শান্তি রায়চৌধুরী : বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায়  বিশেষ কিছু পংক্তি শুনে বাঙ্গালীদের মহালয়া শুরু হয়। আর সেই সাথেই পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ঘটিয়ে শুরু হয়ে যায় মাতৃপক্ষ বা দেবীপক্ষ।  এই সময় দেবী পার্বতী তার চার সন্তানকে নিয়ে মর্তে আসেন। সকলেই তাদের নিজেদের দুঃখ কষ্ট ভুলে নতুন জামা কাপড় পরে মেতে ওঠে উৎসবের আনন্দে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে দেবী তার সন্তানদের নিয়ে একেকবার একেকটি বাহনে যেমন দোলা ঘোড়া পালকি গজ করে মর্তে আগমন ও গমন করেন। ঠিক তেমনই ২০২১-এ দেবী ঘোড়ায় করে মর্তে আসছেন, যার ফলস্বরুপ হতে পারে দুর্যোগ এবং দোলায় করে তিনি কৈলাসের পথে পাড়ি দেবেন। যেখানে থাকবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর গন্ধ। এই উৎসবে প্রাক্কালে বাতাস ভরে ওঠে শিউলি ফুলের গন্ধে চারিদিক সেজে ওঠে কাশফুলে এবং পুরো আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকে প্রাকৃতিক মেঘোমালা। শরৎকালের উদযাপিত এই মহোৎসবে র অপর নাম অকালবোধন। পুরান মতে রাঘব  পুত্র শ্রী রামচন্দ্র লঙ্কার রাজ কী রাবণের কাছ থেকে তার স্ত্রী সীতাদেবী কে ফিরিয়ে আনার জন্য লঙ্কা রাজ রাবণের সাথে যুদ্ধের প্রাক্কালে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন। আর সেই পূজায় অর্ঘ্য হিসাবে শ্রীরামচন্দ্র ১০৮টি পদ্ম ফুল দিয়ে   দেবীর আরাধনা করেন ।কিন্তু দেবী উমা রাঘবপুএ শ্রী রামচন্দ্রের পরীক্ষা নিতে মায়া বলে একটি পদ্ম সরিয়ে নেন। তখন শ্রীরামচন্দ্র তার একটি চোখ দেবীর পায়ে অর্পণ করতে হাতে তুলে নেন। রাঘব পুত্র-এর কমলের মত চোখ হওয়ায় তার অপর নাম পদ্মলোচন আর সেই কারণেই  তিনি তার চোখ দেবীর পায়ে অর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।  এই দেখে দেবী পার্বতী তার ভক্তের উপর প্রসন্ন হন এবং তাকে সেই পদ্মটি

 ফিরিয়ে দিয়ে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার বর প্রদান করেন ।আর সেই থেকে প্রতিবছর শরৎকালের  মহাসমারোহে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়ে থাকে মর্তলোকে। এই উৎসবে ধনী-দরিদ্র সকলেই নিজেদের দুঃখ-কষ্ট সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। দুর্গাপুজো বাঙ্গালীদের শ্রেষ্ঠ ও মহোৎসব হলেও এই উৎসবে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ  অংশগ্রহণ করে । কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী দের হাতের জাদুতে গড়ে ওঠে মায়ের মূর্তি। গামগঞ্জ থেকে দলে দলে ঢাকিরা এসে ভিড় জমায় মণ্ডপে মণ্ডপে । কোথাও সাবেকীআনার আবার কোথাও বা নানান মণ্ডপ তৈরি করে প্রতিযোগিতা চলে পাড়ায় পাড়ায় ।শুধু তাই নয় এই উৎসবকে ঘিরে হয়ে থাকা নানান প্রতিযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে থাকে নানান পুরস্কার ও থাকে রেকর্ড ভাঙার খেলাও।

সবকিছু মিলেমিশে দেবীর আরাধনা হয়ে থাকে মহাসমারোহে । শুধুমাত্র ভারতেই নয় ভারতের বাইরে থাকা প্রবাসী বাঙালিরা ও বিদেশে এই উৎসব মহাসমারোহে সাথে পালন করে থাকে । আর সেই ক্ষেত্রে কুমারটুলি থেকে বেশ কিছু দিন আগেই দেবী উমা পাড়ি দেন প্রবাসী বাঙ্গালীদের আয়োজিত মণ্ডপের উদ্দেশ্যে। প্রায় বিসর্জনের পর থেকেই আগামী বছরের পুজোর নির্ঘণ্ট নিয়ে দিন গোনা শুরু হয় যায়।

Loading