বাস্তুশাস্ত্র মতে বাড়ির কাঠামো নির্মাণে শুভময় জীবন
বাস্তু আচার্য্য দেবযানী
9051039387
ddebjani63@gmail.com
প্রকৃতপক্ষে বাস্তুশাস্ত্র হল ভারতের প্রাচীন ‘বৈদিক যুগে’র বিজ্ঞান যার নির্দেশনায় একটি নির্দিষ্ট জমিতে কাঠামো নির্মাণ করা হয়। একটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও সুখকে সরাসরি একটি বাড়ি নির্মাণের সাথে সংযুক্ত করা হয়। বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে বাড়ির আকৃতিতে কখনই অনিয়মিত নকশা থাকা উচিত নয়। অনিয়মিত নকশা নেতিবাচকতাকে আকর্ষণ করে। বাড়ি নির্মাণ সঠিক নকশা মেনেই বানানো উচিত যা সমৃদ্ধি, শান্তি ও সুস্বাস্থ্যকে আকর্ষণ করে। কিছু মানুষের জন্য এই নীতিগুলি আজও প্রাসঙ্গিক। তারা বিশ্বাস করেন ‘বাস্তুশাস্ত্র’ হল একটি বিজ্ঞান যা পৃথবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং চৌম্বকীয় শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
বাস্তুশাস্ত্র মতে বাড়ির কাঠামো নির্মাণে আমাদের জীবনে সুপ্রভাব
বিশ্বের সম্পূর্ণ প্রাণীজগত ও মনুষ্যজগত যে পরিবেশে বসবাস করে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে বাস্তুশাস্ত্রের হস্তক্ষেপ শুধুমাত্র গৃহের বিশৃঙ্খলতা কমানোর জন্যই নয়। একটি স্থাপত্যে বসবাসকারীদের জীবনের উন্নতি সাধনের ব্যাপারেও সচেতনতা রাখা উচিত। আমরা যদি আমাদের সম্পূর্ণ ভৌত জগতের দিকে লক্ষ্য রাখি, সেটা আমাদের শরীর হোক বা একটি তৃণ বা একটি গৃহ সমস্তটাই একটি জ্যামিতি সম্মত। আর এই জ্যামিতি সম্মত বাড়ির কাঠামো নির্মাণে আমাদের জীবনের সুপ্রভাবগুলি হল –
(১)আর্থিক সমৃদ্ধির উন্নতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
(২) শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখে।
(৩) কর্মজীবনে স্থিতিশীলতা আনে।
(৪) পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন সৃষ্টি করে।
(৫) আধ্যাত্মিক জ্ঞান বৃদ্ধি করে।
(৬) বৃহত্তর মানসিক শান্তি এবং দক্ষতা আনয়ন করে।
শুভ গৃহের জন্য কিছু বাস্তু টিপ্স
(১) বাড়ি নির্মাণের জমিটি একটি বর্গক্ষেত্র বা আয়তক্ষেত্র হওয়া বাঞ্ছনীয়।
(২) মূল দরজাটি জমির উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়া শুভ।
(৩) জীমির উত্তর-পূর্ব দিক ঢালু হওয়া উচিত দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের তুলনায়।
(৪) বাড়ির প্রবেশ দ্বারের ফাঁকা দেওয়ালে ভগবান গণেশের ছবি লাগানো গৃহে সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে।
(৫) দক্ষণ-পশ্চিম বা দক্ষিণ, পশ্চিম দিকে সিঁড়ি হওয়া উচিত। উত্তর-পূর্বে সিঁড়ি হওয়া উচিত নয়।
(৬) বাড়ির উত্তর-পূর্বে পূজার ঘর রাখলে গৃহের সমস্ত নেতিবাচক শক্তিকে গৃহের বাইরে বের করে ইতিবাচক শক্তিকে আনয়ন করে।
(৭) বাড়ির মালিকের শয়নকক্ষ দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে রাখতে হবে, এটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের স্থিতিশীলতা এবং সুখের বাতাবরণ তৈরী করবে।
