জ্যোতিষে বক্রীগ্রহের প্রভাব

অধ্যাপক ডঃ কুন্তল কুমার মুখোটী

জ্যোতিষ মহামহোপাধ্যায়, জ্যোতিষ সম্রাট ও জ্যোতিষ গুরু (স্বর্ণপদক প্রাপ্ত)

Ph.D In Astrology (সনাতন ও K.P)

Ph.D (ongoing) in Vastu Shastra

জ্যোতিষবিদ্‌  (কোষ্ঠী বিচার ও কোষ্ঠী তৈরী), হস্তরেখাবিদ্‌, বাস্তুবিদ্‌ ও সংখ্যাতত্ত্ববিদ্‌

যোগাযোগ – 9123090393/8017686476/9038837027

ইমেলdr.saikuntal@gmail.com / dr.kuntalastro 2021@gmail.com

চেম্বার : নাগেরবাজার (নিজ বাসগৃহ), স্নেহা জেমস্‌ হাউস – দমদম ও

গড়িয়াহাট, মা বগলা জুয়েলার্স – বাগুইহাটি / তেঘরিয়া সংযোগস্থলে  সোনারী ইষ্ট, জামশেদপুর

আমাদের জীবন নানা ঘাত-প্রতিঘাত, জ্বরাব্যধি, দ্বন্দ্ব, শোক, সমস্যার মধ্যে অতিবাহিত হয় আমরা এইসব সমস্যার কারণ খোঁজার চেষ্টা করি না, সমস্যার সমাধান চাই মাত্র এর ফলে সমস্যা পুনরায় আমাদের জীবনকে দুির্বষহ করে তোলে এইসব সমস্যার কারণ ও সমাধানের বিষয়গুলি নিয়েই ধারাবাহিক ভাবে কলম ধরেছেন  অধ্যাপক ডঃ কুন্তল কুমার মুখোটী  

জ্যোতিষ শাস্ত্রে Retro অর্থাৎ বক্রীগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাতক-জাতিকার জন্মছকে বক্রীগ্রহের সঠিক বিচার, জন্মছকের ফলাদেশকে সঠিকভাবে নিরূপন করতে সাহায্য করে।

সংস্কৃতে retrograde কথার অর্থ হল বক্র (Vakra), ইংরাজীতে এর অর্থ twisted অর্থাৎ ঘোরানো অথবা crooked অর্থাৎ বাঁকা। বক্রগ্রহকে জটিল বা শক্ত

গ্রহ হিসাবেও আখ্যা দেওয়া হয়।

Retrograde Motion (বক্রগতি)

বক্রগতি কথার অর্থ হল পৃথিবীর আপেক্ষিক গতির সাপেক্ষে কোনোও একটি নির্দিষ্ট গ্রহকে যদি পিছনের দিকে অর্থাৎ পশ্চিমাভিমুখী হতে দেখা যায়, তবে সেই নির্দিষ্ট গ্রহটিকে বলা হয় বক্রগতি প্রাপ্ত গ্রহ। উক্ত অবস্থাটি তখনই পরিলক্ষিত হয়। যখন সেই নির্দিষ্ট গ্রহ ও সূর্যের মধ্যে পৃথিবী অবস্থান করে। প্রকৃতপক্ষে কোনো গ্রহ বক্রী (retro) নাকি সার্গী (direct) তা পৃথিবী সাপেক্ষে বিচার করা হয়। বক্রগতির ধারণাটি একটি ভ্রান্ত ধারণা কারণ জ্যোতির্বিজ্ঞান মতে কোনো গ্রহই বক্রী হতে পারে না। কেপ্‌লারের সূত্র অনুযায়ী প্রতিটি গ্রহই পূর্বমুখী হয়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। বৈদিক জ্যোতিষ মতে সূর্য বা রবি ও চন্দ্র, এই দুটি গ্রহ কখনোই বক্রগতি প্রাপ্ত হয় না। অবশিষ্ট পাঁচটি গ্রহ অর্থাৎ বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি বক্রগতি প্রাপ্ত হয়। রাহু ও কেতুকে বৈদিক জ্যোতিষে গ্রহের আখ্যা দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে রাহু ও কেতু হলো দুটি গাণিতিক বিন্দু। অতএব তারা সর্বদাই বক্রগতি সম্পন্ন। এছাড়া শনিভাবাপন্ন তীর্যক প্রভাবশালী গ্রহসমূহ যেমন ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো এরাও বক্রগতিপ্রাপ্ত হয়। গ্রহরা মহাকাশে রাশি-নক্ষত্রের মধ্যে দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বাভিমুখে গমন করে, রবি, চন্দ্র ব্যতিত। যেহেতু রাহু-কেতু চিরকালীন বক্রী, তাই উপরিউক্ত চারটি গ্রহ ছাড়া বাকী আটটি গ্রহই বৎসরের কোনো না কোনো সময়ে বক্রী থাকে অর্থাৎ পূর্ব থেকে পশ্চিমে গমন করে। জ্যোতির্বিজ্ঞান গ্রহের বক্রতাকে মান্যতা দেয় না। তবে কেন এমন ঘটে এর কারণ উদ্ভাবন করলে বা এর অর্ন্তনিহিত রহস্য উদ্‌ঘাটন করলে দেখা যায় যে, আসল রহস্যটা হলো পৃথিবী, রবি এবং তারা গ্রহদের অবস্থান ও তাদের গতিবেগ। পৃথিবী তার কক্ষপথে যে গতিতে ভ্রমণ করে তা অন্য গ্রহদের থেকে দ্রুত, সময়ে সময়ে তাদের গতিবেগ অন্যদের বা অন্য গ্রহদের থেকে দ্রুত হলে, দৃষ্টিবিভ্রম ঘটবে। ফলস্বরূপ স্বীয় কক্ষপথে ভ্রাম্যমান গ্রহটিকে বিপরীত পথে গমনাবস্থায় দেখা যাবে। এটি নেহাতই মানুষের দৃষ্টিভ্রম। পৃথিবী যখন নিজ কক্ষপথে গমনকালে অপর গ্রহটিকে অতিক্রম করে, তখন সেই উদ্দিষ্ট গ্রহটি মার্গী গ্রহ বলা হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলে গ্রহের অগ্রগতি বা প্রগতি। পক্ষান্তরে বলা যেতে পারে যে কোনো গ্রহ যদি ০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি দিকে ধাবিত হয় তখন সেই গ্রহকে মার্গী গ্রহ হিসাবে গণ্য করা হয়। আর ঠিক বিপরীতভাবে কোনো গ্রহ যদি ৩০ ডিগ্রি থেকে ০ ডিগ্রি দিকে ধাবিত হয় তখন সেই গ্রহকে বক্রীগ্রহ হিসাবে গণ্য করা হয়। গ্রহরা বক্রগতি প্রাপ্ত হয় যখন গোচরে রবি থেকে সেই গ্রহটি পঞ্চম বা অষ্টম ভাবে অবস্থান করে, তবে বুধ ও শুক্রের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। বুধ ও শুক্র রবি গ্রহ থেকে সর্বাধিক দুরত্বে অবস্থান কালে বক্রী হয়।

