“নীলা”

কলমে- নবলতা শীল

 

এক কাপ চা দেবে নীলা ?
হ্যাঁ দিচ্ছি, হয়ে গেছে,
টেবিলে নিয়ে এসো তাহলে।
চা হাতে দিতেই বলল –
তোমারটা কই? নিয়ে এসো।
আমার! আমি তো টেবিলে বসে কোনদিন চা খাইনা । চল্লিশ বছর হয়ে গেল এবারের বউ হয়ে এসেছি, কোনদিন টেবিলে বসে খাইনি, আজ বলছো ? কেন গো আমাকে হঠাৎ কি দরকার।
-এভাবে বলছ কেন ?এইসবে মেয়েটার বিয়ে হল ছেলেটাও বাইরে চলে গেল বউ নিয়ে মাও চলে গেল, এখন এত বড় বাড়িতে আমি আর তুমি মাত্র দুজন ।
না গো রান্নাঘরে বসেই খাই ।
এখন বসা যাবে না গো ভাত বসানো আছে, তোমার আবার টাইমে খাবার অভ্যাস।
তখন অফিস ছিল একরকম। এখন আর ওসব মানবো না।
-ও আচ্ছা , তাহলে বোনকে আসতে বল। সে তো সারা জীবনই আমাকে জ্ঞান দিয়ে গেল। সংসার কিভাবে চালাতে হয়। তোমাকেও বলেছে পরের বাড়ির মেয়েদের বেশি আস্করা দিবি না। তাহলে মাথায় উঠে বসবে। তোমার ঘরের কাজ করে গেছি, কোনদিন জানতেও চাওনি আমি কি চাই।
এত অভিযোগ তোমার ?
তা কি করে শুনবে, তোমার তো আমাকে প্রয়োজন , তোমার শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিছানায়। আমার ভালো-মন্দ আমার কি ভালোবাসি আমি কি চাই। তুমি কিন্তু জিজ্ঞাসা করোনি।
সে হয়তো করিনি কিন্তু এখন আমরা নতুন করে শুরু করি।
না গো আমি আর চাই না।
তোমার সংসারের সব দায়িত্ব কর্তব্য আমার শেষ। তোমার ছেলে মেয়েকে মানুষ করে দেওয়া তাদের বিয়ে দেওয়া তাদের পড়াশোনা শেখানো, স্বাবলম্বী করে তুলেছি। এখন আমার দায়িত্ব শেষ ‌।
কি করবে তাহলে ? আমি মায়ের কাছে গিয়ে থাকব ।
মানে, মাকে এখানে নিয়ে এসো।
সনন্দ বাবু নতুন করে সুর তুলেছো মনে হয়।
তোমার ছেলে-মেয়ে , মায়ের অসুবিধা হবে, মায়ের বয়স হয়েছে। আমিও একমাত্র মেয়ে ছিলাম। সব জেনেশুনেই তুমি বিয়ে করেছিলে, আমাদের ভালোবাসার বিয়ে, তুমি কোনদিন বলোনি আমার মা এখানে এসে দুদিন থাকুক। সব সময় সংসার সামলেছি।
তোমার মায়ের আপত্তি ছিল। তুমি, এমনই মানুষ তার উপরে কখনো কথা বলতে পারোনি। তোমার বোন পর্যন্ত সব সময় এই সংসারে মাথা ঘামিয়েছে।তার সংসারের কথাও তো আমি জানি তার ছেলে বউতো দু চোখে দেখতে পারেনা। তার স্বভাবের জন্য, এখন ছেলের বউকে শাসন করুক। দেবে মুখে যামা ঘসে। তোমার ভাইটি তো আর তোমার মত মেনিমুখো না। যে নিজের কোন দায়িত্ব থাকবে না তার বউকে কিছু বললে, সেও মাকে ছেড়ে না। সে বলেছে শুনেছি তুমি এটা মামাবাড়ি পাওনি। মামিকে অনেক কথা শুনিয়েছো আমার বউকে যদি ভালো না ভালো লাগে তবে তুমি আলাদা থাকতে পারো আমার সংসারে মাথা ঘামাবে না। এখন বোনকে নিয়ে এসে রাখো তোমার বাড়ি।
নীলা কি সব বলছো ? একদম চোখ রাঙিয়ে কথা বলবে না। ছেলেমেয়ে দুটোর জন্য এতদিন চুপ করে ছিলাম। আর না। আমার মায়ের খুব শরীর খারাপ আমি এখন সেখানে গিয়ে থাকব। তুমি এ বাড়িতে দিদিকে এনে রাখো। আমি আগামীকালই চলে যাব সকালে।ঘরের বউরাও মানুষ গো। তাদেরও সংসারে মতামতের দরকার আছে। তোমার মা যেমন এই বাড়ির বউ ছিল আমিও তো ছিলাম। সেখানে তার কথা ছিল শেষ কথা। আমি সংসারের দাসী-বাদী ছিলাম আর কিছু না। আমি এখন স্বাধীন ‌। ডিভোর্স লেটারটা সময়মতো পেয়ে যাবে।

 341 total views,  18 views today