নিজের ঢাক নিজেই পেটাই
কলমে – সোনালী মুখার্জী
আড়ুপাড়া,সাঁতরাগাছি, হাওড়া
সেই ছেলেবেলা থেকে মায়ের মুখ থেকে শোনা কথা দুঃখের কথা কাহকে বলবে না, তোমার খালি পেটের খবর যেন কেহ জানতে না পারে।অভাব একটা সাময়িক অবস্হা,তা মানিয়ে নিতে হয়।সব কথা সবাই কে বলতে নেই।তোমার কাছে কেহ যদি কিছু কথা বলে হালকা হয় তার পাশে তথাপি আনন্দ পেও না।একের কথা অন্যকে কখনই বলবে না।অপরের দুঃখে সমব্যথী হবে,অপরের আনন্দে আনন্দিত হবে, হিংসা করবে না। এভাবেই শুনতে শুনতে নিজেকেই কখন বদলে ফেলেছি জানিনা।আজ জীবনের সাঁঝবেলায় এসে গিয়েছি।
অনেকেই বলবেন,কী একটা কথা তাও আবার ফেসবুকে বলতে বসেছে।হিংসা নেই এমন মানুষ হয় নাকী?রাগ থাকবে না তাও হয় না।রক্ত মাংসের শরীরে একেবারে শীতল রক্তের প্রাণী হবে?তবু তারাও ছোবল দেয়। এ আবার বলে কী?ঠিক তাই,ঠিক বলেছেন।
অন্যের আনন্দে আমি আনন্দিত,অন্যের খুশির খবর আমাকে খুশি করে।অন্যের সম্পদে আমার চোখ নেই।মিথ্যা কথা বলে ভালোবাসা কুড়োনোর পাত্রী আমি নই।আমাকে ভালোবাসার জন্য অনুরোধ করিনি।আমি জ্ঞানী গুণী জন ও নই।তবে যা আমি সবসময় পেতে চাই তা হল সম্মাণ।সেই জন্য ছোট,বড়ো যেই হোক তার সম্মাণ রক্ষা করি।
কারো কাছে কোনো প্রত্যাশা আমি করিনা।ভীষণ লজ্জিত হই যখন কেহ আমার সামনে ভালো কথা বলে আড়ালে বিষ উদ্গিরণ করে।
ছেলেবেলা থেকে একটা খারাপ স্বভাব আমার আছে,কোন কথায় অন্তরে ঘা পেলে আজীবন মনে রাখি আর সেখান থেকে নীরবে সরে আসি।
হাল ছাড়িনা সহজে।হবে না বলে কোন কথা আছে বলে আমার অভিধানে নেই।কান্নায় ভেঙে পড়লেও আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে সমস্যার সমাধানে উঠেপড়ে লাগি।
একটুর জন্য কত কিছু হারিয়েছি।বি টি ট্রেনিং এর লেটার এসেছে সময় পার হবার পর।বি এড এ কৃতি দশজন কে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল আমার কাছে যখন খবর এলো আমি এগারো।নার্সিং ট্রেনির এর চিঠি এলো শেষ মহূর্তে পৌঁছনোর আগেই গেট বন্ধ।
ডিগ্রী গুলো বাক্স বন্দী।শিক্ষকতা করে জীবন কাটাচ্ছি।জীবনে অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়েছি কাহকে পাশে পাইনি।না সশরীরে,না অর্থে।যদি ও কেহ সামান্য হাত বাড়িয়েছে তারা আবার তুলনা দিতে ও ভোলে নি।
বিয়ে টা জীবনের সব নয়।বিয়ে হলেই জীবনের সব নিরাপত্তা পাওয়া গেল তা নয়।বিচিত্র মানুষ আর তাদের ধ্যান ধারনা।এক একটা সংসারে এক এক রকম যন্ত্রণা।অর্থ থাকলেই সুখশান্তি থাকবে তা নয়।চরম দারিদ্রের মধ্যেও সুখে থাকা যায়,শান্তিও পাওয়া যায়।কৃপণ আর দুশ্চরিত্র মানুষ জীবনের সবচেয়ে কাল।
এদিকে রুগ্ন অসুস্হ হলে তার লড়াই অন্য রকম।একদিকে অর্থের চিন্তা অন্যদিকে পুরুষ কে সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্হ করে তোলার সংগ্রাম।নারী পুরুষ নির্বিশেষে ভয়ঙ্কর লড়াই।বেঁচে থাকার লড়াই।
আমাকে কে ভালোবাসলোনা,কে ঘৃণা করলো,কে সমালোচনা করলো তা দিয়ে আমি নয়।আমি আমার ভাবনা চিন্তায় সঠিক সর্বাংশে একজন মানুষ।তারপর নারী না পুরুষ।সংসারে আমার ভূমিকা,মানুষের অন্তরে আমার স্হান।যদি কিছু ভালো কাজ করে থাকি বা করি তবে আমি বেঁচে থাকবো এই মানুষের অন্তরে নতুবা মৃত্যুর পর ডেড বডি পুড়ে যাবার সাথে সাথে আমি নামক অহংকার উধাও হয়ে যাবে।
কী বলেন বন্ধুরা?নিজেদের কথা ভাবছেন? না শেষ জীবনেও আমি কারো বোঝা হবো না কথা দিলাম।সত্যিকারের ভালোবেসে, শ্রদ্ধা করে কেহ যদি আমার খবর রাখে অবশ্যই রাখবে।
এখনো অনেকটা পথ যেতে হবে হয়তো।জীবনের শেষ স্টেশন কোনটি আর কোথায় সে টিকিট আমার কাছে নেই তবে রিজার্ভেশন হয়ে গেছে ঈশ্বরের খাতায়।
14 total views, 14 views today