণ।

কেমনে অমান্য করেন মা ছেলের স্নেহময় এই প্রীতি,

অনিচ্ছে সত্বেও জননী দিলেন তাকে যাবার অনুমতি।।

বলল ছেলে মায়ের কাছে পরশিদের সঙ্গে যাবো আমি,

আমায় নিয়ে কেন ভাবছো এত বল না মাগো তুমি।

আনন্দতে ছুটলো সনাতন প্রতিবেশী টুম্পা মাসির ঘরে,

মায়ের আদেশ আমি পেয়েছি গো মাসি যাবো গঙ্গা সাগরে। ।

টুম্পা মাসি সনাতনকে নিয়ে,আসল মায়ের আদেশ  নিতে,

দেখে অশ্রু সজল ভেজা মায়ের আঁচল,মন চাইছে না যেতে দিতে।

নাছোড় বাঁধা ছেলের তরে অবশেষে জননী হলেন রাজি,

সনাতন টুম্পা মাসির সঙ্গে চলল সমুদ্র দর্শণে আজি।।

ছাড়ল নৌকা সদল বলে সাগর সঙ্গমের অভিমুখী,

রৌদ্রজ্বল আকাশ দেখে সকল যাত্রীরা কত সুখী।

মাঝ দরিয়ায় নৌকা তখন আকাশ ঢাকলো কালো মেঘে,

হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকিয়া উঠল বাদল সমুদ্রবক্ষে প্রবল বেগে।।

সাগরের ঢেউ উন্মাদ তখন তরীগুলো সব টলমল,

ঝড়ের অভিমুখে নৌকা বাইতে মাঝিরাও বেসামাল।

হঠাৎ সকলের অগোচরে সনাতন গেল পড়ে অশান্ত সাগরের একা,

উত্তাল সমুদ্রের সে কোথায় গেল হারিয়ে আর গেল না তাকে দেখা।।

ফিরল সকলে দুই চোখের জলে শুধু সনাতনকে একলা রেখে,

দুখিনী মায়ের করুন আর্তনাদ তার আদরের

সন্তানকে না দেখে।

মায়ের আঁচল যে সে আর ধরবে না কভু আসবে না  আর  ফিরে,

অভাগিনী মা শুধুই থাকবে একা তার স্নেহের খোকাকে ছেড়ে।।

 

দুনয়নের জলে ভাসে জননী হারানো সন্তানের তরে,

শুধু স্মৃতির ডালি আঁকড়ে ধরে মা রয়েছে হৃদয়ে জুড়ে।

তোকে ছেড়ে কেমনে থাকবো একা এই সুন্দর দুনিয়ায়,

পুত্র হারা মায়ের শোকার্ত বিলাপ আয় রে খোকা ফিরে আয়।।

Loading