অসুরের ইন্টারভিউ
কলমে- বনানী শিকদার
এক অসুর আইটি কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে এল।
রিসেপশনে ঢুকে ফর্ম ফিল-আপ করার সময় লিখলঃ
নামঃ অসুর ভয়ংকর
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ বি টেক
বয়সঃ অপরিমেয়যোগ্য
অভিজ্ঞতাঃ অপরিমেয়যোগ্য
রিসেপশনিস্ট-এর কাছে জমা করল সে ফর্ম।
রিসেপশনিস্ট তার মানবরূপ দেখে বুঝতে পারেনি যে সে অসুর। বুঝতে পারলযখন জমা পড়া কয়েকটি ফর্ম নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে তার ফর্মে চোখ গেলে। ভয় পেলেও সে উপরে প্রকাশ না করে সেগুলোকে ভেতরে জমা করে এল। সেখানে আছে ইন্টারভিউ বোর্ড।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে ডাক পড়ল অসুরের। ইন্টারভিউ বোর্ডের একজন তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কোন সফটওয়্যারে এক্সপার্ট?”
অসুর গম্ভীর মুখে জবাব দিল, “ভাইরাস।”
“মানে?”
“মানে যে কোনো কম্পিউটার পাঁচ মিনিটে নষ্ট করে দিতে পারি।”
বোর্ডের সবাই অবাক হলেন। সবাই একসঙ্গে বলে উঠলেন,“আমরা সফটওয়্যার তৈরি করতে চাইছি। ভাঙতে নয়।”
অসুর চুপ করে রইল।
বোর্ডের আরেকজন জিজ্ঞেস করলেন, “টিমওয়ার্ক কেমন পারো?”
অসুর গর্ব করে বলল, “আমার পেছনে সবসময় কুড়িজন ছোট রাক্ষস কাজ করে।”
“ওরা অফিসে এসে কি করবে?”
“অন্য সব কর্মচারীর টিফিন খেয়ে নেবে।”
বোর্ডের আরেকজন জিজ্ঞেস করলেন, “কত স্যালারি আশা করছ?”
“স্যালারি টাকায় আশা করছি না। শুধু আনলিমিটেড কফি আর বিরিয়ানি দিলেই চলবে।”
ম্যানেজার ইন্টারভিউ বোর্ডের একজনের কানে ফিসফিস করে বললেন, “এই ক্যান্ডিডেটকে সিলেক্ট করলে অফিস ক্যান্টিনের পরিচালক দু’দিন পরেই ক্ষতিপূরণ দিয়ে টেন্ডার বাতিল করতে চাইবে।”
সেই একজন বললেন, “এ যদি ক্যান্টিনে চাপ দেয়, তাহলে একেই প্রেশার হ্যান্ডল করতে বলা হবে।”
“কিন্তু এ কি পারবে?”
“জিজ্ঞেস করেই দেখুন না।”
শেষ প্রশ্নটা করলেন ম্যানেজার, “তুমি প্রেশার…মানে চাপ হ্যান্ডল করতে পারো?”
অসুর দাঁত বের করে বলল, “চাপ হ্যান্ডলে তো আমি এক্সপার্ট নই! চাপ দিতে এক্সপার্ট।”
বোর্ড তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে জানিয়ে দিল, “নট সিলেক্টেড।”
২
আইটি কোম্পানিতে নির্বাচিত না হওয়ায় অসুরের মন খারাপ।
এদিকে দেবতারাও যারপরনাই আশাহত। দুর্গাপুজো আসন্ন। প্রার্থী নির্বাচিত হলে তবেই মূর্তি বানানোর টেন্ডার বাজারে ছাড়া যাবে। মা দুর্গাও ভীষণবিরক্ত। মহিষাসুরকে পরাজিত করার সেই প্রথম বর্ষের পর থেকেই তিনি অন্য কোনো অধিক শক্তিশালী অসুরকে চাইছেন। পরের প্রত্যেক বছর মহিষাসুর পুনরায় ইন্টারভিউ-এ অ্যাপিয়ার হয়েছেন এবং প্রত্যেক বছরই উপযুক্ত প্রার্থীকে পাওয়া যায়নি বলে শেষপর্যন্ত তাকেই নির্বাচিত করতে হয়েছে।” প্রত্যেকবার পরাজিত করে মা দুর্গা স্বামী মহেশ্বরের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, “তোমাদের হাতে ওই বিকল্পটা আছে বলেই হয়তো আর কাউকে নির্বাচিত করতে পারছ না।”
কিন্তু এবারও গত একমাস ধরে দেবতাদের নিয়ে সংগঠিত ইন্টারভিউ বোর্ড উপযুক্ত প্রার্থীকে পাচ্ছে না। এমন চূড়ান্ত সংকটকালে বিষ্ণু মহেশ্বরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মহিষাসুর কোথায়?”
