হাবেভাবে মানুষ চেনা

প্রফেসর ডক্টর কুশল সেন

অধ্যাপক (ফলিত সংখ্যাতত্ত্ব), Astrological Research Institute of Krishnamurti Paddhati (ARIKP)

সদস্য, মার্গদর্শক মন্ডল, ভারতীয় বৈদিক জ্যোতিষ সংস্থানম্‌, বারানসী

e-mail :  kooshoeg@gmail.com

প্রত্যেক মানুষই নিজের দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু করে (যা অনেক সময়ই নিজের অজান্তে) যেগুলি অল্প একটু মন দিয়ে নিরীক্ষণ বা পর্যবেক্ষণ করলেই সেই ব্যক্তির বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি সহজেই ধরা যায়। এ্‌ই শাস্ত্রের নামই ‘Gesture Reading। মনোবিজ্ঞানের গবেষকদের মতে মানুষ বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ বা কমিউনিকেশন রক্ষা প্রধানতঃ লেখা, বলা ও হাবভাবের মধ্যে। এই হাবভাব বা বডি-ল্যাঙ্গুয়েজের মাত্রাই সর্বোচ্চ  অর্থাৎ ৭০ শতাংশ। বাকী ৩০ শতাংশ কেবলমাত্র লেখা ও বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

মানবদেহের কোন অংশ কোন ভাব প্রকাশ করে : কোনও মানুষের মুখ দেখে মনের অবস্থার প্রকাশ পাওয়া যায়। মন ছাড়াও শরীরের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যন্ত্রগুলির কার্যকলাপের হদিশ মেলে মুখের মধ্যে। মুখের এক একটি অংশ থেকে প্রকট হয় এক একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

কপাল –  গঠনমূলক চিন্তা, ইনটিউশন, বিচারক্ষমতা, কল্পনাপ্রবণতা :

চোখ –  আবেগ প্রকাশের ক্ষমতা, আনন্দ, নতুনত্বের অনুসন্ধান, রসবোধ,

থুতনি –  দৃঢ়তা, অধ্যবসায়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, ইচ্ছাশক্তি শারীরিক প্রেম।

ভ্রু – চিন্তার গভীরতা, অমায়িকতা, সহ্যশক্তি, নিজস্বতা, হিংসা।

নাক –  ঔদ্ধত্য, শৈল্পিক গুণাবলী, অধিকারের ইচ্ছা, উদ্যম।

নাকের অগ্রভাগ –  সাহস, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, সন্দেহ প্রবণতা।

নাসাছিদ্র-  নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা, গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষমতা, সতর্কতা।

ঠোঁট –  প্রেম ভালোবাসা, ঘৃণা, অহঙ্কার, মনসংযোগ, নিষ্ঠুরতা, আতিথেয়তা।

কান –  অপরাধ প্রবণতা, ধ্বংস প্রবৃত্তি, জীবনীশক্তি, একগুয়েঁমি।

চুল –  শারীরিক ক্ষমতা, যৌনতা।

মুখই মনের চারিত্রিক দর্পণ –  আমাদের মনের, শরীরের সমস্ত অনুভূতির প্রতিচ্ছবি ধরা দেয় আমাদের মুখে। কারও মুখ দেখে প্রশান্ত, কারও উজ্জ্বল, কারও বা অস্থির, কারও লাবণ্যময় ইত্যাদি মনে হয়। ‘মুখ দিয়েই যায় মানুষ চেনা’ – একথা সর্বতোভাবে  সত্যি। হাজার চেষ্টাতেও মুখের মধ্যে মনের, শরীরের কথা লুকানো যায় না। ইংরাজীতে এই বিজ্ঞানকে ফিজিওনমি (Physiognomy)  বলা হয়। কিন্তু ইটালীয় পন্ডিত Giambattista Della Porta Physiognomy’র জনক বলা হয়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এর চর্চা করে আসছে। সভ্যতার আদিতেই অ্যারিষ্টটল, প্লেটোর মত দার্শনিক ও পন্ডিতেরা তাঁদের মতামত ব্যক্ত করে গেছেন। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত প্রথম গবেষণা করেছিলেন ল্যাভেতার ও চার্লস ডারউইন। প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতাই আমাদের মানসিকতার মুখোমুখি হবেন, তার ফলে তাঁর মনোভাবের পরিবর্তন হবে এবং তার ছাপ তাঁর মুখেই দেখতে পাওয়া যায়। যদিও জীবন কোনও নির্দির্ষ্ট  অন্ত বা সূত্র মেনে চলে না, তাই মুখ দেখে বা হারভাব দেখে মানুষের চরিত্র বিচার করা কখনও নির্ভুল বিজ্ঞান হতে পারে না। কিন্তু ইটালিয় পন্ডিত Giambattista Della Porta তাঁর জীবনের সিংহভাগ ফিজিওনমির (Physoignomy) চর্চা ও গবেষণায় ব্যাতীত করেছিলেন।

সাধারণতঃ মানুষের কয়েকটি হাবভাব :

একপাশে কাত হয়ে ঘুমালে –  পাশাপাশি জড়িয়ে একপাশে কাত হয়ে ঘুমানোর মধ্যে অন্যের উপর নির্ভর করার মানসিকতা প্রকাশ পায়। কোন কাজ একা করার দায়িত্ব পেলে ঘাবড়ে যায়, সঙ্গে যদি অন্য কেউ থাকে তবেই এদের আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে, মনে করেন দুজন মিলে করলে কাজটা মসৃণ হবে।

