“দুঃসহ জীবন”

কলমে- শ্রী সুবোধ চন্দ্র সরকার

আইনজীবী, এম,কম, এলএল,বি ,

ফোন – 9477443110

 

শ্যামলীর জন্মের আগে তার বাবা আত্মহত্যা করে। শ্যামলী এখন বিবাহিত কিন্তু শ্বশুর বাড়ীতে  থাকে না। তার মায়ের এবং তার জীবন যেরকমটি হওয়ার কথা ছিল সে রকম হয়নি, তবে শ্যামলীকে বি, এ, পর্যন্ত পড়িয়েছে ওর মামা। তার মা তৃপ্তি মামার  বাড়িতে চলে এসেছে বাধ্য হয়ে।এখানেই দাদার সংসারে নিজের মতো করে সব কাজকর্ম বৌদির সঙ্গে করে। তৃপ্তির স্বামী মারা যাওয়ার ঘটনা একটু পাঠকদের জানানো দরকার। ধনীর ছেলে বিভাসের সঙ্গে শ্যামলীর মা তৃপ্তির ধুমধাম  করে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের ছয় মাস পর তৃপ্তি সন্তান সম্ভবা হয়ে গিয়েছিল। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মিল-মিশ ছিল। হঠাৎ একদিন বিভাস বাথরুমে ঢুকেছে এমন সময় বিভাসের ফোনটা বেজে উঠল তৃপ্তি ফোন শুনতে গেলেও ওপার থেকে একজন মহিলা কন্ঠ বলল, হ্যালো বিভাস দা আমি চলে এসেছি তুমি তাড়াতাড়ি এসো। তৃপ্তি  বললো ও এখন বাথরুমে, আপনি কে বলছেন আমি করবী বলছি, ওর বন্ধু। আপনি কে বলছেন? যখন শুনলো ওনার স্ত্রী কথা বলছি, ওপার থেকে ফোনে কথা বলছে কি বলছেন উনার স্ত্রী। মিথ্যা কথা বলার জায়গা পাওনি? কে মজা করছেন বলুন তো। বলতে লাগলো বিভাস দার সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আমি ওনার বাগদত্তা। সত্যি করে বলুন তো? এমন সময় বিভাস বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে এবং ফোনটা একদম কেড়ে নিয়ে বলে কে করবী? ফোনটা রাখো, আমি যত তাড়াতাড়ি পারি আসছি। ফোন ছেড়ে দিয়ে বলল, করবী টা খুব দুষ্টু, জানো; আমার অফিসে কাজ করে ,বলেছিল  বৌদিকে দেখালে না, দেখো বৌদির সাথে কেমন মজা করি। চলো, আমাকে যেতে হবে। খুব হালকা করে কথাটা বলে তৎক্ষণাৎ চলে গেল। খাবার পর বিভাস অফিস চলে গেল। কিন্তু তৃপ্তির মনটা তোলপাড় করতে লাগলো। সন্ধ্যায় বিভাস ফিরে এলে তৃপ্তি ও বিভাস  তর্কাতর্কি আরম্ভ হলো। তর্কা তর্কি   হতে হতে এমন জায়গায় পৌঁছালো রাগে দু:খে তৃপ্তি বাড়িতে আনা ইঁদুর মারা বিষ জলে মিশিয়ে খেয়ে ফেলল, বিভাস বিন্দু মাত্র বাধা দেবার সময় পেল না। বিভাস হতভম্ব ও কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে চারতলার ওপর থেকে রাস্তায় ঝাঁপ দিল। চার তলা থেকে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়ার পর নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে গেল। লোকজন তাকে ধরাধরি করে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বাবু মৃত ঘোষণা করলেন।

বাঁচানো গেল না। মাথায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্যই মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হল। এই সমস্ত কথা তার মায়ের কাছে শ্যামলী শুনেছিল। তৃপ্তি দাদা

বৌদির কাছে ফিরে গিয়েছিল। সেখানেই শ্যামলীর জন্ম হয়েছিল এবং ওখানেই মা মেয়ে থেকে গিয়েছিল। শ্যামলীর বিয়ে ঠিক হল এবং খুব ধুমধাম করে বিয়ে হল। মাস দুই শ্বশুরবাড়িতে শান্তিতে ছিল। কিন্তু অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়। শ্যামলীর সাথে শ্বশুরবাড়ির অশান্তি হতে লাগলো তার স্বামীর ব্যবসা করার জন্য তিন লাখ টাকা চাইল। কিন্তু টাকা কে দেবে? তার বাবা নেই মামার বাড়িতে মানুষ। কিন্তু স্বামী শশুর শাশুড়ি কিছুতেই মানলো না।।  তার সাথে কথাবার্তা বন্ধ করে দিল। শ্বশুরবাড়ি থেকে এক সময় তাড়িয়ে দিল শ্যামলীর শ্বশুর- বাড়িতে  থাকা হলো না। সে একটা গাড়ি করে মামার বাড়িতে ফিরলো । এখন,

সে একটা অফিসে চাকরি পেয়েছেএবং মা ও মেয়ে আলাদা বাড়ি ভাড়া নিয়েছে এবং সেখানে তারা থাকতে লাগলো। শ্যামলী মা তার মা কে বলেছিল,  আজ আমরা স্বাধীন এইটাই আমাদের স্বর্গপুরি।

 242 total views,  6 views today