মাতৃহৃদয়

কবি- গীতিকার – সাহিত্যিক

নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

রোজ বিকেল হলেই,

পাটভাঙা শাড়ি আর ইস্তিরি করা ব্লাউজ পরে বসে থাকেন তিনি।

এই আশি ছুঁইছুঁই বয়সে সাদা চুলে তেলের অভাবটা চোখ টানে ;

তবে যাঁর চুল, তার অভাববোধটাই  আর অবশিষ্ট  নেই -!

একচিলতে ঘরে কে এলো আর কে গেল,

মস্তিষ্ক এখন আর সে বিষয় নিয়ে ভাবেনা —

সে কথা ভাবার মতো মস্তিষ্কের” ললাটীয় খন্ডক” আর নেই,

যে পরিকল্পনা আর আত্মনিয়ন্ত্রণণে নিজেকে জারিত করবে প্রতিদিন।।

 

গাঁয়ের এক আটচালার ছোট্ট ঘরে মা জেগে থাকেআজও রাতের গভীরে ;

জেগে থাকে  আজও ছেলের আসবার অপেক্ষায়,

সাতবছর আগে, কোন এক বিকালে সে চলে গিয়েছিলো,

শহরের হ্যালফ্যাসানের ঘরে,

এই সাত বছরে  ব্যস্ততার চাবুকে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে মায়ের আত্মজ,

তবু গাঁয়ের পথে, মায়ের সাথে দেখা করবার ইচ্ছেটা

তেমন করে কোনদিনই  তার  টুঁটি টিপে ধরতে পারেনি,

আস্তে আস্তে সব ইচ্ছেই কি এমন করে কুঁকড়ে যায়!

এমন করেই দীর্ণ হয় মন,

জীর্ণ হয় মনন!

এমন করেই উন্মাদিনী করে তোলে, এক কুসুমকে!

আরও অনেক কুসুমের হাজারো, লাখো পাপড়ি,

 ঝরে পড়ে  যায় এভাবেই।।

 

উন্মাদিনী মা, রোজ নিয়ম করে বারান্দায় এসে বসে আজও —

যখন বিকেলের সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলান দিয়ে পড়ে;

ঠিক সাড়ে পাঁচটা বাজলে, ছেলে আসতো অফিস থেকে –

  “মা, মা “বলে রাস্তা থেকে চীৎকার করতে করতে বাড়ী ঢুকতো ;

 মাকে জড়িয়ে ধরে সারাদিনের রোজনামচার সন্ধান দেওয়া –

আজ সবকিছুই স্বপ্নের কোন ঠিকানায় নিয়েছে আশ্রয়!

_________________________________________________________________________

 

Loading