গ্রহদের বক্রী অবস্থা প্রাপ্তি বা বক্রী ত্যাগ করে মার্গী প্রাপ্তির সময় তাদের নানা প্রকার গতি প্রাপ্তি হয়। সূর্য সিদ্ধান্ত অনুসারে এই নিির্দষ্ট সময়কালে আট প্রকার গতি প্রকৃতির উল্লেখ পাওয়া যায়।

বক্র গতির জন্য তিনটি গতি যথাক্রমে বক্রগতি, অতিবক্র গতি ও কুটিল গতি। অপরদিকে মার্গী গতির জন্য প্রাপ্ত গতিগুলো হল যথাক্রমে (১) মন্দ (২) মন্দতারা (৩) সম (৪) শীঘ্র (৫) অতিশীঘ্র গতি

পশ্চাৎগতির কারণ মূলত পৃথিবী হইতে গ্রহের গতি পর্যবেক্ষণ। শুক্র, মঙ্গল ও বুধ গ্রহের কারণে মানব জীবনের ওপর যে প্রভাব পড়বে, তদাপেক্ষা সঠিক প্রভাব পড়বে যখন বৃহস্পতি ও শনি বক্রতা পাবে। বক্রপ্রাপ্তি অথবা মার্গী প্রাপ্তির আগে গ্রহরা স্থির অবস্থায় অবস্থান করে। বুধ গ্রহকে নিজ কক্ষপথে সূর্যকে অতিক্রম করতে সময় লাগে ৮৮ দিন । বুধ বৎসরে ৩-৪ বার বক্রী অবস্থায় থাকে। বুধ ৩ সপ্তাহ বক্রী থাকে। আর বক্রী গমনের ১ দিন পূর্বে এবং বক্রী ত্যাগের ১ দিন পরে স্থিরাবস্থায় থাকে। সূর্য থেকে বুধের দূরত্ব (ডিগ্রি অনুসারে) বক্রীকালীন ১৪° – ২০° এবং মার্গীকালীন ১৭° – ২০° ।

২০২০ সালে বুধের বক্রীকালীন সময় (১) ১৭ই ফেব্রুয়ারী থেকে ১০ই মার্চ (মীন ও কুম্ভরাশিতে) (২) ১৮ই জুন হইতে ১২ই জুলাই (কর্কট রাশিতে) (৩) ১৪ই অক্টোবর থেকে ৩রা নভেম্বর ২০২০ (বৃশ্চিক ও তুলারাশিতে)

মঙ্গল গ্রহকে নিজ কক্ষপথে সূর্যকে অতিক্রম করতে সময় লাগে ৬৮৭ দিন। মঙ্গল প্রায় ২ বৎসরে ১ বার বক্রী অবস্থায় অবস্থান করে । মঙ্গল ৮০ দিন বক্রী অবস্থায় থাকে। মঙ্গল বক্রী হওয়ার ২-৩ দিন আগে এবং মার্গী হওয়ার পর ২-৩ দিন স্থিরবস্থায় থাকে। ডিগ্রি অনুসারে সূর্য থেকে মঙ্গলের দূরত্ব বক্রীকালীন ২২৮ ডিগ্রি  এবং মার্গী অবস্থায় ১৩২ ডিগ্রি।