গালে হাত দিয়ে থাকা –  গালে হাত দিয়ে বসে থাকলে চিন্তা কখনও একমুখী হয় না, বিক্ষিপ্ত চিন্তা মাথায় এসে ভিড় করে, কোন কাজেই পুরো মন বসে না, ভুলভাল চিন্তা মাথায় আসতে বাধ্য।

যেখানে সেখানে প্রণাম করা :  এই ধরণের মানুষ সর্বদা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, নিজের দুর্বলতম মুহূর্তে এরা ভাবে, পাশে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আছেন, যাঁকে স্মরণ করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

চোখ পিটপিট করা –  কোন গুরুগম্ভীর অবস্থায় ফেলে দিলে এদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় ফলে কমে আত্মবিশ্বাস। কারও চোখের দিকে সোজাসুজি তাকাতে পারে না।

পায়চারি করা – নিজের অজান্তে. এদের মনে একটা আশঙ্কা থাকে যে অন্য কেউ বোধ হয় গোপন কথা শুনে ফেলল। একটা অস্বস্তি ও উৎকন্ঠা সর্বদা তাড়া করে।

কথা বলার সময় নাক টানা –  এই ধরণের মানুষ কথা বলার সময় ইতস্তত করে।  ঠিকমতো সবকথা বলতে পারছে কি না বা সকলে বুঝচে কিনা সেই আশঙ্কাতে ভোগে।

তোতলামি –  অর্ন্তমুখী ভাবপ্রকাশের মানুষ, খুব প্রয়োজন না হলে মুখ খুলতে ভালবাসে না। সরল প্রকৃতির মানুষের, মনে কোন জটিলতা থাকে না। কোন ঘটনায় অতি উৎসাহী হয়ে উঠলে কথা অস্পষ্ট হয়ে যায়, তোতলামি চলে আসে।

মুখ হাঁ হয়ে যাওয়া –  খুব মনোযোগ সহকারে কোন ব্যাখ্যা বা গল্প শুনলে সাধারণতঃ এটা বোঝা যায় যে ঐ ব্যক্তি সবকথা মন দিয়ে শোনে না, কোনও কোনও ক্ষেত্রে মন দেয়। এরা খুব মনখোলা এবং উদার প্রকৃতির।

যখন তখন চুলে হাত দেওয়া –  এদের মনঃসংযোগের সমস্যা থাকে। যেকোনো ব্যাপারেই দ্বিধাবোধ থাকবে। নানারকম ভঙিমার সাহায্যে এরা নিজ বক্তব্য পেশ করার চেষ্টা করে।

পা নাচানো –  এরা জীবনের যেকোনও ব্যাপারেই খুব চিন্তা ভাবনা করে কাজ করে না বরং রোমাঞ্চপ্রবণতা থাকবে। সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতেও তার সমাধান করতে ভালবাসে এরা।

দাঁত দিয়ে নখ কাটা –  মানসিক চাপ বা উদ্বিগ্নতায় থাকে এবং সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

আঙুল মটকানো –  আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং কোনও সমস্যার হাত থেকে মুক্তি না পাওয়ার ভয়। এরা যতটা জানে, তা গুছিয়ে বলতে বা প্রচার করতে পারে না।

পকেটে হাতভরে হাঁটা –  মানুষটি সর্ববিষয়ে গোপনায়তা রক্ষা পছন্দ করে, অনেকটা রহস্যময় এবং অজানা ব্যক্তিত্ব যার সম্বন্ধে আগাম কিছু বলা দুষ্কর।

বুকের পাঁজরের কাছে হাত ভাঁজ করে দাঁনানো –  নিজের কাজে হাত না দেওয়ার প্রবৃত্তি বরং সর্বদা কর্তৃত্ব ফলাতে চাইবে।

কথা বলার সময় দু’হাত কোমরে –  দুটি কনুই বাইরের দিকে বের করা থাকলে তার মধ্যে ঔদ্ধত্য কাজ করছে।

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব বলে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে সারাদিনে বহু মানুষের সঙ্গে আলাপ হয় ও তাদের সঙ্গে সামাজিক, বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে মিশতে হয়। যে মানুষটির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠছে, তিনি যদি পজিটিভ হন তবে তাদের সম্পর্কটাও পজিটিভ হবে। তিনি নেগেটিভ হলে তাহলে সম্পর্কটা বাড়িয়ে লাভ হবে না।

উপরোক্ত নিবন্ধটি প্রফেসর ডঃ কুশল সেন-এর ‘অব্যর্থ জ্যোতিষ সিদ্ধান্ত’-গ্রন্থ থেকে গৃহীত। বইটির প্রাপ্তিস্থান ঃ-

১। কমলা বুক স্টল, ৯/১এ, রমানাথ মজুমদার স্ট্রীট, কলকাতা-৯, কলেজ স্ট্রীট

২। পতিত পাবন বুক স্টল, শ্যামাচরণ দে স্ট্রীট, কলকাতা – ৭০০ ০০৯, ফোন-9433119599

৩। সংস্কৃত পুস্তক ভান্ডার, ৩৮বি, বিধান সরণী, কলকাতা – ৬, ফোন। (033) 22411208

৪। মহেশ লাইব্রেরী, ২বি শ্যামাচরণ দে স্ট্রীট, কলকাতা – ৯, ফোন-(033)22417479

৫। স্নেহা জেমস্‌ হাউস, ২/৩৬, দমদম রোড, কলকাতা – ৭৪, ফোন – 9874694720

Loading