বহুমূল্য রত্ন ব্যতীত গ্রহদোষ মুক্তির উপায়

অধ্যাপক ডঃ কুন্তল কুমার মুখোটী

জ্যোতিষ মহামহোপাধ্যায়, জ্যোতিষ সম্রাট ও জ্যোতিষ গুরু (স্বর্ণপদক প্রাপ্ত)

Ph.D In Astrology (সনাতন ও K.P)

Ph.D (ongoing) in Vastu Shastra

জ্যোতিষবিদ্‌  (কোষ্ঠী বিচার ও কোষ্ঠী তৈরী), হস্তরেখাবিদ্‌, বাস্তুবিদ্‌ ও সংখ্যাতত্ত্ববিদ্‌

যোগাযোগ – 9123090393/8017686476/9038837027

ইমেলdr.saikuntal@gmail.com / dr.kuntalastro 2021@gmail.com

চেম্বার : নাগেরবাজার (নিজ বাসগৃহ), স্নেহা জেমস্‌ হাউস – দমদম ও

গড়িয়াহাট, মা বগলা জুয়েলার্স – বাগুইহাটি / তেঘরিয়া সংযোগস্থলে  সোনারী ইষ্ট, জামশেদপুর

আমাদের জীবন নানা ঘাত-প্রতিঘাত, জ্বরাব্যধি, দ্বন্দ্ব, শোক, সমস্যার মধ্যে অতিবাহিত হয় আমরা এইসব সমস্যার কারণ খোঁজার চেষ্টা করি না, সমস্যার সমাধান চাই মাত্র এর ফলে সমস্যা পুনরায় আমাদের জীবনকে দুির্বষহ করে তোলে এইসব সমস্যার কারণ ও সমাধানের বিষয়গুলি নিয়েই ধারাবাহিক ভাবে কলম ধরেছেন  অধ্যাপক ডঃ কুন্তল কুমার মুখোটী  

জ্যোতিষ শাস্ত্রে গ্রহদোষের বিশেষ তাৎপর্য আছে। জাতক-জাতিকার জন্মছক বিচারের সময় দেখা যায় লগ্ন সাপেক্ষে চন্দ্র/রবি সাপেক্ষে গ্রহদের অবস্থান অনুযায়ী কিছু শুভ যোগের সঙ্গে কিছু অশুভ যোগের অবস্থান। গ্রহদের এই অশুভ অবস্থান অথবা অশুভ সমন্বয়কেই গ্রহদোষ আখ্যা দেওয়া হয়। জাতক-জাতিকার জীবনে শুভযোগ যেমন শুভত্ব নিের্দশ করে ঠিক সেরকমই অশুভ গ্রহযোগ বা

গ্রহদোষ অশুভত্ব নিের্দশ করে। গ্রহদের অশুভ অবস্থান বা অশুভ সমন্বয় বিবিধ প্রকারের হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ মাঙ্গলিক দোষ, কালসর্পদোষ, গ্রহণদোষ, শনির সাড়েসাতি, দৈন্যযোগ, পূর্ণফূযোগ, বিষযোগ ইত্যাদি। অশুভ গ্রহযোগ বা গ্রহদোষের অশুভত্ব জাতক-জাতিকার জীবদ্দশায় প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। জন্মছক বিচার করে সঠিক সময়ে সঠিক প্রতিকার করা হলে সেই অশুভত্বের প্রভাব থেকে জাতক-জাতিকার পূর্ণমুক্তি না হলেও তার অশুভত্ব অনেকাংশে হ্রাস পায়। অশুভত্বের প্রভাব থেকে মুক্তিলাভের জন্য কেবলমাত্র বহুমূল্য রত্নই একান্ত প্রয়োজন তা ঠিক নয়। জাতক-জাতিকার জীবনের এইরূপ নানাবিধ সমস্যা সমাধানের নানারকম উপায় ও টোটকা আছে। পূের্ব উল্লেখিত গ্রহদোষগুলির মধ্যে কয়েকটি গ্রহদোষের উপায় ও প্রতিকার আলোচনা করা হল।