২০২০ সালে মঙ্গল গ্রহের বক্রীকালীন সময়কাল ৯ সেপ্টেম্বর হইতে ১৪ই নভেম্বর ২০২০ (মেষ রাশিতে)।

শুক্র গ্রহকে নিজ কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ২২৫ দিন। শুক্রগ্রহ প্রতি দেড় বৎসরে একবার বক্রী অবস্থায় অবস্থান করে। শুক্র ৪২ দিন বক্রী অবস্থায় অবস্থান করে। শুক্র বক্রী অবস্থায় গমনের পূর্বে ২ দিন এবং বক্রত্যাগের পরের ২ দিন স্থিরাবস্থায় অবস্থান করে। ডিগ্রী অনুসারে সূর্য থেকে শুক্রের দূরত্ব বক্রকালীন ২৮° এবং মার্গী অবস্থায় ২৯°।

২০২০ সালে শুক্রে বক্রকালীন সময়কাল ১৩ই মে হইতে ২৫শে জুন ২০২০ (মিথুন রাশিতে)

বৃহস্পতি গ্রহকে নিজ কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ১২ বৎসর। বৃহস্পতি বৎসরে ৪ মাস অর্থাৎ ১২০ দিন বক্রী অবস্থায় থাকে। বৃহস্পতি বক্রী অবস্থায় গমনের পূর্বের ৫-৮ দিন এবং বক্রী অবস্থা ত্যাগের পরের ৫-৮ দিন স্থিরাবস্থায় অবস্থান করে। ডিগ্রি অনুসারে সূর্য থেকে বৃহস্পতির দূরত্ব বক্রীকালীন ২৪৫° মার্গী অবস্থায় ১১৫°।

২০২০ সালে বৃহস্পতির বক্রীকালীন সময়কাল ১৪ই মে হইতে ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২০ (মকর রাশিতে)

শনি গ্রহকে নিজ কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ২৯ বৎসর ৬ মাস। শনি বৎসরে সাড়ে ৪ মাস বক্রী অবস্থায় অবস্থান করে। শনি বক্রী অবস্থায় গমনের পূর্বের ৫-৬ দিন এবং বক্র ত্যাগের পরের ৫-৬ দিন স্থিরাবস্থায় অবস্থান করে। ডিগ্রি অনুসারে সূর্য থেকে শনির দূরত্ব বক্রকালীন ২৫১° এবং মার্গী এবং মার্গী অবস্থায় ১০৯° । ২০২০ সালে শনির বক্রকালীন সময়কাল ১১ই মে হইতে ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০২০ (কুম্ভ ও মকর রাশি)

ইউরেনাস গ্রহটিকে নিজের কক্ষপতে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ৮৪ বছর (কারণ এই গ্রহটি সূর্য থেকে বহু দূরে অবস্থিত)। একটি ‘ইউরেনিয়ান বর্ষ’ এতোটাই দীর্ঘ মেয়াদি যে এই গ্রহটি রাশিচক্রের প্রতি রাশিতে প্রায় ৭ বৎসরকাল অবস্থান করে। ইউরেনাস বৎসরের প্রায় ৫ মাস বক্রী অবস্থায় অবস্থান করে। ইউরেনাস বক্রী হওয়ার পূর্বের ৭ দিন বক্রী ত্যাগের পরবর্তী ৭ দিন স্থিরাবস্থায় অবস্থান করে।

২০২০ সালে ইউরেনাসের বক্রকালীন সময় ১৫ই আগস্ট ২০২০ হইতে ১লা জানুয়ারী ২০২১ (বৃষ রাশিতে)।

নেপচুন গ্রহটিকে নিজের কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ১৬৫ বছর (গ্রহটি সূর্য থেকে বহু দূরে অবস্থিত)। এত দূরে অবস্থান হেতু দীর্ঘমেয়াদী এই গ্রহটি রাশিচক্রের প্রতিটি রাশিতে প্রায় ১৪ বছর অবস্থান করে। নেপচুন বছরে প্রায় ৫ মাস বক্রী অবস্থায় থাকে। নেপচুন বছরে প্রায় ৫ মাস বক্রী অবস্থায় থাকে। নেপচুন বক্রী অবস্থার পূর্বের ৭ দিন এবং বক্রী ত্যাগের পরবর্তী ৭ দিন স্থিরাবস্থায় থাকে।

২০২০ সালে নেপচুনের বক্রীকালীন সময় ২৩শে জুন থেকে ২৯শে নভেম্বর ২০২০ (মীন রাশিতে) প্লুটো গ্রহটি নিজ কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ২৪৮ বৎসর। প্লুটো রাশিচক্রের প্রতিটি রাশিতে ২১ বৎসর অবস্থান করে। এই গ্রহটি বৎসরে পাঁচ মাস বক্রী অবস্থায় অবস্থান করে। গ্রহটি বক্রী অবস্থার পূর্বে ৮-৯ দিন এবং বক্রী অবস্থা ত্যাগের পরের ৮-৯ দিন স্থিরাবস্থায় অবস্থান করে।

