নিজস্ব প্রতিনিধি – সোমবার  তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে ভোট। ১৯৯১ সাল থেকে কোনও দিনই দক্ষিণ কলকাতা নিরাশ করেনি মমতাকে। এবার এই এলাকা দখল করতে মরিয়া গেরুয়া শিবিরও। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা ভবানীপুরে বাড়ি বাড়ি প্রচারও সেরেছেন। সেই কেন্দ্রের ভোটের দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। দক্ষিণ কলকাতার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে কসবা, বেহালা (পূর্ব) ও বেহালা (পশ্চিম) কেন্দ্রে আগেই ভোট হয়েছে। প্রতিবার মমতাকে যে এলাকা সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে লিড দেয়, সেই বালিগঞ্জ, কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর ও রাসবিহারী কেন্দ্রে সোমবার ভোট হবে। যদিও গত লোকসভা ভোটে রাসবিহারী কেন্দ্রে পাঁচ হাজারের কিছু বেশি ভোটে বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসু এগিয়ে ছিলেন। তাই এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করে নতুন চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাসতালুকের ভোটে তৃণমূলকে রুখতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে গেরুয়া শিবির। মমতা ও অভিষেকের বাড়ি ভবানীপুরে এবার বিজেপি প্রার্থী করেছে সদ্য তৃণমূলত্যাগী অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকে। অন্যদিকে, ঘাসফুল শিবিরও নিজেদের গড় অটুট রাখতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। তৃণমূলের দক্ষিণ কলকাতার নেতারা শুক্রবার রাতেই বৈঠকে বসেছিলেন। প্রতিটি বুথে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে ঘুঁটি সাজিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি দক্ষিণ কলকাতার ভোটে তৃণমূল যাতে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে না পারে তার জন্য বিজেপিও কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল নিয়েছে বলে খবর। গত লোকসভা ভোটে ভবানীপুর ও রাসবিহারী কেন্দ্রে তৃণমূলের আশানুরূপ ফল হয়নি। এই এলাকার অবাঙালি ভোটব্যাংক লোকসভা ভোটে বিজেপির পক্ষে গিয়েছিল। তাই এবার এই ভোটব্যাংক ফিরিয়ে আনতে মরিয়া তৃণমূল। ইতিমধ্যেই ভবানীপুর ও রাসবিহারী কেন্দ্রে অবাঙালি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে মমতা নিজে বৈঠক করেছেন। তাছাড়া বালিগঞ্জ ও কলকাতা বন্দর আসন নিয়ে তৃণমূল খুব বেশি চিন্তিত নয়। গত লোকসভা ভোটে বালিগঞ্জে তৃণমূল প্রায় ৫৫ হাজার ও কলকাতা বন্দরে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়েছিল। এবার এই মার্জিন আরও বাড়বে বলে তৃণমূলের আশা। কিন্তু রাসবিহারী ও ভবানীপুরের হারানো ভোটব্যাংক ফিরিয়ে আনাই তৃণমূলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। পিছিয়ে নেই বিজেপিও। শুধু অমিত শা নন, বিজেপির সবস্তরের নেতারা দক্ষিণ কলকাতার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচার করেছেন। অবাঙালি ভোটব্যাংক ধরে রাখতে তারাও চেষ্টার বাকি রাখছে না। কয়েকদিন আগেই বিজেপির এই রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় দক্ষিণ কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে এই এলাকার অবাঙালি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। অবাঙালি ভোটব্যাংক ধরে রাখতে তারাও একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বিজেপির কাছে ধাক্কা রাকেশ সিংয়ের গ্রেপ্তারি। রাকেশ সিং দক্ষিণ কলকাতার একটি বড় অংশে ভোটের দিন দাপিয়ে বেড়ান। গত লোকসভা ভোটে তিনি ভবানীপুর ও রাসবিহারী এলাকায় দাপিয়ে ভোট করেছিলেন। তার ফল বিজেপি পেয়েছিল। কিন্তু মাদক মামলায় ভোটপ্রক্রিয়া শুরুর আগে থেকেই তিনি জেলে। তাই এই ফ্যাক্টর বিজেপির কাছে যথেষ্ট ধাক্কার বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

মমতার গড়ের ভোটের দিকে তৃণমূল ও বিজেপির পাশাপাশি কড়া নজর রেখেছে নির্বাচন কমিশনও। কারণ, এই এলাকায় কোনও গোলমাল হলে তার দায় কমিশনের ঘাড়েই পড়বে।

Loading