(ক) মাঙ্গলিক দোষ – যে সকল জাতক-জাতিকা মাঙ্গলিক দোষের অন্তর্ভূক্ত তারা (১) প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার হনুমান চালিশা পাঠ করবেন। হনুমানজির পূজা করবেন। এবং পূজা শেষে প্রসাদ সকলের মধ্যে বিতরণ করবেন। (২) প্রতিদিন স্নানান্তে শুদ্ধ বস্ত্রে গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করুন। (৩) দূর্গা স্তোত্র পাঠ করা অত্যাবশ্যক। (৪) রামায়ণের সুন্দরকান্ড পাঠ করা উচিত। (৫) প্রবাহিত জলে চিনি/মিষ্টি/মধু/সিন্দুর অর্পণ করুন। (৬) রূপোর বালা বা আংটি ব্যবহার করুন। (৭) সর্বদা লাল বস্ত্র বর্জন করুন (৮) বাড়িতে লোহার জিনিস না রাখাই বাঞ্ছনীয় (৯) উনান বা তন্দুরে মিষ্টি রুটি বানিয়ে কুকুর বা বানরকে খাওয়ান (১০) বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবা করুন (১১)সম্ভব হলে মদ ও মাংস ত্যাগ করুন (১২) মিথ্যা কথা, অশ্লীল কথা, ঝগড়া বা কলহ, মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

(খ) শনির সাড়েসাতি –  যে সকল জাতক-জাতিকা শনির সাড়েসাতির অর্ন্তভূক্ত তাদের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত উপায় ও টোটকা প্রযোজ্য –

(১) প্রতি শনিবার মাটির পাত্রে সরিষার তেল নিয়ে প্রবাহিত জলে ভাসিয়ে দিতে হবে। বিউলীর ডালও ভাসানো যেতে পারে।

(২) শনিবার নিরামিষ খাদ্য নেওয়া উচিত।

(৩) এই সময়কালে মাদক দ্রব্য বা পরনারী (স্ত্রী ব্যতীত) হইতে সংযত থাকা বাঞ্ছনীয়।

(৪) প্রতি শনিবার কালী মন্দির অথবা শনিদেবের মন্দিরে শুকনো নারকেল দান করলে সুফল পাবেন।

(৫) প্রতিদিন গণেশের পূজো এবং প্রতি সোমবার শিবলিঙ্গকে কাঁচা দুধ দিয়ে চান করালে সুফল পাওয়া যাবে।

(৬) ঘোড়ার নালের আংটি অনামিকায় ধারণ করুন।

(৭)প্রত্যহ হনুমান চালিশা পাঠ করা উচিত। প্রতি মঙ্গলবার হনুমান মন্দিরে পূজাপাঠ, হনুমানজীর শরীরে মেটে সিঁদুর লাগালে বা দান করলে এবং ভক্তগণকে চালীসা দান করলে অবশ্যই ফল পাওয়া যাবে।

(৮) নৌকার পেরেক দিয়ে আংটি বানিয়ে মধ্যমায় ধারণ করা উচিত।

(৯) আটা দিয়ে মিষ্টি রুটি তৈরী করে তিনটি কালো কুকুরকে বা কাককে খাওয়াতে হবে।

(১০) প্রতি শনিবার বটগাছের গোড়ায় দুধ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে সেই মাটির তিলক পরুন।

(১১) প্রতি শনিবার কালীমন্দিরে কালো আঙুর দান করা উচিত।

(১২) কুমারী কন্যার পূজা করলে সুফল পাবেন।

(১৩) বাড়ীর ঝি-চাকরকে অকারণে তিরষ্কার না করাই শ্রেয়।

(১৪) চারটে শুকনো নারকেল প্রবাহিত জলে ভাসিয়ে দিলে সুফল পাওয়া যায়।

(১৫) শনিবার এক শিশি সুরমা কোনো নির্জন স্থানে পুঁতে দিলে/প্রবাহিত জলে ভাসিয়ে দিলে অচিরেই ফলপ্রাপ্তি ঘটে।