২০২০ সালে প্লুটোর বক্রকালীন সময়কাল ২৫শে এপ্রিল থেকে ৪ঠা অক্টোবর ২০২০ (মকর রাশিতে) কোনো গ্রহ তার বক্রী অবস্থা থেকে বেশী ফল দেয় তার স্থিতিশীল অবস্থায়। কারণ বক্রী হওয়ার আগে বা বক্রী ত্যাগ করার সময় গ্রহটির শক্তি অর্ন্তমুখী হয়ে ওঠে।

কোনো গ্রহ ১৫ ডিগ্রি এর কমে বক্রী হলে তার আগের ঘরের ফল দেবে এবং ১৫ ডিগ্রিকে অতিক্রম করে বক্রী হলে সেই ঘরের ফল দান করে।

বৈদিক জ্যোতিষের বিভিন্ন গ্রন্থে বক্রী গ্রহকে বলশালী বলা হয়। (ঠিক জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী চেষ্টা বল বলা হয়)। যার ফলস্বরূপ জ্যোতিষবিদ্‌রা নৈসর্গিক শুভ গ্রহ যেমন, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রের বক্রীকালকে এবং শক্তিশালী বলে মনে করেন অপর দিকে নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ মঙ্গল ও শনির বক্রীকালকে অশুভ ও দুর্বল বলে বর্ণনা করেছেন।

বৈদিক জ্যোতিষে বক্রীগ্রহের প্রভাব বা বক্রী গ্রহের ফল বিচার করার সময় দেখা যায় যে রামদয়ালুর সংকেত নীধি গ্রন্থে উল্লেখ আছে (১) বক্রী মঙ্গল যে ঘরে অবস্থান করবেন তার তৃতীয় ভাবের ফল দেবে। (২) বক্রী বুধ যে ভাবে অবস্থান করেন, তার চতুর্থ ভাবের ফল দান করে। (৩) বক্রী বৃহস্পতি যে ভাবে অবস্থান করে তার পঞ্চমভাবের ফলদান করে (৪) বক্রী শুক্র যে ঘরে অবস্থান করে তার সপ্তম ভাবের ফল দেয়। (৫) বক্রী শনি যে ভাবে থাকে তার অষ্টম ভাবের ফল দান করে। পরাশরীয় মতে বক্রী গ্রহ নিজের নিচস্থ রাশিতে থাকলে খারাপ ফল দেবে, এটা ঠিক নয়। নীচস্থ রাশিটি যদি শুভ ভাবের কারক হয়, তবে শুভ ফল দেবে, অন্যথায় অশুভ ভাবের কারক হলে অশুভ ফল দান করে। ফলদীপিকায় বলা হয়েছে যে বক্রী গ্রহ যদি গ্রহের নীচস্থ রাশিতে থাকে তবে নিজ ভাবের বল দেবে, আর তুঙ্গী থাকলে নীচস্থ ভাবের ফল দেবে। বক্রী গ্রহরা সর্বদা খারাপ ফল দেয় না, তারা যে ভাবের সঙ্গে যুক্ত সেই ভাবকে পুনরায় ফিরে দেখার সুযোগ করে দেন। বক্রী গ্রহ কার্য ও কারণের সঙ্গে যুক্ত তাতে বিলম্ব ঘটায়। জাতককে বাধ্য করে নির্দিষ্ট কাজ থেকে স্বল্প ক্ষণের জন্য বিরত থাকতে। বা এগিয়ে না যেতে বাধ্য করে।

সারাবলী গ্রন্থে লেখক বর্ণনা করেন যে, তুঙ্গী গ্রহ বক্রী হলে তার শক্তি বিশেষ থাকে না। তিনি তখন বক্র ত্যাগ পর্যন্ত ফলদায়ক নয়। অর্থাৎ তিনি ফল লাভের বাধাকে এড়িয়ে চলেন। অপরদিকে বক্রী শুভ গ্রহ রাজত্ব দেন অর্থাৎ রাজতুল্য ফল প্রদান করেন, যা তিনি মার্গী হিসাবে চলমান ফলের কথা বিবেচনায় আনেন না। আবার অশুভ গ্রহ দুর্দশাগ্রস্থ করেন, কারণ জাতক-জাতিকা দুর্দশায় না পড়লে ফিরে আসে না। এর উল্লেখ পাওয়া যায় কালিদাস রচিত ‘উ্ত্তরকলামৃত’ গ্রন্থে। বক্রী গ্রহ যদি ২য়, ৪র্থ, ৫ম, ৭ম, ৯ম, ১০ম ও ১১শ -শুভ ভাবে থাকে বা সুস্থ অবস্থায় থাকে তা সুস্থ ও শারীরিক অবস্থাকে নির্দেশ  করে আর বক্রীগ্রহ যদি ১ম, ৩য়, ৬ষ্ঠ, ৮ম ও ১২শ ভাবে অবস্থান করে তবে তা শারীরিক অসুস্থতার কারণ হয় এবং ৮ম ভাবে থাকলে আয়ুক্ষয়ের কারণ হয়.

