ওজন নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ হল খাদ্যাভ্যাস। হঠাৎ খাবার খাওয়া কমিয়ে দিলে স্বাস্থ্য ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন।
ওজন ঠিক রাখতে কীভাবে ও কোন ধরনের খাবার খাবেন ঃ-
ক্যালোরি আমাদের দেহে শক্তি পরিমাপের উপায়। যদি ওজন বাড়াতে চান, তবে প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হয়, তার থেকে বেশি পরিমাণ ক্যালোরির সমান খাবার খেতে হবে।
অন্যদিকে যদি ওজন কমাতে হয়, তবে প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হয়, তার থেকে কম পরিমাণ ক্যালোরির সমান খাবার খেতে হবে।
কোন কোন খাবারে ক্যালোরি কম থাকে তা জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেতে হবে।
প্রোটিনজাতীয় খাবার
প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি খেয়ে ওজন কমানোর পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী। প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে তাড়াতাড়ি তৃপ্তি আসে সঙ্গে ক্ষুধার অনুভূতি কমে এবং আমাদের শরীরের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার হার বাড়ে। কারণ প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাবার হজম করতে ও মেটাবলিজম হতে বা খাবার ভেঙে শক্তি উৎপাদনে বা অন্যান্য কাজে অনেক বেশি শক্তি ব্যয় হয়।
প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাবার হজম বা মেটাবলিজমে বেশি শক্তি অর্থাৎ ৮০-১২০ ক্যালোরি শক্তি বেশি ব্যয় হয়। কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ ভাগ প্রোটিনজাতীয় খাবার খায়, তবে সে প্রতিদিন ৪৪১ ক্যালোরি সমপরিমাণ খাবার কম খেল।
তাই খাবারে পরিমিত পরিমাণ প্রোটিন যোগ করে একদিকে যেমন শরীরে ক্যালোরি কম প্রবেশ করে, তেমনি ক্যালোরি খরচও বেশি হয়। প্রোটিনজাতীয় খাবার আমাদের ক্ষুধার তীব্রতা কমিয়ে দেয়।
যারা না খেয়ে ওজন কমাতে চান, তাদের মাঝে মাঝে তীব্র ক্ষুধার অনুভূতি হয়। এর ফলে বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারেন না, এর ফলে ওজন কমানোর বদলে আবার ওজন আগের মতোই বাড়তে থাকে। প্রোটিনজাতীয় খাবার এ ধরনের হঠাৎ ক্ষুধার অনুভূতি কমিয়ে দেয়।
খাবারে যদি ২৫ ভাগ প্রোটিন বা আমিষ থাকে, তবে এই প্রোটিন বা আমিষ মস্তিষ্কে খাবারের চিন্তা ৬০ ভাগ কমিয়ে দেয় এবং রাতের গভীরে বা সকালের নাস্তা খাওয়ার ইচ্ছা বা প্রবণতা প্রায় ৫০ ভাগ কমে যায়।
ওজন কমানোর কর্মসূচি কার্যকরী করতে এবং কম পরিশ্রমে ওজন কমাতে হলে, খাবারে কমপক্ষে ৩০ ভাগ প্রোটিন বা আমিষজাতীয় খাবার খেতে হবে। এটা ওজন কমাতে সাহায্য করবে সঙ্গে ওজন যাতে আবার না বাড়ে তা নিশ্চিত করবে।
চিনিযুক্ত পানীয় বর্জন
সোডা, ফলের রস, চকোলেট , দুধ ও অন্যান্য সফ্ট ড্রিঙ্কস যেমন কোকাকোলা, ফানটা, মিরিন্ডা, পেপসি যেখানে অতিরিক্ত চিনি বা সুগার যোগ করা হয় তা ক্ষতিকর ও বর্জনীয়। সুগার বা চিনির মাধ্যমে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি ঢোকে ও তা আমাদের ওজন বাড়ায়।
শিশুদের মোটা হওয়ার ঝুঁকি ৬০ ভাগ বেড়ে যায়, যদি প্রতিদিন সুগারযুক্ত কোমল পানীয় পান করে। ওজন বাড়ার পাশাপাশি এ সুগারযুক্ত কোমল পানীয় নানাবিধ শারিরিক সমস্যাও তৈরি করে।
ফলের রস স্বাস্থ্যকর কিন্তু জুসের সঙ্গে যদি অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয়, তবে তা ক্ষতিকর। এসব সুগারযুক্ত পানীয়র আসলে কোনো লাভজনক দিক তো নেয়-ই বরং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর।
পর্যাপ্ত জল পান
ওজন কমানোর জন্য অন্যতম উপায় হচ্ছে রোজ বেশি পরিমাণ জল পান করা। বেশি পরিমাণ জল পান করলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ হয়। প্রতিদিন ৪ গ্লাস বা ২ লিটার জল পান করলে ৯৬ ক্যালোরি শক্তি অতিরিক্ত খরচ হয় ।
এ ছাড়া খাবার আগে খালি পেটে জল পান করলে তাতে পেট আংশিক ভর্তি হবে এবং ক্ষুধা কমবে ও কম পরিমাণ খাবারে পেট ভরে যাবে, তাতে স্বাবাবিক ভাবেই কম ক্যালোরি শরীরে ঢুকবে।
১২ সপ্তাহব্যাপী এক গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার ১-২ ঘণ্টা আগে ১-২ লিটার জল পান করলে ৪৪ ভাগ বেশি ওজন কমে, তাই ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর ও কম ক্যালোরিযুক্ত খাবারের পাশাপশি বেশি পরিমাণে জল পান করা কার্যকরী।
আমরা যখন কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেলে, আমাদের শরীর শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে চায়, শক্তি কম খরচ করে শক্তি জমা রাখতে চায়। তাই দীর্ঘমেয়াদি ডায়েটিং করলে বা কম খেলে আমাদের শরীরে শারীরবৃত্তীয়জনিত ক্যালোরি খরচ কমে যায়।
এ ছাড়াও আমাদের শরীরের মাংসপেশিগুলো শুকিয়ে যায়, তাই ওজন কমানোর জন্য বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার কম খাওয়ার পাশাপাশি মাংসপেশি ঠিকভাবে রাখার জন্য ভারোত্তোলন বা ওজন লিফটিংও করতে হবে, এতে মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ হবে ও মেটাবলিক কার্যক্রম ঠিক থাকবে।
আমরা শুধু শরীরের চর্বিই কমাতে চাইব না, আমাদের শারীরিক গঠনও যাতে ঠিক থাকে, আমাদের যাতে অসুন্দর না লাগে, শুকনা না লাগে, বরং দেখতে ভালো যাতে লাগে। ওয়েট লিফটিংয়ের পাশাপাশি নিয়মিত এরোবিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা ও জগিং করতে হবে।