বয়স বাড়লেই কি বার্ধক্য আসবে? এ ধারণায় এসেছে বদল? আমাদের চোখের সামনেই অনেকে আছেন যাদের বয়স ওই সংখ্যার নিরিখে অন্তত মানানসই নয়। তাদের দেখলে বোঝার সুযোগ নেই বয়সের অঙ্ক। তবে সময় গেলে তার প্রভাব তো পড়বেই। বয়স বললে সচরাচর আমরা বুঝি জন্মদিনের সংখ্যা। এই সংখ্যাই আসলে নির্ধারণ করে দেয় অনেক কিছু? তবে জন্মসনদের সংখ্যাই মূল নয়। বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা আমাদের জানাচ্ছে, বার্ধক্য দীর্ঘ সময় ধরে অতিবেগুনি রশ্মির প্রতিক্রিয়া, শরীরের ওপর নানা ধরনের বাহ্যিক ক্রিয়া এবং বিপাক বা বিপাকের উপজাতের কারণে হতে পারে। কোনো একক প্রক্রিয়া বার্ধক্যের সব পরিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারে না।
বার্ধক্য একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা কীভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করে তার তারতম্য আছে। অনেকে মনে করেন, বার্ধক্য নানাধরনের মিথস্ক্রিয়ার ফলে ঘটে। এ প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে বংশগতি, পরিবেশ, সংস্কৃতি, খাদ্য, ব্যায়াম, অবসর, অতীতের অসুস্থতা এবং অন্যান্য অনেক কারণ। তাই অনেক সময় যাপিত জীবনের অনেক পরিবর্তনের মাধ্যমেও বয়সের ভার দূর করা যায়। কীভাবে? আসুন জেনে নেই—
ব্যায়াম
শরীর ফিট রাখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ব্যায়াম করতে হবে। আমরা নানাভাবে একটিভ থাকি। কিন্তু একটিভ থাকলেই সমস্যার সমাধান হবে না। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের অনেক অঙ্গের চলাচল আর বিকাশ সম্ভব হয়। ব্যায়ামের পাশাপাশি একটি আলাদা ডায়েট থাকে। অনেকে সাপ্লেমেন্টারি নেন। এগুলোর মাধ্যমে শরীরের ভেতরকার টক্সিন দূর করা যায়? অর্থাত্ ব্যায়াম করা জরুরি? তবে আপনি কী ধরনের ব্যায়াম করছেন সেটিও ভাবনার কেন্দ্রে থাকা উচিত।
ধূমপান ত্যাগ করুন
সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে ধূমপানের মতো অভ্যাস ত্যাগ করা জরুরি। সিগারেটে থাকা কার্বন মনোস্কাইড ও কার্সিনোজেন ক্যান্সারের শঙ্কা বাড়ায়। তাছাড়া যারা নিয়মিত ধূমপান করেন তাদের ত্বকে বলিরেখা পড়তে পারে। ফুসফুসজনিত সমস্যায় ভুগলে তার প্রভাব ত্বকেও পড়ে। ধূমপানের ফলে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে আপনার শিরা-উপশিরা দৃশ্যমান হয়। এছাড়া এটি অস্টিওপোরেসিসের কারণ। ভঙ্গুর হাড় তো বার্ধক্যের অন্যতম লক্ষণ। ধূমপান সোরিয়াসিস, দাঁতের সমস্যা, সিওপিডি, চামড়া ঝুলে যাওয়ার মতো সমস্যা বাড়ায়। তাহলে আপনাকে বৃদ্ধ ঠাওরে না ফেলার সুযোগ কোথায়?
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
নিজের তারুণ্য ধরে রাখার বিষয়টি নিয়ে অনেক ভাবেন? ইচ্ছেমতো খাওয়া-দাওয়া করেন অথচ খাবারের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মেনেই চলেন না কেউ। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের পরিবর্তনগুলো চোখে পড়তে শুরু করে। সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এটি প্রথমে ত্বকে প্রকাশ পেতে শুরু করে। যদিও আমরা বার্ধক্য ঠেকাতে পারব না, তবে ত্বকে প্রকাশ হওয়া লক্ষণগুলো কমাতে বা বিলম্বিত করতে পারব। আপনার প্রতিদিনের খাবারের থালায় কী রাখছেন তার ওপর নির্ভর করছে আপনাকে কত দ্রুত দেখতে বয়স্ক লাগবে, না কি লাগবে না। এমন অনেক খাবার সম্পর্কে আমরা জানি না, যেগুলো বয়স বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী। কিছু খাবার আপনার বয়স বাড়ানোর মতো লুকের জন্য দায়ী। রিফাইন্ড সুগার, ফাস্টফুড, সুইটস, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি। মৌসুমের সঙ্গে মিলিয়ে শরীরের চাহিদার নিরিখে ডায়েট করে নিন।
পর্যাপ্ত জল পান করুন
শরীরে পর্যাপ্ত তরল সরবরাহ করা প্রয়োজন। কারণ এই তরলই শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করে, কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়, কর্মশক্তি বাড়ায় এবং সার্বিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক দু্ই থেকে তিন লিটার জল পান করা উচিত। মানুষের ত্বকের রয়েছে তিনটি স্তর।
বাইরের স্তরটি হলো ‘এপিডারমিস’, তারপরের স্তর ‘ডারমিস’ আর তার নিচের স্তরটির নাম ‘সাবকিউটেনাস টিস্যু’। ‘ডারমিস’ স্তরে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল না থাকলে ত্বক তার স্থিতিস্থাপকতা হারায় এবং রুক্ষ হয়ে যায়। ত্বকের ওপর জল পানের এই উপকার ছাড়া ত্বক আর্দ্র রাখতে আর কোনো ভূমিকার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। একটি মাত্র গবেষণা ত্বকের ওপর জল পান করার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা করেছে। আর তা হলো ইউনিভার্সিটি অব মিসোরি-ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষণা। যেখানে দেখা যায় মাত্র ৫০০ মি.লি. লিটার জল পান করলেই ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
__________________________________________________________
__________________________________________________________
_______