যদি কোনো গ্রহ জন্মছক ও নবাংশ ছকে দুই ক্ষেত্রেই নিচস্থ হয়ে বক্রী হয় তবে তার অশুভত্ব নষ্ট হবে। গ্রহটি অধিক শক্তিশালি হয়ে শুভত্বকে নির্দেশ করবে। যদি কোনো গ্রহ ১ম, ৫ম, ও ৯ম ভাব ও একই সঙ্গে ৬ষ্ঠ, ৮ম ও ১২শ ভাবের অধিপতি হয়ে বক্রী হলে তবে সেই গ্রহগুলি জাতকের জীবনে শুভত্ব নিয়ে আসে। জন্মছকে বক্রী গ্রহের সংখ্যার প্রভাব বা ফল লাভ, এ ক্ষেত্রে (ক) যদি কোনো জাতকের জন্মছকে বক্রী না থাকে তবে সেই জাতকের জীবনের যাত্রাপথ সুগম, পরম শান্তিপূর্ণ ও আশানুরূপ হয়। অতি সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।

(খ) যদি কোনো জাতকের জন্মছকে ১টি গ্রহ বক্রী থাকে তবে সেই জাতক স্বাধীনচেতা, আত্মাভিমানী ও বন্ধুবৎসল হয়।

(গ) যদি জাতকের জন্মছকে ২টি গ্রহ বক্রী হলে জাতক কৌশলী ও সর্বজনগৃহীত হয়।

(ঘ) জন্মছকে ৩টি গ্রহ বক্রী হলে জাতক একনিষ্ঠ ও সাফল্যের জন্য বদ্ধপরিকর হয়।

 (ঙ)৪টি গ্রহ বক্রী হলে জাতক বাস্তববাদী ও একজন ভালো লেখক হবেন।

 (চ) জন্মছকে ৫টি গ্রহ বক্রী হলে সেই জাতক-জাতিকার মানসিকতা অনুধাবন করা কঠিন হবে।

(ছ) জন্মছকে ৬টি গ্রহ বক্রী হলে সেই জাতক-জাতিকা বিপুল অর্থের অধিকারি হয় এবং জীবনে সফলতা, পরিচিত, প্রতিষ্ঠিত হয়।

(জ) জন্মছকে ৭-৮ গ্রহটি বক্রী হলে জাতক-জাতিকা স্বল্পায়ু হয়। দুঃখী হয় এবং তাকে বা তার মানসিকতা বোঝা মুস্কিল হয়। (ঝ)রাহু ও কেতুর বক্রী অবস্থা ব্যতীত যদি কোনো জাতক-জাতিকা ৪টি বা ততোধিক গ্রহ বক্রী হয় তবে সেই জাতক-জাতিকার ৪১ বছর বয়সের পর থেকে জীবনে প্রভূত উন্নতি হবে।

নিম্নের জন্মছকের মাধ্যমে বক্রী গ্রহের প্রভাবের ব্যখ্যা করা হবে। বিশ্বের এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী, পদার্থবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীর জন্মতারিখ ৮ই জানুয়ারি  ১৯৪২, জন্ম সময় রাত ২টো ২৯ মিনিট, জন্মস্থান অক্সফোর্ড (যুক্তরাষ্ট্র)।  অক্ষাংশ ৪৪° ৭´ উত্তর দ্রাঘিমাংশ ৭০° ২৯´  (পশ্চিম)

উপরে উল্লিখিত জন্মছকে জাতকের শনিগ্রহ বক্রী হয়ে সপ্তম ভাবে অবস্থান করছে। শনিগ্রহ যদি বক্রী হয়ে ৭ম ভাবে অবস্থান করে তবে জাতকের দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ভাঙন ঘটবে অথবা জাতক দীর্ঘ মেয়াদি সম্পর্কে নারাজ হবেন। শনিগ্রহ ৭ম ভাবে থাকায় জাতকে সন্দেহভাজন করে তুলবে।

পূর্বে উল্লিখিত জন্মছকে – শনিগ্রহ, ৭ম ভাবে বক্রীও নীচস্থ, ফলে উচ্চস্থের ফল দান করে। যার ফলস্বরূপ মেষরাশিস্থ মঙ্গলের রুচক যোগ নিষ্ফলা কিন্তু মাঙ্গলিক যোগ বিদ্যমান। যার কারণে মঙ্গলের মহাদশায় ১৯৬১ সালে জাতক ‘মটর নিউরোন’ নামক এক দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু হয়ে যান এবং ১৯৬৩ সাল থেকে তিনি তার বাকি জীবনটা হুইল চেয়ারে কাটান। ৩য় ও ৬ষ্ঠ ভাবাধিপতি বৃহস্পতির ৮ম ভাবে অবস্থান দুরারোগ্য ব্যধি নির্দেশ করে। জন্মছকের বক্রী শনিগ্রহ মঙ্গল ও রাহুর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত হয়ে অগ্নিরাশির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ফলস্বরূপ তার দীর্ঘ জীবন মেষ রাশিতে বক্রী শনি উচ্চস্থের ফল প্রদান করে। লগ্ন ও ৮ম ভাবাধিপতি শুক্র চতুর্থে অর্থাৎ মকর রাশিতে অবস্থান করার ফলে শুক্র ও শনিগ্রহের মধ্যে ক্ষেত্র বিনিময় যোগ হয়েছে। এছাড়াও পঞ্চমভাবে কেতুর অবস্থান, ১১শ পতি রবির ৩য় ভাবে অবস্থান এবং বৃহস্পতির ৯ম দৃষ্টি লগ্ন ও নবমপতির ওপর বর্তমান থাকার কারণে জাতক গুঢ় তত্ত্ব বা বিজ্ঞানের বহু রহস্যময় জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। জাতকের ৭ম ভাবাধিপতি মঙ্গল স্বক্ষেত্রে শনি বক্রী ও রাহু সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। ১৯৬১ সালে তার প্রথম বিবাহ হয় যা ১৯৯৫ সালে বিচ্ছেদ হয়, ১৯৯৫ সালেই পুনরায় ২য় বিবাহ হয়, এবং ২০০৬ সালে তা ভেঙে যায়। ১৯৮৫ সালে রাহু ও মঙ্গলের দশায় তিনি নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের ‘রোল মডেল’ হিসাবে কাজ করেন।

