নিজস্ব প্রতিনিধি  – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সমাবেশকে দায়ী করেছে। সংস্থার পক্ষ থেকে প্রকাশিত করোনা বিষয়ক সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতের পিছনে ‘রাজনৈতিক জনসভা’ এবং ‘ধর্মীয় জমায়েত’-এর বড় ভূমিকা রয়েছে।’  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ববিধি পালিত না হওয়ায় দ্রুততার সঙ্গে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এরআগে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিষয়ক পত্রিকা ‘ল্যানসেট’-ও ভারতে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সমাবেশের মতো অতি সংক্রামক (সুপার স্প্রেডার) অনুষ্ঠানকে দায়ী করেছিল। ভারতে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি ৪ রাজ্য ও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক জনসমাবেশ হয়। এসব সমাবেশে অনেক সময়েই করোনা বিধি মানা হয়নি। অন্যদিকে, হরিদ্বারে কুম্ভ মেলায় ধর্মীয় কর্মসূচিতে জড়ো হন কয়েক লাখ মানুষ। এঁদের মধ্যে বেশ কিছু মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন আবার অনেকে মারাও গেছেন। মৃতদের মধ্যে কিছু সাধু-সন্তও রয়েছেন।

এদিকে, উত্তর প্রদেশ ও বিহারে গঙ্গা নদী থেকে শতাধিক লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মালদহে। এই পরিস্থিতেতে রাজ্য সচিবালয় নবান্নের নির্দেশে বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানা লাগোয়া  গঙ্গায় ভেসে আসা মৃতদেহের সন্ধানে নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসন। বুধবার মালদহের জেলা প্রশাসক রাজর্ষি মিত্রকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নবান্ন থেকে। এর পাশাপাশি কোনও লাশ পাওয়া গেলে সম্মানের সঙ্গে সৎকারের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সচিবালয় নবান্ন থেকে। প্রসঙ্গত, বিহারের কাটিহার, বক্সার এবং উত্তর প্রদেশের গাজীপুর ও কানপুরের  গঙ্গায় গত কয়েকদিনে বহু পচাগলা, আধপোড়া লাশের সন্ধান মিলেছে। করোনায় মৃতদের দেহ যথাযথভাবে সৎকার না করে গঙ্গায় ফেলে দেওয়া  হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট দু’টি রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে। এসব কোভিডে মৃতদের দেহ কী না, প্রশাসনের কাছে এখনও তা স্পষ্ট নয়।

বিহার রাজ্যে গঙ্গায় ৭২টি দেহ ভেসে এসেছে। বক্সার জেলার পুলিস জানিয়েছে, প্রত্যেকটি লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। কোভিড পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের দাবী,  বিহার-উত্তরপ্রদেশ সীমান্তের  বালিয়াতে রাতে অ্যাম্বুলেন্সে এনে মৃতদেহগুলো গঙ্গায় ফেলা হচ্ছে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রকাশ, ভারতে গতকাল (বুধবার) সকাল ৮ টা থেকে আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮ টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭২৭ জন করোনা সংক্রমিত এবং একইসময়ে ৪ হাজার ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দেশে এ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৯৭ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৩ জন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল ২ কোটি ৩৭ লাখ ৩ হাজার ৬৬৫। বর্তমানে ৩৭ লাখ ১০ হাজার ৫২৫ জন সক্রিয় করোনা রোগী হাসপাতাল অথবা হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন।

Loading