“মাতৃদিবস “
কলমে – সোনালী মুখার্জী
মাতৃদিবস কখনো একদিন হয় না।মায়েদের জন্য সব দিন সারাজীবনের মতো।
গর্ভধারিনী মা কোনো কথা বেশি হবে না যতই বলি।এরপর শাশুড়ি মা তিনি তো বৈবাহিক সূত্রে পাওয়া যেখানে আমার জীবনের বেশি সময় কাটছে, সেখানে বাবার বাড়িতে মাত্র কয়েকটা বছর।
আমার যাঁরা মায়ের আসন দখল করেছেন
মৃণাল দিদিমনি—– বাবা সরকারি চাকরি করলেও স্বাচ্ছন্দ ছিল না।অভাব যথেষ্ট ছিল।
স্কুল ড্রেসটা ছিঁড়ে গেছে জামার বুকের চৌকো কাজের কোনটা।
স্নেহভরে ডাক এ দিকে আয়।ড্রেস পরা অবস্হায় সেলাই করে দিয়েছেন।স্নেহচুম্বন দিয়ে বলেছেন,এ বছর একটা স্কুল ড্রেস কিনে দিতে বলবে বাবাকে।
এছাড়া কোন বইটা নেই তা জেনে বই জোগাড় করে দিয়েছেন।
সেলাই দিদিমনি তাঁর কাজ না পেলে ভীষণ পেটাতেন।মৃণাল দিদিমনি বলেছেন কেন মেয়েটি সেলাই আনছে না আগে জানুন পরে শাস্তি করুন। এই গরমে বাইরে দাঁড়িয়ে মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে তো।আপনি,আমি এই রোদে কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে পারি বলুন।
আলো রায় চৌধুরী দিদিমণি।তখন নবম শ্রেণি।পি কে দে সরকারের গ্রামার বই ছিলোনা আমার।টিচার ক্লাস করতে এসে আমার বই না দেখে খুব রাগ করে বকাবকি করলেন এবং বড় দিদিমনিকে নালিশ করলেন।বড়দি আমাকে ডেকে পাঠিয়ে জানতে চাইলেন কেন বই আনছি না।কী পড়ানো হচ্ছে?
বললাম বাপী বলেছেন,কটা দিন কাটলে অফিসে মাহিনা পেয়ে বই কিনে দেবেন।
বড়দি স্কুল ছুটির পর এক ঘন্টা করে আমাকে গ্রামার পড়াতেন।
সে মাসেও বাপী বই কিনে দিতে পারেন নি।
বড় দিদিমনি আমার পড়ার আগ্রহ দেখে বই কিনে দিয়েছেন।
যেখানে পড়তে যেতাম মুক্তি দিদিমনি আমাকে প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করতেন কী খেয়ে পড়তে যাই। উনি দুধ মুড়ি খেতেন,আমাকে দুধ বিস্কুট দিতেন।বই,খাবার দিয়েছেন বলে তাঁরা আমার মা একথা নয়।মায়ের মত স্নেহ ভালোবাসা,শাসন আদর শাসন,দায়িত্ব কর্তব্য পালন করেছেন।তাই মাতৃদিবসে এঁদের ও আমি স্মরণ করি।
পড়াতে যেতাম তখন একাদশ শ্রেণিতে।কলেজ থেকে একেবারে টিউশন শেষে রাত ন’টায় বাড়ি ফিরতাম।সেখানে ছাত্রের মা,আমাকে বলতেন হাত মুখ ধুয়ে আগে পেটভরে খাবে তারপর পড়াবে।আমার ছেলে খাবে আর তুমি আমার সন্তান সম সেই কখন দুটো খেয়ে বেরিয়েছ এতক্ষণ সে খাবার আর পেটে নেই।আমার মুখের উপর না বলবে না।
ছাত্রের বাড়ি খাওয়া এটা ঠিক আমার ভালো লাগতো না।এখনকার মতো তখন দুদিন একদিনের পড়া নয়।সেই সোমবার থেকে শনিবার রোজ পড়ানো। কী ভয়ানক ব্যাপার!
কোনদিন মুড়ি -তরকারি,কোনদিন ডিম টোস্ট এভাবেই খাবার তৈরি করে মুখের সামনে দাঁড়িয়ে শাসন করে খাওয়াতেন।মনে হতো না পড়াতে এসেছি।মনে হতো ঘরে ছোট ভাইকে পড়াচ্ছি।
এই যে স্নেহ ভালোবাসা একেবারে ই মাতৃস্হানিয়া।
কলেজে পড়াতেন এম এম ম্যাডাম,প্রফেসর।এত সুন্দর করে বাংলা পড়াতেন সব সময় হাসিমুখ।ঠিক যেনো মা।কী মিস্টি ব্যবহার।সব মেয়েরা যেন তাঁর সন্তান যেন সেই যত্ন নিয়েই পড়াতেন।আমাদের সময়ে এত ছাতার মতো কোচিং সেন্টার ছিল না।স্কুল,কলেজের পড়ানোতেই আমাদের পড়া হতো। তাঁদের মুখের কথাগুলোই নোট মনে হতো।
আমি আমার জীবনে যাঁদের মায়ের মতো পেয়েছি অতুলনীয়।
আমার মা খুব খুশি হতেন এই ভেবে তাঁর সন্তানকে ভালোবাসার,যত্ন করার অনেক মানুষ আছেন যাঁদের মায়ের মত নয়,মা বলা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আরো চমকপ্রদ।একদিন একটা পিরিয়ড দেরী করে পৌঁছনোর জন্য একটা ক্লাস করতে না পেরে কেঁদেই ফেলেছিলাম কারণ উনি যা বলেছেন কিছুই জানতে পারলাম না।বন্ধুদের থেকে শুনলে আমার হবে না।
লাইব্রেরীতে ডেকে ম্যাডাম আমাকে পড়া বুঝিয়েছিলেন।যে ভালোবাসা পেয়েছি কোনদিন ভোলার নয়।মাতৃদিবসে কেবল নয়,সব সময় এঁরা স্মরণীয়।
ভালো থাকুন আমার সকল মা।
সকল মাকে জানাই আমার প্রণাম।
65 total views, 2 views today