নিজস্ব প্রতিনিধি – প্রত্যাশা ছিল, দিল্লি সফরে গিয়ে বিরোধী জোটের বিষয়টি অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু তৃণমূলের সেই প্রত্যাশাপূরণ হলো না। গত ২১ জুলাই শহিদ দিবসের ভাষণে কলকাতায় বসে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দিল্লি গিয়ে তিনি শরদ পাওয়ারসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন। সেদিন দিল্লিতে কনস্টিটিউশন ক্লাবে তৃণমূলের অনুষ্ঠানে শরদ পাওয়ার, রামগোপাল যাদব, পি চিদম্বরমরা এসেছিলেন। তারা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মমতা তাদের অনুরোধ করেছিলেন, তারা যেন দিল্লিতে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে একটা বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীও থাকতে চেয়েছিলেন। দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী চারদিন থাকলেন। কিন্তু বিরোধী-বৈঠক হয়নি। এমনকী শরদ পাওয়ারের সঙ্গেও মমতার কোনো বৈঠক হয়নি। মমতা যখন দিল্লিতে, তখন শরদ পাওয়ারও রাজধানীতে। তিনি মুম্বায়ে বলে এসেছিলেন, মমতার সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু সেই সাক্ষাৎ হয়নি। তার মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেও দিল্লিতে ছিলেন। একুশে জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে সুপ্রিয়াকে সঙ্গে নিয়েই গেছিলেন শরদ। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে বলা হয়েছিল, সোনিয়া গান্ধী ও শরদ পাওয়ারের বাড়িতে তিনি নিজে যাবেন। বাকিদের সঙ্গে সাউথ অ্যাভিনিউয়ে ভাইপো অভিষেকের ফ্ল্যাটে বৈঠক হবে।

দিল্লি এলে এখন এখানেই ওঠেন মমতা। সোনিয়া গান্ধীর বাড়িতে মমতা গিয়েছিলেন। বৈঠকও হয়েছে। সোনিয়া সেখানে রাহুলকেও রেখেছিলেন। দিল্লিতে অভিষেকের ফ্ল্যাটে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ডিএমকে নেত্রী কানিমোরি, তিন কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা, অভিষেক মণু সিংভি এবং কমল নাথ। এছাড়া জাভেদ আখতার ও শাবানা আজমিও দেখা করেছেন।   আর প্রধানমন্ত্রী মোদি, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়করি এবং সোনিয়া গান্ধীর কাছে মমতা গেছিলেন। কিন্তু শরদ পাওয়ার, শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, টিআরএস, আরজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো আঞ্চলিক প্রভাবশালী দলগুলির কোনো নেতা মমতার সঙ্গে এবার দেখা করেননি। মমতা নিজে যাই বলুন না কেন, তৃণমূল সংসদীয় দলের বৈঠকের পর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল তাকেই প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায়। কারণ, তিনিই একমাত্র নরেন্দ্র মোদিকে হারাতে সক্ষম। দল চায়, তিনি বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিন।   সেই নিরিখে মুখ্যমন্ত্রীর এবারের সফর কি সফল হলো? বিশেষ করে আঞ্চলিক দলগুলির মনোভাবের নিরিখে?

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র জানিয়েছেন, ”অন্য কেউ এখন বিরোধী ঐক্যের চেষ্টা করছেন না। সেখানে দাঁড়িয়ে মমতা একটা চেষ্টা করলেন। কিন্তু যে সাড়া তিনি দিল্লিতে পেয়েছেন তা একেবারেই যথেষ্ট নয়। দেখা গেল, বিরোধী দলের নেতারা মমতার সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখলেন। ” মমতা নিজে অবশ্য দাবি করেছেন, ”আমার সফর সফল হয়েছে। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিরোধী দলগুলি সকলে মিলে যদি একসঙ্গে লড়াই করি, তার থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না। সব নেতার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। কারণ, অনেকে সংসদে ব্যস্ত ছিলেন। করোনার জন্য সেন্ট্রাল হলেও যেতে পারিনি। আমাদের আগে দেশকে বাঁচাতে হবে। ”  আরেক প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরীর মতে, ”মমতা যে চেষ্টা করছেন, সেটাকে বলা যায় প্রিম্যাচিওর। তিন বছর পরে ভোট। এতদিন আগে থেকে পুরো কৌশল ঠিক করার ব্যাপারে অন্যরা কেন এতটা উৎসাহ দেখাবে?”  তিনি বলেছেন, ”মমতা পশ্চিমবঙ্গে মোদি-শাহের বিরুদ্ধে জিতেছেন, সেটা নিঃসন্দেহে বড় ব্যাপার। কিন্তু সেটা একটা রাজ্যে জয়। অন্য আঞ্চলিক দলের নেতারা তাদের রাজ্য নিয়ে ব্যস্ত। মমতা সেখানে তাদের জেতাতে সাহায্য করতে পারবেন না। দীপ্তেন্দ্র মনে করেন, ”এরপর উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে কী হবে, তার দিকে সকলের নজর থাকবে। তাই মমতার চেষ্টা সময়োচিত নয়। ”  তাই মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফর তৃণমূলের প্রত্যাশা পূরণে সফল হলো না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

Loading