(গ)কালসর্প দোষ –  যে সকল জাতক-জাতিকারা কালসর্প দোষের অর্ন্তভূক্ত তারা নিম্নলিখিত উপায় বা টোটকা মেনে চললে এর কূফল থেকে মুক্ত হতে পারেন –

(১) প্রতিদিন প্রাতঃকালে স্নানাদির পর শুদ্ধবস্ত্রে শ্রীশ্রী সিদ্ধিদাতা গণেশের চরণে ২১টি দূর্বা নিবেদন করে গণেশ স্তোত্র পাঠ করলে উপকার হবে।

(২) নিত্যদিন দেবাদিদেব মহাদেবকে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে বিল্বপত্র নিবেদন করে ‘শিবশতনাম’ ‘শিবস্তোত্রম’ অথবা ‘রুদ্রকবচম’ পাঠ করলে বিশেষ ফল পাবেন।

(৩) মহাকাল ভৈরবের পূজা পাঠ ও শান্তি স্বস্ত্যয়ন করলে সুফল অবশ্যম্ভাবী।

(৪) প্রতিদিন স্নানাদির পর শুদ্ধ বস্ত্রে, শুদ্ধ মনে রাহু ও কেতুর কবচ পাঠ ও দান করলে সুফল অবশ্যম্ভাবী।

(৫) প্রতিদিন প্রয়োজনে স্নানাদির পর উত্তরমুখী আসনে বসে শুদ্ধ বস্ত্রে, শুদ্ধ চিত্তে সঠিক উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে ১০৮ বার মহামৃত্যুঞ্জয়

 মন্ত্র পাঠ করতে পারলে অশুভ প্রভাব কম হবে।

(৬) একটি সরস নারিকেল সিঁদুর মাখিয়ে বুধবার বা শনিবার প্রবাহিত জলে ভাসিয়ে দিলে সুফল হবে।

(৭) প্রতি সোমবার কাঁচা দুধ ও বিল্বপত্র সহকারে রুদ্রাভিষেক করলে অথবা প্রতি সোমবার কাঁচা দুধ অথবা পঞ্চগব্য সহকারে পারদের শিবলিঙ্গকে স্নানান্তে ২৮টি বেলপাতা নিয়ে ‘ওঁ পারদেশ্বরায় নমঃ, ওঁ নমঃ শিবায়ঃ’ – মন্ত্র জপ করে শিবলিঙ্গে অর্পণ করলে সুফল অবশ্যম্ভাবী।

(৮) ১৮টি শনিবারের প্রতি শনিবার একটি মাটির ভাঁড়ে কালো তিলের তেলের মধ্যে অল্পবিস্তর মুসুর ডাল দিয়ে অশ্বত্থ গাছের নিচে রেখে দিয়ে আসতে হবে। আসার সময় আর পিছনের দিকে তাকানো যাবে না।

(৯) ৩১ দিন একত্রে প্রাতঃকালে স্নানাদির পর শুদ্ধবস্ত্রে পূর্ব বা উত্তরমুখী আসনে বসে প্রচন্ড চন্ডিকা স্তোত্র পাঠ করলে সুফল পাবে।

(১০) প্রতি বুধবার রাহু-কেতু সম্বন্ধিত বস্তু দান করলে অচিরেই সুফল পাবেন।

(১১) ১৮টি দূর্বা ও ৭টি কুশ লাল সুতো দিয়ে বেঁধে অশ্বত্থ গাছের কাছে দিয়ে মনোকামণা জানিয়ে গোড়ার নিচের দিকে বেঁধে দিন, এই দোষের প্রভাব কমবে।

(১২) প্রতিদিন স্নানাদির পর শুদ্ধ বস্ত্রে, উত্তর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ মন্ত্রে যত বেশী জপ করা যায় ততোই সুফল হবে।

এছাড়াও আরো অনেক গ্রহদোষ বা অশুভ গ্রহযোগ আছে যা জন্মছকে কোনো অশুভত্বের ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু সঠিক সময়কালে সঠিক উপায় ও টোটকার মাধ্যমে তাদেরও প্রতিকার সম্ভব।

Loading