২০০২ সালে শনির দশাকালে তিনি ‘আপেক্ষিকতাবাদ’ ও ‘ব্ল্যাকহোলস্‌ থিওরি’ নিয়ে গবেষণা করেন ও গবেষণালব্ধ বই লেখেন। গোচরে শনি ও মঙ্গলের সহাবস্থান কালে ১৯শে মে ২০১৮ তে সেই স্বনামধন্য কালজয়ী বৈজ্ঞানিক এবং বিশ্বের অন্যতম সেই জ্যোতির বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।

বক্রীগ্রহের বক্রতার বিশেষত্ব ও জাত চক্র নিয়ে ব্যখ্যা

বুধের বক্রীকাল – বুধের বক্রী অবস্থার অর্থ নির্দিষ্ট কর্ম চক্রের ভঙ্গ। অহেতুক তর্ক, ভুল বোঝাবুঝি, যানবাহনে বাধা, কম্পিউটারের কাজ বন্ধ হওয়া। ফলে বক্রী থাকাকালীন চুক্তি, কথাবার্তা বন্ধ রাখা, প্রযুক্তিবিদ্যা সংক্রান্ত যান্ত্রিক বস্তু ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। বাক্যালাপের মধ্যে সংযত থাকা আবশ্যক। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে সখ্যতা বাড়ানো আবশ্যক, সুস্থ্য চিন্তাধারা রাখা, পুরনো লেখাকে শেষ করা আবশ্যক।

শুক্রের বক্রীকালপ্রেমের কারক শুক্র বক্রী থাকলে সম্পর্কের কোনো হানিকারক অবস্থা প্রকাশ পায় বা আলাদা দিকে সম্পর্ক প্রকাশ করে।

কলত্রকারক গ্রহ শুক্র বক্রী থাকলে নিজের যৌন জীবন সম্পের্ক সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। স্ত্রী জাতির সঙ্গে সম্পের্কর সুস্থিরতা এবং শান্তি বজায় রাখা আবশ্যক।

মঙ্গলের বক্রীকাল – বক্রী মঙ্গল বাদানুবাদ বা সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারে। তাই কাজে চাপ এবং সমস্যাকে না এড়িয়ে বাস্তবতার সাথে বিচার করা আবশ্যক। স্থিরতা ও ধৈয্যের সঙ্গে কাজ করা আবশ্যক। সমস্যা সৃষ্টি হলে তার সমাধান নিজের চেষ্টায় করা উচিত।

বৃহস্পতির বক্রীকাল বক্রী বৃহস্পতি নির্দেশ করে মানসিক অদৃঢ়তা এবং অদৃঢ় চরিত্র। এই জাতক-জাতিকা সাধারণত বক্রী অবস্থায় পড়ে থাকা কোনো কাজ করতে চায়। বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের  প্রবণতা থাকে কিন্তু অলসতা বা কর্মবিমুখী হওয়ার ফলে নতুন সুযোগ হারাবে। বিবাহের ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ার যোগ থাকে। বৃহস্পতির বক্রী অবস্থায় কোনো বিপজ্জনক ঝুঁকি না নিয়ে এবং যে কোনো কাজ শুরু করার আগে সবদিকে বিবেচনা করা অত্যাবশ্যক।

শনির বক্রীকাল বক্রী শনি কর্মে  হতাশা আনে। কারণ কাজ শেষ করার জন্য কাজের সীমানা লঙ্ঘণ করার প্রবণতা থাকে। একাকীত্বে ভোগে তাই হীনমন্যতা জন্মায়। একই কাজ বার বার করার প্রবণতা থাকে। যেকোনো কর্ম পরিকল্পনা মাফিক নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির রেখে নিয়মানুবর্তীতার মাধ্যমে করা আবশ্যক।

ইউরেনাসের বক্রীকাল : – বক্রী ইউরেনাস জাতকজাতিকাকে কারণ ছাড়াই বিদ্রোহী বানায়। যে কোনো বিষয়কে বিপরীত প্রেক্ষায় দেখতে প্রচেষ্টা করে। বিশেষ করে রাজনৈতিক চিন্তাধারা, প্রত্যেকটি কাজ মানসিক চিন্তাধারা দিয়ে দেখে। বৈজ্ঞানিক তথ্য, সাময়িক ঘটনা ইত্যাদির মধ্যে ভূতাত্ত্বিক চিন্তাধারা দিয়ে বিচার করতে হবে।

