” সৌদামিনীর সংসার “

কলমে – নবলতা শীল

— মাষ্টারমশাই যোগিন্দ্রনাথ বাবু ছেলের বিয়ে,নিজেই দেখেশুনে  দিচ্ছেন ।

–অনেক বড় বংশের মেয়ে সৌদামিনি ,লেখাপড়া বেশী করতে পারে নি ,তার বাবার মৃত্যুর জন‍্য।

–ছেলে নরেন্দ্রের মত ছিল না,তার বাবা বললেন এ মেয়ে লক্ষী ।  বাবার দেখা মেয়ে তাই,মুখে কিছু  না বলে বিয়ের পিড়িতে বসলেন।।

–সে একটা সরকারী অফিসের কেরানী।সামান্য মাইনে পান।

–বিয়ে হয়ে গেল ,নরেন্দ্র আর সৌদামিনির ।

— শ্বশুরবাড়িতে সৌদামিনিকে ডাকে সদু বলে,সবাই খুব ভালো বাসে।

— ছেলে নরেন্দ্র, যোগিন্দ্রনাথ বাবুর হাতে বেতনের সব টাকা  দিয়ে দেয় হাত খরচের কিছু টাকা রেখে ।

–সদু এ বাড়িতে আসার পর শাশুড়ি বললেন ,এ  সংসার তোমার, তুমি বুঝে শুনে নাও,আমার বয়েস হয়েছে, আমি এখন আর পারি না।সে মাথা নেড়ে সন্মতি জানায়।

–সদুর ইতিমধ্যে একটি ছেলে  ও মেয়ে হয়ে গেল।

— যোগিন্দ্রনাথ বাবু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন।সদুকে ডেকে বললেন , আমার ডাক এসে গেছে মা, এবার এই সংসারের  সব দায়িত্ব তোমার।

–তোমার শ্বশুরী মা সব ভালো বোঝেন না,নরুটা ও মায়ের মতন।রোজগার ও বেশী না ,তুমি বুঝেশুনে চালিও সংসারটা মা।

— এর কয়েকদিন পর উনি মারা গেলেন।

–কাজকর্ম মিটে যাবার পর ,সংসারের সব দায়িত্ব পড়ল সদুর উপর।

-বাজার,দোকান,ইলেকট্রিক বিল,যাবতীয় সব ।

–ছেলে মেয়ে স্কুলে ভর্তি হল,দেওয়া নেওয়া সদুই করে‌।সাথে অন‍্য কাজ।

–তার স্বামী কোন দ্বায়িত্বে নেই, বললে বলে তুমি যা ভালো বোঝ তাই কর।আমি সকালে বেড় হই ,রাতে ফিরি কখন দেখব বল ?

— সদু হাসি মুখে সব সামলে নেয়।

–শ্বশুরমশাই মারা যাবার আগে কিছু টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন ,সদুর কাছে ,

শ্বাশুড়ী মাতার অনুমতি নিয়ে ,বাড়িতে কাপড়,সায়া,চুরিদার, নাইটি কিনে বিক্রি করতে লাগল,বেশ ভালো  চলতে লাগল।

–মেয়ে বি এ পাশ করল।

ছেলে ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।

–মেয়ের ভালো সমন্ধ আসল ছেলের কোন দাবি নেই ।

–নরুবাবুর মাথায় হাত,কবে ছেলেমেয়ে এত বড় হল,মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে।সে তো কখন ফিরে দেখেনি,কিভাবে চলছে সব।

–বলল সদু কি হবে এখন? তার মা বললেন তোর বাবা মারা যাবার পর কি ভাবে চলে সংসার দেখেছিস ?  সামান্য কটা টাকা দিয়ে ,দায়িত্ব শেষ করেছিস।

— ছেলেমেয়েরা ,কি করছে দেখেছিস।

–হাকরে মায়ের কথা শুনল। অফিস ছুটি নিবি কাল,এই ছেলের সাথে আমার নাতনীর বিয়ে দেব।

–টাকা কোথায় পাব।কাল বৌমার সাথে ব‍্যাঙ্কে যাবি।

ব‍্যাঙ্কে ?? সদু টাকা পাবে কোথায় ?

–বৌমার বিজনেস আছে ,কোথায় ? আয় এদিকে আমার সাথে,তোর বাবা মারা যাবার পর ও ঘরে গেছিস কখনো ?

–গিয়ে দেখলেন , নানারকম  শাড়ি ,জামা,আর অনেক রকম,

–এসব তোমার বৌমার ?

আমি অনুমতি দিয়েছি,তোর বাবা কিছু টাকা দিয়েছিল ,তাই দিয়ে এই ব‍্যবসা ।

–সদুর টাকাতে মেয়ের বিয়ে হল।যা তার স্বামী কোনদিন ভাবে নি।

— ভাবলেন বাবা বলেছিলেন এ মেয়ে লক্ষী, সত‍্যিই তাই ,শুধু বললেন , কথায় আছে—-

“সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে”।

–শ্বশুরীমাতা বললেন এ আমার —

 “সৌদামিনির সংসার।”

 243 total views,  6 views today