নিজস্ব প্রতিনিধি- ধর্ষণ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শরদ বোবদের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। এবার তার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন ৫ হাজারেরও বেশি নারী অধিকার কর্মী, বিভিন্ন ‘প্রগতিশীল’ গোষ্ঠীর সদস্য ও উদ্বিগ্ন নাগরিক। শরদের মন্তব্যগুলোকে ‌নৃশংস বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে তাকে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি দুইটি ভিন্ন মামলায় দুইটি ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করেছিলেন শরদ। একটি মামলায় ধর্ষণের শিকার নারীকে বিয়ে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তকে। অপর এক মামলায় ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’–কেই ‘অস্বীকার’ করা হয়েছে। ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত সরকারি কর্মী মোহিত সুভাষ চাবনকে প্রধান বিচারপতি পরামর্শ দেন, ‘আপনি যদি ধর্ষণের শিকার নারীকে বিয়ে করতে চান, তাহলে আমরা আপনাকে সাহায্য করব। আর তা না–হলে আপনার চাকরি যাবে এবং আপনাকে জেলেও যেতে হবে।’

কেবল তাই নয়, এই পরামর্শ দিয়ে ওই অভিযুক্তকে এক মাসের আগাম জামিনও দেওয়া হয়েছে। নারী অধিকার কর্মীদের দাবি, প্রধান বিচারপতি ওই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, ধর্ষণে দোষ নেই, যদি ধর্ষক ওই মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়। খোলা চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘এইটা ভেবেই আমরা আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, সংবিধান বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এবং দায়িত্ব যার হাতে রয়েছে, সেই প্রধান বিচারপতিকেও নারীদেরই বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে, ‘যৌন প্রলোভন’, ‘ধর্ষণ’ ও ‘বিবাহ’–এর অর্থ কী!‌’’

তাদের আশঙ্কা, এমন বিয়ে ধর্ষণের শিকার নারীকে সব সময় চাপের মধ্যে রাখতে পারে। চাপ থেকে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।

বিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যকার জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককেও ধর্ষণ বলতে নারাজ এ বিচারপতি। অপর এক ধর্ষণ মামলায় তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ‘একজন স্বামী পাশবিক হতে পারেন। কিন্তু আইনগতভাবে বিবাহিত দম্পতির মধ্যকার যৌন সম্পর্ককে আমরা কীভাবে ধর্ষণ বলতে পারি?’ অধিকারকর্মীরা বলছেন, এমন মন্তব্যের মাধ্যমে স্বামীর দ্বারা সংঘটিত যেকোনো ধরনের শারীরিক, মানসিক কিংবা যৌন সহিংসতার ঘটনার আইনি ভিত্তি দেওয়া যাবে না। ভারতীয় আইনেও বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

সম্প্রতি কৃষক আন্দোলনে নারী কৃষকদের অংশগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রধান বিচারপতি। শুধু তাই নয়, তাদের বাড়িতে পাঠানোরও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। ওই খোলা চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে যে এই মন্তব্যের মধ্য দিয়েও নারীদেরকে ছোট করা হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, নারী অধিকার কর্মী অ্যানি রাজা, কবিতা কৃষ্ণন, কমলা ভাসিন, মীরা সঙ্ঘমিত্রা, অরুন্ধতী ধুরু।

Loading