নিজস্ব প্রতিনিধি – ফারাক্কায় গঙ্গার মূল ধারার যেখানে যেখানে ইলিশ ডিম পাড়ে, সেই এলাকা সংরক্ষণই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। সেই সাথে তারা দেখতে চায়, ইলিশ উত্তরে নদী পথ বেয়ে কত দূর যেতে পারে। যে কারণে, ছোট ছোট ইলিশ মাছ ধরে, তার গায়ে চিহ্ন দিয়ে তাকে খুব যত্নের সঙ্গে বাঁচিয়ে রেখে গঙ্গার উত্তর দিকে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ইলিশ জল থেকে তুললে খুব অল্প ক্ষণ বাঁচে। তাই খুবই যত্ন লাগে এই কাজে। এ বার, সেই চিহ্নিত ইলিশ যদি নদীর উত্তর দিকের কোনো জায়গায় কোনো মৎস্যজীবীর হাতে পড়ে, তা হলে ইলিশের গতিবিধি বোঝা যাবে। সে জন্য মৎস্যজীবীদের চিহ্নিত ইলিশ প্রতি ২০০ টাকা করে পুরস্কারও দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের এক কর্মকর্তা সঞ্জীবকুমার জানান, ইতিমধ্যেই প্রায় ২৫০টি এমনই চিহ্নিত ইলিশ ধরা পড়েছে গঙ্গার উজানের বিভিন্ন এলাকা থেকে।
সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ফারাক্কার পর থেকে উজানে ইলিশের প্রজনন এখন প্রায় বন্ধ। ফারাক্কা ব্যারাজ টপকে গঙ্গার উজানে ইলিশ আর ঢুকতে পারছে না। অথচ ফারাক্কা ব্যারাজ চালু হওয়ার আগে এলাহাবাদ পর্যন্ত প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। নদীর উজানে ব্যাপক পলি, নদী দূষণ এবং নির্বিচারে জাটকা তথা ছোট ইলিশ ধরার ফলে ফারাক্কায় ইলিশের পরিমাণ একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। তাই ফরাক্কায় গঙ্গায় নির্দিষ্ট এলাকাগুলোকে ডিম পাড়ার উপযোগী করে তুলে সংরক্ষণ করে গঙ্গায় ইলিশের সংখ্যা বাড়ানোর এই চেষ্টা ।
ফারাক্কায় ইতিমধ্যেই ২৫০ মিটার লম্বা ও প্রায় ২৬ মিটার চওড়া একটি নতুন নেভিগেশনাল লকগেট তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পুরোনো লকগেটটি চালু হয় ১৯৭৮ সালে। তারপর থেকেই উজানে ইলিশের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, নতুন নেভিগেশনাল লকগেট চালু হয়ে গেলে উজানে ইলাহাবাদ পর্যন্ত ইলিশের জোগান বাড়বে। ডিম পাড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মৎস্য বিশেষজ্ঞ এ কে সাহু জানান, ‘ফারাক্কায় ইলিশ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। ডাউন স্ট্রিমে গঙ্গা থেকে ইলিশ ধরে বিশেষ ব্যবস্থায় ট্যাগিং করে তা ছেড়ে দেয়া হচ্ছে আপ স্ট্রিমে। তার গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। এতে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।