এশিয়া মহাদেশের দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্তবিরোধ সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা মার্কিন গোয়েন্দাদের। পাকিস্তান ও ভারতের বৈরিতা নিয়েও অনেকটা একই রকম দাবি করেছেন তাঁরা। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এক নিয়মিত বার্ষিক মূল্যায়নে এসব ইঙ্গিত দেওয়া হয়। মূল্যায়নটি বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে উত্থাপন করা হয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণে বলা হয়, চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্তবিরোধের ফলে সম্ভাব্য সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও ওয়াশিংটনের স্বার্থের প্রতি সরাসরি হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মার্কিন হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিজেদের সমন্বিত মতের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী সংঘাতের হুমকি পর্যালোচনা করে এই বার্ষিক মূল্যায়ন প্রণয়ন করে। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের দপ্তর কংগ্রেসে এই প্রতিবেদন পেশ করে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হুমকি পর্যালোচনার তথ্য রয়েছে।

কংগ্রেসে পেশ করা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ও ভারত সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ২০২০ সালে লাদাখে ঘটা কয়েক দশকের মধ্যে অন্যতম প্রাণঘাতী সংঘাতের কারণে দুই এশীয় পরাশক্তির মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলতে থাকবে। দুই দেশ বড় ধরনের লড়াইয়েও লিপ্ত হতে পারে। তাদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর ছোটখাটো সংঘাত বড় সংঘাতের দিকে চালিত করার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে।

চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা মূল্যায়ন সামনে আসার আগেই ভারতে চীনা মুঠোফোন ব্যবহার নিয়ে পরামর্শপত্র জারি করা হয়েছে।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পরামর্শপত্রে সেনাবাহিনীর সদস্যদের চীনা কম্পানির তৈরি মুঠোফোন ব্যবহার করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআই পরামর্শপত্রটি যাচাই করেছে। এতে দেখা যায়, ভারতের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা সেনা সদস্য ও তাদের পরিবারকে ভারতের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন দেশের মুঠোফোন ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে বলেছে। সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, চীনা মুঠোফোনে আড়ি পাতা কিংবা নজরদারি করার যন্ত্রাংশ পাওয়া গেছে।

ভারত ও চীনের সীমানাবিরোধ নিয়ে কাজ করা ‘ওয়ার্কিং মেকানিজম ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন অন ইন্দো-চায়না বর্ডার অ্যাফেয়ার্সের (ডাব্লিউএমসিসি)’ সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে গত ২২ ফেব্রুয়ারি। ২০১৯ সালের জুলাইয়ের পর এটি ছিল প্রথম বৈঠক। এ বৈঠকে এলএসি থেকে দুই পক্ষের সেনা আরো দূরে সরিয়ে নেওয়ার আলোচনা হয়। ডাব্লিউএমসিসির ১৮তম দফার আলোচনাও শিগগিরই হবে।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রসঙ্গ : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে পাকিস্তানের দিক থেকে প্ররোচনার জবাবে নয়াদিল্লির সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর সম্ভাবনা আগের তুলনায় বেশি।

প্রতিবেদনে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিদ্যমান তিক্ততাপূর্ণ সম্পর্ক বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। এতে বলা হয়, দক্ষিণ এশীয় দুই পরাশক্তির মধ্যে টানা উত্তেজনা বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। প্রতিবেদনটি বলছে, ভারতবিরোধী সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে সমর্থন দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানের। ফলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে সামরিক দিক থেকে আগের তুলনায় প্রতিক্রিয়া দেখানোর সম্ভাবনা বেশি। কাশ্মীরের মাটিতে সহিংসতা কিংবা ভারতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততার বড় কারণ হচ্ছে কাশ্মীর ইস্যু এবং পাকিস্তান থেকে ভারতের ভেতরে কথিত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী তৎপরতা।

সূত্র : এনডিটিভি

  • ______________________________________________________________________

 

 

Loading