পদ্ম ভূত
কলমে – নবলতা শীল
রশিদের অনেকদিন ধরে মনটা খুব খারাপ মনে হচ্ছে মাকে দেখে আসি,সেই বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে এসেছিল। তাও দশ
বছর হয়ে গেল। মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী পাত্রীকে বিয়ে করতে হত, কারণ তার কথা দেওয়া ছিল, বান্ধবীর মেয়েকে ঘরের বউ করবে। কিন্তু সে তো অন্য একজনকে ভালোবাসে আগে জানলে তবে কিছু করা যেত। এখন সুমি কি তো ফেরানো যাবে না। আর কেনই বা ওর সাথে তো বছর পাঁচ হয়ে গেছে সম্পর্ক মা জেনে শুনে কেন যে এমন করল, ভাবতে ভাবতে ঠিক করে ফেলল বাড়ি আসবে হবে। মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তার ছেলের বয়স পাঁচ বছর। মাকে এখনো দেখানো হয়নি। এরপরে ওকে নিয়ে আসতে হবে গ্রামের বাড়িতে।
অনেক রাত্রে , ট্রেন থেকে নেমে দেখতে পেল চাদর মুড়ি দিয়ে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে, তখন রাত বারোটা বাজে, আশেপাশে কেউ কোথাও নেই মনে মনে ভাবছে প্ল্যাটফর্মেও একটা লোক নেই, ব্যাপার কি । এই অজপাড়া গায়ে কেউ আসে কতবার মাকে বললাম ভিটেবাড়ি ছেড়ে চলো শহরে থাকবে, তিনি শহরে আসবেন না । মনে মনে ভাবলো, আর আসলেই তো পদ্মের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে, ও মেয়েকে কেউ বিয়ে করে কোন ছোটবেলায় কি কথা দিয়েছিল সেটা এখন আর সম্ভব না। এদিকে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা, বাবা এত ঠান্ডার মধ্যে কে বসে আছে ?
সেই কখন থেকে বসে আছি, -এতক্ষণে তোমার আসার সময় হল ?
– কে তুমি ? তুমি এখনো চিনতে পারলে না ? দাঁত বার করে বলল আঁমি—
-এখানে বসে আছিস কেন ?
-মাসি বলল যা ছেলেটা আসবে অত দূর থেকে তুই একটু রাস্তায় গিয়ে দাঁড়া না হলে ও ভয় পাবে।
-ও আর তুই চলে এলি।
-ভুলেই গেছো এ পথ, মাসি খুব কান্নাকাটি করে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, বলে ছেলেটা না আসলে আমি আর বাঁচবো না, তুমি যে কি , তা আর বলবো কি ।
-পাকা পাকা কথা বলবি না স্বভাব এখনো গেল না তোর, খালি বকবক । কথা শুরু হলে আর থামার নাম নেই।
-আচ্ছা চনো।
-এই নাকির সঙ্গে কথা বলছিস কেন ?
-ঠান্ডা লেগেছে তো , তাই নাক দিয়ে কথা বেরোচ্ছে ।
-তোর গায়ে আঁশটে গন্ধ পাচ্ছি কেন রে ?
-ওই মাসি বললো, শহর থেকে খোকা আসবে একটু মাছ কেটে ধুয়ে রাখ আসলে গরম গরম ভেজে দিবি।
-মা বলেছে এই কথা, আমি আসবো মাকে তো বলিনি।
-মায়েরা হলো অন্তর্যামী!তার অন্তরে সারা দিয়েছে ।তাই তো বলল,সব গুছিয়ে রাখ।
-ও আচ্ছা,তবে মাথা পর্যন্ত কাপড় দিয়ে রেখেছিস,তোকে যেন কেমন লাগছে।
-বেশী বকবক না করে, চলো তো দেখি।
হঠাৎ রশিদ হোঁচট খেয়ে যায়,পদ্ম হাতটা ধরে তোলে।
ঠিক করে দেখে চলতে পারোনা।
কিরে তোর হাতটা এত ঠান্ডা ঠান্ডা কেন রে ?
ঐ দেখ বাড়ি এসে গেছে,মাসী দাঁড়িয়ে আছে ।
কিরে খোকা, এতদিন পরে মাকে মনে পড়ল।
আমাকে মাপ করে দেও মা,
আমার ভুল হয়ে গেছে।
তুমি ওভাবে ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন ?
আরে যাতো , স্নান করে আয়,ভাত খাবি।
খেয়ে উঠে দেখল,খুব সুন্দর সাদা বিছানার পাতা,তবে একটা আঁশটে গন্ধ –
এত গন্ধ কেন মা ?
তুই ঘুমাতো , বৃষ্টি হয়েছে,তাই এত গন্ধ।
ও দাদা আপনি প্ল্যাটফর্মের উপরে রোদের মধ্যে ঘুমিয়ে আছেন কি করে ?
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে সে
বলল আপনি কে ? আমি কি করে এলাম এখানে ?
আমি জানি না তবে আপনাকে এখানে আমি দেখলাম শুয়ে আছেন ?
আমাকে আমাদের গ্রামের পদ্ম এসে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল, খাওয়া দাওয়া করলাম ঘুমালাম। তবে অন্য জায়গা শুয়ে ঘুম আসছিল না । “গভীর রাত খাটে এপাশ-ওপাশ করছিলাম।
হঠাৎ ,কে যেন ডেকে চিৎকার করে ডাকল,সাথে খুব জোরালো আওয়াজ।সাথে আমার বাবার ডাক খোকা এলি নাকি ? আজ থেকে কুড়ি বছর আগে মারা গেছে, ওই জায়গায় কবর দিয়েছিলাম ।
আমার মা চিৎকার করে আমার বাবাকে ডাকছে,
কোথায় আছো ছেলে এসেছে।
এরপর পদ্ম বলল মাকে, আমি ওকে বিয়ে করবো। আমার মা বলল তোর বিয়ে হবে না । তুই আর মানুষ না, এখন পেন্তী। তারপর চিৎকার চেঁচামেচি মারের আওয়াজ, আমার মা বলল আমি থাকতে আমার ছেলের ক্ষতি হতে দেব না।
মা বলল তুই পালা খোকা, তারপর ছুটতে ছুটতে আমি পড়ে যাই আর কোন জ্ঞান ছিল না।
এই যাত্রায় আপনার মা আপনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে ও হচ্ছে পদ্ম ? ওকে রাতের বেলা দেখতে পাওয়া যায়। তোমার খোঁজ করেছিল সবাই, আমরা কেউ জানি না তুমি কোথায় থাকো। সব মিলিয়ে তুমি যে আওয়াজটা পেয়েছিলে তোমাদের বাড়িতে বাজ পড়েছিল, একদিন রাতে তারপর আগুন ধরে যায়, সেই আগুনে তোমার মা আর পদ্ম মারা যায়। তবে মাঝে মাঝে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়।
।
145 total views, 4 views today