নেপচুনের বক্রীকাল :  বক্রী নেপচুন মনের অবচেতন স্তরকে জাগ্রত করে। বর্তমান কর্ম থেকে সম্পূর্ণ অবচেতন ভাবে সরে যেতে চেষ্টা করে। সমস্যা সমাধানের জন্য যেকোনো জিনিষ প্রত্যার্পণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মানসিক ধ্যানধারনা দ্বারা অবচেতন মনের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে তাকে স্বীকার করতে হবে।

প্লুটোর বক্রীকাল :  বক্রী প্লুটো মনের গভীরে ছায়াছন্ন অবস্থার বিকাশ করতে চায় এবং অপরের ওপর সেই ছাপ ফেলতে চায়। এই কারণে অন্য ব্যক্তির ওপর প্রভাব রদ করে নীজের জীবনের অতীতকে স্মরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

জাগতিক জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো এরা দেশের সর্বহারা গোষ্ঠীর সূচক। দেশের সম্পর্কে এরা উদাসীন। এক মুঠো অন্নের জন্য অনির্দিষ্ট ও অসামাজিক কর্মে  লিপ্ত থাকে। ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো বৈপ্লবিক নীতিকে সমর্থন করে বলে বিরোধী গোষ্ঠীগণ নিজেদের স্বার্থে চন্ডনীতি অবলম্বন করে দেশের বিদ্রোহবিপ্লবরাজনৈতিক অস্থিরতা, অরাজকতা সৃষ্টি করে।

বক্রীগ্রহ বিগত জীবনের অপূর্ণ কর্মকে এই জীবনের কর্মের সঙ্গে জোড় বন্ধন করে। বক্রী গ্রহ মনে করিয়ে দেয় গত জীবনের কর্ম বা কোনো একটি ঘটনাকে আর জানিয়ে দেয় যখন যেটা করা উচিত। সেই কারণেই বক্রী গ্রহের বক্র থাকাকালীন মানুষের চিন্তায় পূর্ণ ভাবনা আনে আরাধ্য কাজটি শেষ করায়।

গ্রহরা বক্রী অবস্থায় পূর্ব জন্মের সঙ্গে কিরকম সম্পর্ক জোড়ে তা দেখতে হলে প্রতি গ্রহের বক্রী অবস্থাকে দেখা উচিত।

বক্রী বুধ পূর্ব জন্মবুধ বক্রী থাকলে জাতকজাতিকার পূর্বজন্মের চিন্তা, যোগাযোগের ধারা, কথা বলা কর্ম সবই অর্থহীন ও অমূলক ছিল বলে মনে হয়। ফলে সে এই জীবনের প্রতিও উদাসীন হয়ে পড়ে। এবং নিজের পূর্বজন্মের পুনরাবৃত্তি না হওয়ার কারণে অতি তৎপর হয়ে ওঠে এবং এই জীবনকে সর্বক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ করার কারণে হটকরী সিদ্ধান্ত নেয়, এবং আশাভঙ্গ হয়ে অবসাদে ভোগে মনে রাখতে হবে জন্মছকে বক্রী বুধের সঙ্গে শুক্র, চন্দ্র, কেতু বা শনির অবস্থান জাতকজাতিকার জীবনে অশুভত্ব আনতে পারে।

বক্রী মঙ্গল পূর্বজন্ম : – মঙ্গল যুদ্ধের কারক গ্রহ। মঙ্গল নির্দেশ  করে ক্রোধ, সাহস, দৈহিক পরিশ্রম ইত্যাদি। কিন্তু কারোর জন্মছকে মঙ্গল বক্রী থাকার অর্থ জাতকের কাজের প্রতি অনীহা, সময়ে কোনো কাজ না করার প্রবণতা। জাতকের পূর্বজন্মের কর্মের  আত্মঅহংকারীতা  জাতকের এই জীবনের সাফল্য থেকে বঞ্চীত করতে পারে। ফলে রাগ, স্ববিরোধী, হঠকারী, অপরাধী, দুর্ঘটনাগ্রস্থ ও আত্মহনন করার প্রবণতা জন্মায়। রাশিচক্রের ৮ম পতি মঙ্গল। বক্রী অবস্থায় যৌন সম্পর্কেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।  অথবা অবৈধ প্রণয়ের যোগ সৃষ্টি করতে পারে।

বক্রী বৃহস্পতি ও পূর্বজন্ম : – বৃহস্পতি জ্ঞান, বুদ্ধি ও সম্পদের কারক গ্রহ। জন্মছকে বক্রী বৃহস্পতি নির্দেশ  করে যে গত জন্মে জাতকের নিজের জীবন শ্রীবৃদ্ধি হয়নি। জাতক পূর্ব জন্মে অন্ধবিশ্বাসী এবং বৃথাগর্বী ব্যক্তি হিসাবে সাফল্য পায়নি। যার ফলস্বরূপ জাতক এই জন্মে তার জীবনের সঠিক মূল্যায়ন করার বিষয়ে বিশেষভাবে তৎপর হয়ে ওঠে। বক্রী বৃহস্পতির জন্য জীবনে নৈতিকতা ও শুভ্রতাকে আশ্রয় করে অগ্রসর হওয়ার প্রয়াস করলেও সঠিক ধর্মপালন, নীতি নির্ধারণ ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত হয়। জাতক সৎ উদ্দেশ্যে চলার চেষ্টা চালালেও অনেক সময় নানাবিধ সমস্যার সন্মুখীন হয়ে নিরাশা ও হতাশায় ভোগে।