মহেশ্বর বললেন, “আমার সহধর্মিণী চাইছেন না বলে আমি তাকে অন্য ইন্টারভিউ-এ পাঠিয়েছি।”
“ডাকো।” আদেশ দিলেন বিষ্ণু।
“আমি মুখে ডাকলে সে আসবে না।”
“তবে?”
“সব দেবতাদের তাকে মনে মনে স্মরণ করতে হবে।”
বিষ্ণুর আদেশে দেবতারা মহিষাসুরকে স্মরণ করতে শুরু করলেন। অবিলম্বে ইন্টারভিউ দিতে হাজির হল মহিষাসুর। শুরু হল সেই গতানুগতিক প্রশ্নোত্তরের পর্ব।
ব্রহ্মা জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি?”
“যুদ্ধে ডিপ্লোমা।”
“কি কি জানো?”
“যা শিখেছি ডিপ্লোমা কোর্সে―যুদ্ধ, মারামারি।”
“কোনো এক্সট্রা-ক্যারিকুলার অ্যাকটিভিটি?”
“ড্রাম বাজানো।”
“কত ঘণ্টা কাজ করতে পারবে?”
“শুধু রাতে, সে যত ঘণ্টারই রাত হোক।”
“কেন?”
“দিনের আলোতে আমি জ্বলে যাই।”
“তোমার শক্তি কি?”
“একসঙ্গে পাঁচশ লাড্ডু খেতে পারি।”
“এটা শক্তি নয়, দুর্বলতা।”
“তাহলে নোট করুন, খাওয়ার শক্তি।”
“উত্তরটা তবু সঠিক হল না।”
“বারবার মায়ের পেট চিরে বেরোতে পারি, তাঁকে মেরে ফেলতে পারি; বারবার-মায়ের পেটের মধ্যে ঢুকে যেতে পারি, তাঁকে বাঁচিয়ে দিতে পারি; এবং তাঁর পেটেরক্ষত কোনোরকম সেলাই ছাড়াই ঠিক করে দিতে পারি।”
“আর কিছু?”
“আমি খুব ডাউন-টু-আর্থ…মানে মাটির ভেতর থেকেও বেরোতে পারি।”
“কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টে কেমন?”
“খুব ভালো।”
“টিমওয়ার্ক করতে পারো?”
“আমি সবসময় দশটা মাথাকে সঙ্গে নিয়ে আসি।”
“মাইনে কত চাইছ?”
“মাসে এক কড়াই খিচুড়ি আর আনলিমিটেড পুজোর ভোগ।”
“জানো তো এটা অস্থায়ী কাজ?”
“জানি।”
“সুতরাং শুধু পুজোর ছ’দিনই এক কড়াই খিচুড়ি আর আনলিমিটেড ভোগ পাবে।”
“ও হো। ভুলে গিয়েছিলাম। ঠিক আছে।”
“এই নাও, অফার লেটার সাইন করো।”
“আপয়েন্টমেন্টম লেটার কখন পাবো?”
“মহালয়ার পরদিন।”
108 total views, 4 views today