নিজস্ব প্রতিনিধি – বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেও বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে পারছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিরোধীরা তো বটেই, দলের ভেতর থেকেও প্রশ্ন উঠছে, তিনটি কৃষি আইনই যখন প্রত্যাহার করা হবে, তখন কেন এতদিন নীরব ছিলেন প্রধানমন্ত্রী? তিনটি কৃষি আইন নিয়ে দলকে বিপাকে ফেলার জন্য বিজেপিতে মোদি বিরোধীরা সরব হতে শুরু করেছেন। কিন্তু এখনই প্রকাশ্যে তাঁরা মুখ খুলছেন না। সকলেই তাকিয়ে রয়েছেন উত্তর প্রদেশসহ ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের দিকে। ফল দলের অনুকূলে না গেলে মোদি বিরোধীরা সোচ্চার হবেন বলে ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে।

বিজেপির সাংসদ এবং প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতি বরুণ গান্ধী বহুদিন ধরেই কৃষি আইনের বিরোধিতা করছিলেন। দলের লাইনের বাইরে গিয়ে সমানে বিতর্কিত মন্তব্য করে দলের নেতাদের বিব্রত করছিলেন। শুক্রবার কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা হতেই একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে মোদিকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছেন তিনি। কৃষি আইনের প্রতিবাদ আন্দোলনে সাত শতাধিক কৃষকের মৃত্যু থেকে শুরু করে লখিমপুর-খেরিতে মন্ত্রীপুত্রের গাড়ি চাপায় কৃষক মৃত্যু, সব উল্লেখ করে ন্যায় চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

ভারতের প্রাক্তন সেনা প্রধান তথা মোদি মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) ভিকে সিং-ও প্রশ্ন তুলেছেন কৃষি আইন প্রত্যাহারের যৌক্তিকতা নিয়ে। বিজেপির অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে, এই আইন প্রত্যাহারে আদৌ দলের কোনো লাভ হবে কিনা তা নিয়ে। কারণ বিরোধীরা সমানে আক্রমণ করে চলেছে বিজেপিকে। মোদির ইমেজকেই টার্গেট করছেন কংগ্রেসসহ বিভিন্ন দলের নেতারা। এরই মধ্যে বিজেপির সাবেক জোট শরিক শিরোমণি আকালি দলের নেতা সুখথবীর সিং বাদল জানিয়ে দিয়েছেন, কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হলেও তাঁরা আর বিজেপির জোটে ফিরবেন না। তবে পাঞ্জাবের দলছুট কংগ্রেস নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দার সিং বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেস ছাড়ার পর অমিরিন্দারের রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে বিজেপি নেতাদের মধ্যেও প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে।

বিজেপিতে মোদি বিরোধীদের একটি বড় অংশ মনে করেন, কৃষি আইন প্রত্যাহার করার মাধ্যমে বিরোধীদের বক্তব্যকে কার্যত মেনে নিয়েছে সরকার। এবার ফেল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ (এনআরসি) থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার হবে। তাছাড়া মোদীর ঘোষণার পরও কৃষক আন্দোলন থামেনি। বরং নতুন নতুন দাবিতে, কৃষকেরা সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে। আজ রোববার সংযুক্ত মোর্চার নেতারা বৈঠকে বসছেন। তার আগেই মোর্চার নেতা রাকেশ টিকায়েত জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনার আগে আন্দোলন প্রত্যাহার হবে না। কংগ্রেসও নতুন উদ্যমে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছে।

রাহুল গান্ধীর দাবি, তিনি আগেই বলেছিলেন কৃষক স্বার্থ বিরোধী আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে। সেটাই হয়েছে। তাঁর বোন, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরা, ফের লখিমপুর খেরিতে মন্ত্রীপুত্রের গাড়িতে চাপা দিয়ে কৃষক হত্যার অভিযোগকে সামনে এনে মোদিকে খোঁচা দিয়ে চলেছেন। ফলে ঘরে-বাইরে চাপে রয়েছেন মোদি।

Loading