ফোন
কলমে – সোনালী মুখার্জী
মেয়েকে প্রতিদিনকার মতো সঠিক সময়ে স্কুলে পাঠিয়ে নিজের কাজে মন দিল সোমা।সকাল সাড়ে ন ‘টা স্কুল থেকে ফোন এলো এখুনি স্কুলে আসুন।মেয়েকে আটকে রাখা হবে আপনি যতক্ষন না স্কুলে আসবেন। চিন্তায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো মাথায়।কী এমন অন্যায় করেছে?স্কুলে যেতে হবে।
যাক,সোমা দেবী তাড়াতাড়ি স্কুলে গেল।দারোয়ানের কাছে আসার কারণ জানিয়ে ভিতরে যাবার অনুমতি মিললো। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ভিতরে যাবার অনুমতি মিললো।নিজের পরিচয় দিল সোমাদেবী।প্রধান শিক্ষিকা পাশে বসার অনুমতি দিলেন। বেশ নরম সুরে বললেন আপনার বাড়ি কোথায়?
সোমাদেবী বললেন ঠিকানা।আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করব,কিছু লুকোবেন না।আপনার মেয়ে বলেছে ওদের বাড়ি অনেক দূরে,সেখানে ওদের ফ্ল্যাট তাই ওদিক দিয়ে যায়। কিন্তু আপনি যা বললেন আপনার যা ঠিকানা সেখানে তো যাবার কথা নয়।
সোমা দেবী বললেন,ম্যাডাম আমার মেয়ে স্টোরি টেলার।সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যা গল্প বলে।আপনি অবিশ্বাস করতে পারবেন না।ওকে কাউন্সিলিং এ রাখা আছে।
কিন্তু ম্যাম,আমার মেয়ে তো প্রতিদিন স্কুলে আসে সময় মতো বাড়ি যায়।উনি বললেন,যেতেই পারে।স্কুলে না এসে অন্য কোথাও যাবার অসুবিধা কোথায়? আমাকে তাহলে প্রমান একটা কিছু দেখান যা দিয়ে আমি বুঝবো।এ্যাটেনডেন্স খাতাটা একটু দেখুন।যথারীতি খাতা দেখা হলো।নিয়মিত স্কুলে এসেছে।ম্যাম বললেন,তাতে কী অন্য কেহ উপস্হিত দিয়ে দিয়েছে।সোমা দেবী বললেন,স্কুলে প্রক্সী?সব হয় ম্যাম বললেন।
এবার মেয়ের বানিয়ে কথা বলার কথা শুনতে চাইলেন।সোমা দেবী বললেন ম্যাম,একটা সুন্দর বাড়ি দেখিয়ে কাহকে বলেছে এটা আমাদের বাড়ি।বিশাল একটা চারচাকা গাড়ি দেখিয়ে বলেছে গাড়িটা আমাদের।ফেসবুক থেকে নামি দামী একটা কুকুরের ছবি নিয়ে স্ট্যাটাস দিল ওদের নূতন অতিথি।বাড়িতে পূজো হচ্ছে তার উপকরণ সব বদলে দিল ফেসবুক থেকে ছবি নিয়ে।এত সুন্দর করে মিথ্যে কথা বলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন ম্যাম। খুব ছোট বেলায় কোন ধনী মানুষের বাড়ি থেকে ঘুরে এসে বলতো,আমাদের কেনো ওসব নেই?
ওর অসুবিধা টা কোথায়?সোমা দেবী বললো,কন্যাসন্তান হয়েছে বলে ওর বাবা,মা ওকে নেয়নি। আঁতুড় থেকেই আমার কাছে।ওর মনের মধ্যে সব সময় মনে হয় ওকে কেহ ভালোবাসেনা।তাই সব সময় মিথ্যা কথা বলে সমবেদনা কুড়োতে চায়।
কিন্তু ম্যাম,হৃদয় নিঙড়ে ওকে আমি ভালোবাসি বলেই সোমাদেবী কেঁদে ফেললেন।ম্যাম বললেন,আপনি নিজেকে ওর জায়গায় বসিয়ে ভাবুন ও কতটা অসহায়।বাবা মা থাকতেও যে সন্তান তাদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত সে তো ইনসিকিওর ফিল করবেই।অন্যের ভালোবাসা কাড়তে গল্প ফাঁদবেই।
উনি মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে বোঝালেন,সবার সব কিছু থাকেনা। অনেকের মা নেই,অনেকের বাবা নেই।তাতে কী হয়েছে।তুমি তো ভালো ভাবে আদর যত্ন সহকারে বড়ো হচ্ছো।কারো যে কেহ নেই তারা অনাথ আশ্রমে বড়ো হচ্ছে।অনাত্মীয়ের বাড়িতে থেকে কত লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করে আধপেটা খেয়ে বেঁচে আছে।পড়াশোনা শিখছে।
তুমি নিজেকে তৈরি করো।যে বাবা,মা বা বাড়ির লোক তোমাকে কন্যা সন্তান বলে অবহেলা করেছে তাদের তুমি বড়ো হয়ে বুঝিয়ে দেবে ছেলে আর মেয়ের তফাৎ। ভীষণ আদর করে বোঝালেন।
ঠিক আছে,আপনি আসুন প্রমাণ ছাড়া আমি কোন কথা বলিনা।বন্ধুরা বিপদে ফেলবে না।বন্ধুরা বিপদ থেকে বাঁচাবেও। সোমাদেবী মনে মনে ভাবলেন আমার সন্তানের বিষয়ে “বন্ধু” রা বাঁচাবে মানতে পারব না।