(৮) কর্মজীবনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেতে বাড়ির উত্তর দিকে ‘ভগবান কুবের’-এর মূর্তি স্থাপন করা ফলদায়ক।
(৯) লিভিংরুমে আয়না উত্তর দিকে রাখা উচিত। ক্রিষ্টালের ঝাড়বাতি দিয়ে লিভিংরুম সাজালে এটি ইতিবাচক শক্তি বাড়িয়ে প্রাচুর্যের উজ্জ্বলতা তৈরী করে।
(১০) ইতিবাচক শক্তি প্রবাহের জন্য বাড়িতে অ্যাকোরিয়াম রাখা খুবই শুভ ফলদায়ক। ঘরের উত্তর-পূর্ব দিকে অ্যাকোরিয়াম রাখলে আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়।অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অ্যাকোয়ারিয়াম রাখলে সুখ ও শান্তি বৃদ্ধি করে। বাড়ির লিভিংরুম বা ড্রইংরুমেও অ্যাকোয়ারিয়াম রাখা যায়।
(১১) ঘরের উত্তর দিকে ভগবান বুদ্ধের একটি মূির্ত স্থাপন করলে বাড়িতে শান্তি ও সম্প্রীতি বিরাজমান থাকে।
(১২) বাড়ির বসার ঘরটি অনেকটা বই-এর কভারের মতো, যা একটি বাড়ির গল্পকে বর্ণনা করে। এখানেই বেশিরভাগ পারিবারিক এবং সামাজিক সমাবেশ ঘটে তাই বসার ঘরের সমস্ত কোণগুলি ভালোভাবে আলোকিত করা উচিত। এর প্রত্যেকটি কোণ ইতিবাচক শক্তি প্রবাহের উৎস হিসাবে কাজ করে।
(১৩) ভালো ঘুমের জন্য শয়নকক্ষে একটি ল্যাভেন্ডার গাছ রাখা খুবই ভালো কারণ এটি সেরা প্রাকৃতক স্ট্রেস রিলিভার।
(১৪) বাথরুমের দেওয়াল বা দরজার সাথে লাগোয়া ঘরের বিছানা সারিবদ্ধ ভাবে রাখা উচিত নয়। এটি শোবার ঘরের নেতিবাচক শক্তিকে বৃদ্ধি করে।
আবাশিক থেকে বাণিজ্যিক সম্পত্তি যেকোনো কাঠামো নির্মাণের জন্য বাস্তুশাস্ত্র অপরিহার্য, পাঁচটি উপাদান (পৃথিবী, জল, আগুন, বায়ু এবং মহাকাশ)-এর ভারসাম্যহীনতা বেশিরভাগ রোগের কারণ। বাড়ির কাঠামো নির্মাণে যেমন এই পাঁচটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ তেমনই এই প্রতিটি উপাদান শরীরের কাঠামোর জন্যেও দরকারি। বাড়ির কাঠামো নির্মাণের সময় এই পাঁচটি উপাদান সঠিকভাবে স্থাপনের সাথে মালিক তথা গৃহের সকল সদস্যদের সারাজীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে। আমরা সকলেই ইতিবাচকতা, সুস্থভাবে, শান্তি, আনন্দময় স্মৃতিতে আলোচিত গৃহে বসবাস করতে চায়। আর এটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রাচীন স্থাপত্য বিজ্ঞান বাস্তুশাস্ত্র যা অতি প্রাচীনকাল থেকেই স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য ও সঠিক সমীকরণের মাধ্যমে আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যকর মহাজাগতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।
রোগনাশক টোটকা
রবিবার বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকী দিনগুলিতে সকালে স্নান সেরে অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় মিষ্টি ও জল দান করতে হবে। পুরুষ হলে অশ্বত্থ গাছটিকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করতে হবে। মহিলাদের করতে হবে না এরপর হাত জোড় করে রোগ থেকে মুক্তি লাভের প্রার্থনা জানিয়ে অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে হবে। এই উপাচারটি ২১ দিন করলে রোগী ধীরে ধীরে আরোগ্য লাভ করবে।