বাড়তি ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তা কে না করে? তরুণ – তরুণীরা তো অনেক সময় খাবার খাওয়া ছেড়ে দিয়ে ভুল পথে পা বাড়ায়। খাওয়া ছেড়ে দেয়, কিটো ডায়েট শুরু করে, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া দেখে নিজে নিজেই ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা শুরু করে দেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে উল্টোটাও ঘটে। হতাশা বাড়ে, আর হতাশা থেকে অপরিমীত ভাবেই খাদ্য গ্রহণ শুরু করে দেয়। এমন নানাবিধ অনেক কারণেই ওজন বাড়তে পারে।

শুধুমাত্র খাবার খেলেই যে ওজন বাড়ে, এমন ধারণা থেকেও বের হয়ে আসা উচিত প্রত্যেকেরই। কেননা জীবনে চলার পথে হরহামেশাই দেখি একজন অন্যজনকে কোন কিছু না জেনে বুঝেই জনসম্মুখে ওজন নিয়ে আপত্তিকর কথা বলে দেয়। এতে করে সেই ব্যক্তির মানসিক অবস্থার প্রভাবের কথাটি একবারও ভাবেন না। কি কি কারণে ওজন বাড়ে বাড়তে পারে তা নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করবো:

১.    অলস অকর্মণ্য জীবন: অনেকে খাবারও খায় কম আবার একেবারে অলস অকর্মণ্য জীবন কাটায়। ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে নিজের অজান্তেই একসময় হঠ্যাৎ করেই ওজন বেড়ে যায়

২.    বয়স ভেদে খাবারের ধরণ বজায় না রাখা: শরীরে খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা বয়স ভেদে ভিন্ন হয়। শৈশব, কৈশোর ও প্রাক – যৌবনকালে দৈহিক বৃদ্ধির হার দ্রুত হয় তাই এ সময় শরীরে খাবারের চাহিদাও বেশী থাকে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হয়। সাধারণত যত বয়স বাড়তে থাকে বিপাক ক্রিয়ার গতি ও শারীরিক পরিশ্রম উভয়ই কমে যাওয়ায় ক্যালরির প্রয়োজনও কমতে থাকে।

৩.    লিঙ্গভেদে খাদ্য গ্রহণ: একজন পুরুষ ও একজন নারীর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ক্যালরীর গ্রহণ এর পরিমাণ ভিন্ন হতে হয়। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের দেহের, আয়তন, ওজন, মাংসপেশীর পরিমাণ কম থাকে, তাই ক্যালরী ও অন্যান্য খাদ্য উপাদানের চাহিদাও অপেক্ষাকৃত কম হয়। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার প্রতিদিন ১৬০০-২৪০০ ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত আর পুরুষদের ২০০০-৩০০০ ক্যালরি।

৪.    উচ্চতা ভেদেও ওজন কম বেশী হতে পারে: যে ব্যক্তির উচ্চতা কম তাঁর খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বেশী উচ্চতার ব্যক্তির চেয়ে কম হতে হয় নয়তো ওজন খুব দ্রুত বেড়ে যেতে পারে।

৫.    শারীরিক অবস্থা: ব্যক্তির শারীরিক অবস্থাও ওজন বাড়ার জন্য দায়ী। হরমোনভিত্তিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ, অ্যালার্জির চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ সেবনও ওজন বাড়ায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঔষধ ও রোগীর ওজন বাড়ায়।

৬.    মানসিক অবস্থা: ব্যক্তির মানসিক অবস্থাও ওজন বাড়ার জন্য দায়ী। মানসিকভাবে চাপ ও হতাশাগ্রস্থ, বিষন্ন ব্যক্তির ওজন ও কিন্তু খুব দ্রুত বাড়ে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে, ইনসোমনিয়া বা ঘুম কম হলেও এ সমস্যা দেখা দেয়।

৭.    পেশীর ঘনত্ব কম হওয়া: পেশীর ঘনত্ব কম হলেও ওজন বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে যারা কায়িক পরিশ্রম কম করেন তাদের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

৮.    হাইপোথাইরয়ডিজম: যাদের ‘হাইপোথাইরয়ডিজম’ আছে অর্থাৎ যাদের থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে গেছে তাদের ওজন খুব দ্রুত বেড়ে যায়।

৯.    দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা কাজ: যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা চাকুরী করেন, তাদেরও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেশী।

১০.    রাতে দেরিতে খাওয়া ও ভারী খাবার গ্রহণ: রাতে দেরিতে খাওয়া ও ভারী খাবার গ্রহণ করলে ওজন বাড়বেই। ঘুমানোর অন্তত ২ ঘন্টা পূর্বে রাতে হালকা খাবার গ্রহণ করা উচিত।

১১.     জীবনযাত্রার মান: প্রতিটি মানুষের বিপাক ক্রিয়ার ধরনে ভিন্নতা থাকে। একজন মানুষ দৈনিক কতটা ক্যালরি খরচ করবে তা এই বিপাক ক্রিয়াই নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা পুষ্টিবিদেরা একে বলি ‘বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর)। এই মান থেকে জানা যায় একজন মানুষের প্রতিদিন কতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। কোন ব্যক্তির বিপাক ক্রিয়া কম হলে সেক্ষেত্রে ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। আবার ব্যক্তি বিশেষে হালকা, মাঝারী ও ভারী পরিশ্রমী আছে তখনও ওজনের তারতম্য ঘটে।

১২.    ক্যালরীমূল্য বিবেচনা না করা: একই ক্যালরি মূল্যের সবজি আর ফলমূলের খাবারের মেন্যু অন্য আরেকটি একই পরিমাণ ক্যালরি মূল্যের স্ন্যাাকস জাতীয় খাবার থেকে অনেক মানসম্পন্ন ও শরীরের খাবারের চাহিদা অনেকক্ষণ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে। সেজন্য ঘরে তৈরী স্বাভাবিক খাবার না খেয়ে বাহিরের অল্প পরিমাণে স্ন্যাাকস জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস যাদের আছে তাদেরও ওজন খুব দ্রুতই বাড়ে।

এজন্য ওজন নিয়ে খুব বেশী উদ্বিগ্ন না হয়ে কর্মব্যস্ত, হাসিখুশী, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করা উচিত।

 

__________________________________________________________

 

 

 

__________________________________________________________

_______

 

 

 

 

 

 

 

  

Loading