বক্রী শুক্র ও পূর্বজন্ম : –  শুক্র প্রেম, সুন্দরতা, ভালোবাসা ও আনন্দের কারকগ্রহ। কিন্তু জন্মছকে বক্রী শুক্র নিের্দশ করে পূর্বজন্মে স্বামীস্ত্রীর অসদাচরণ, একে অপরের প্রতি অনৈতিকতা, অসামাজিকতা, বিরূপ আচরণ ইত্যাদি। ফলে জাতক এই জন্মে তার প্রতিবিধান করার উদ্দেশ্যে বিশেষ তৎপর হয়ে ওঠেন, কিন্তু বক্রী শুক্রের জাতকজাতিকার বৈবাহিক জীবন সুখকর হয় না। এবং অনেক সময় এই কারণেই তারা বৈবাহিক সম্পের্কর বহির্ভূত প্রেমে জড়িয়ে পড়তে পারে। শুক্র গাড়ী বা যানবাহনের কারক গ্রহ। সুতরাং বক্রী শুক্রের জাতকের বক্রী শুক্র চলাকালীন গাড়ী, যানবাহনের প্রতি বিশেষ নজর রাখা আবশ্যক। বক্রী শুক্রের গোচরে অবস্থান কালে পুরনো বন্ধুবান্ধবী, সঙ্গীদের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।

বক্রী শনি ও পূর্বজন্ম :  বক্রী শনি নির্দেশ করে পূর্ব জন্মের কাজকর্মের প্রতি অবহেলা বা অসমাপ্ত রাখা এবং এই জন্মে সেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করা। যেমন সিংহ রাশিতে বক্রী শনি নির্দেশ করে গত জন্মে কোনো নেতৃত্বপূর্ণ কাজ অপূর্ণ রাখা বা পিতা পিতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অবজ্ঞা করা। কাজঅবজ্ঞা বা অসমাপ্ত রাখার অর্থ পূর্বজন্মে জাতক অধৈয্যপরায়ণ ছিলেন যার মধ্যে এই জন্মে কর্তব্যপরায়ণ, পরিশ্রমী হওয়ার একান্ত চেষ্টা করে যাবেন। ফলে তারা একাকীত্ব অনুভব বা অপর ব্যক্তি তার সম্পর্কে ভুল বুঝবে। শনি কাজের বিচার করে তাই জাতক পূর্ব জন্মের কর্ম সংশোধন হেতু বারংবার একই কাজ করবেন এবং ফলস্বরূপ হীনমন্যতায় ভুগবেন। বক্রী শনির সাথে রাহুকেতু, কার্মিক  গ্রহদের যোগ ভালোমন্দ দুইরকম ফল দেবে। গোচরে শনি বক্রী থাকাকালীন নতুন কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা তাদের বৃদ্ধি ব্যবস্থা না করাই অধিক শ্রেয়। কোনো নতুন চুক্তিপত্র বা কোনো নতুন অঙ্গীকার বা কোনো নতুন সিদ্ধান্ত না নেওয়াই সমীচিন হবে।

উপরোক্ত আলোচনার মধ্যে দিয়ে বোঝা যাবে যে বক্রী গ্রহ আমাদের পূর্ব জন্মের কর্মের  কারকত্ব নির্দেশ করে। পাপকর্ম, অশুভ কর্মের জন্য এ জীবনের ভাবের কারকত্ব নিয়ে অশুভ ফল প্রদান করে। আর পূর্বজন্মের অসমাপ্ত কর্মকে স্বরূপে প্রকাশ করেন। পূর্বজন্মের কৃতকর্মের ফল এই জন্মেই ভোগ করতে হয়। কোনো প্রতিকার দ্বারাই পূর্ব জন্ম কৃতকর্মের ফল প্রাপ্তি থেকে মুক্তি লাভ হয় না। এক্ষেত্রে ইষ্টদেবদেবীর আরাধনা, পুজার্চনা , দানধ্যান, ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে দিয়েই মানবজীবনের মুক্তির পথ প্রশস্ত হবে।

About Prof. Dr. Kuntal Kr Mukhoty

 Prof. Dr. Kuntal Kr Mukhoty (Gold Medalist) is a renowned Jyotish Mahamahopadhyay, Jyotish Samrat, Jyotish Guru, Ph.D in Astrology (Traditional and Krishnamurti Paddhati), Ph.D in Vastushastra (on going from B.H.U), Astrologer (Prediction & Kundali making), Palmist, Vastuvid and Numerologist.

Chamber

Sneha James House, Dum Dum & Gariahat, Maa Bagala Jewellers – Baguihati, Tegaria , Sonary East Jamshedpur

Residential Chamber : Nagerbazar

Contact

9123090393/8017686476/9038837027

Loading