আত্মা থেকে জীবনের সৃষ্টি

প্রফেসর ডক্টর কুশল সেন

অধ্যাপক (ফলিত সংখ্যাতত্ত্ব), Astrological Research Institute of Krishnamurti Paddhati (ARIKP)

সদস্য, মার্গদর্শক মন্ডল, ভারতীয় বৈদিক জ্যোতিষ সংস্থানম্‌, বারানসী

e-mail :  kooshoeg@gmail.com

কোথা থেকে এলাম আমরা?যাবই বা কোথায়?আসা-যাওয়ার দোলার সৃষ্টি কর্তাই বা কে? আর কে-ই বা তার নিয়ন্ত্রক। ছান্দোগ্য উপনিষদে এইসব প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে সমৃদ্ধ। প্রতিটি জীবের উৎপত্তি সৎস্বরূপ থেকে। মরণে জীব সেই সৎস্বরূপে মিশে যায়। পিতা ঋষি আরুনির কাছে এই প্রশ্নটি রেখেছিল ঋষিপুত্র শ্বেতকেতু।

একদিন আশ্রমের স্নিগ্ধ ছায়ায় বসে পিতাকে শ্বেতকেতু বলেছিলেন, ‘‘পিতা যদি সৎ-ই আমাদের উৎপত্তিস্থল হয় তবে আমরা আমাদের স্বরূপকে জানতে পারি না কেন?

আরুনি বলেছিলেন, জীব সৃষ্ট হয়ে নানা উপাধি লাভ করে, কিন্তু মৃত্যু র পর তার আর কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকে না।

শ্বেতকেতু পুনর্বার তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘পিতা গৃহ থেকে গৃহান্তরে অর্থাৎ অন্য গৃহে যখন মানুষ যায় তখন তার মধ্যে পূর্ব গৃহের স্মৃতি বিদ্যমান থাকে। কিন্তু জীব যখন মৃত্যু থেকে জন্মগ্রহণ করে, সৎস্বরূপে বিলীন থেকে আবার জন্মলাভ করে তখন তার সৎস্বরূপের কথা মনে থাকে না কেন? ব্রহ্মে বিলীন হয়েও জীব বিনষ্ট হয় না কেন?কেন সে সংসার সমুদ্রে আবার ফিরে ফিরে আসে?’’

শ্বেতকেতুর প্রশ্নের উত্তরে ঋষি আরুনি বলেন, ‘জীব অবিনাশী, তার রূপ সামান্য বুদ্‌বুদের  মত নয়, কোনো জীবনের অঙ্গচ্ছেদ করলেও তার মৃত্যু হবে না।জীবের অন্তস্থ যে আত্মা বিরাজ করে সেই আত্মার বিনাশ হলেই জীবের মৃত্যু সম্ভব।একটি বৃক্ষকে অবলোকন করা হলে বৃক্ষটির মূলে যতক্ষণ না আঘাত করা যায় ততক্ষণ সে প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকে। শাখা-প্রশাখা ছেদনে বৃক্ষের মৃত্যু সম্ভব নয়।তাহলে প্রমাণ হয় বৃক্ষের জীবন তার ডালপালার উপর নির্ভর নয়, বৃক্ষের আত্মার উপর নির্ভরশীল। ঠিক সেই রকম জীব বিমুক্ত হয়ে শরীর মরে, জীব মরে না। কর্মফলে সে বেঁচে থাকে,কর্মফল অনুযায়ী এই জগতে ফিরে আসে। কিন্তু তাদের উৎপতি ও বিনাশ মৎস্বরূপে বিলীন হয়ে যাওয়া। কর্মফলের জন্যই জীব বারবার ফিরে আসে।

আরুনির এই ব্যাখ্যায় শ্বেতকেতু আরও একটি প্রশ্নের অবতারণা করলেন। তিনি বললেন, ‘পিতা, আত্মা অণুপরিমান ও নামরূপহীন। এই নামরূপহীন অণু পরিমাণ আত্মা থেকে কি করে বিরাট বৃক্ষ বা জীবের সৃষ্টি হয় ? শ্বেতকেতুর প্রশ্ন শুনে আরুণি তাকে এই সুবিশাল বটবৃক্ষ থেকে একটি বটফল আহরণ করতে আদেশ দেন। তারপর বলেন ;

  • এবার ফলটিকে ভাঙ

  • ভাঙা হয়েছে

  • এর ভিতর কি দেখতে পাচ্ছ?

  • অণুর মতো বীজের রাশি।

  • এই অণুতুল্য একটি বীজকে ভাঙ

  • ভাঙা হয়েছে?

  • কি দেখলে?

  • কিছুই না।

 শ্বেতকেতুকে আরুণি বলেন যে ; অণুতুল্য বীজের ভিতর কিছুই থাকে না। সেই অণুতুল্য বীজ থেকেই বিরাট বটবৃক্ষের সৃষ্টি। সুতরাং আত্মা থেকে বৃহৎ জীবের সৃষ্টি হতে পারে না কেন? পিতার যুক্তি শুনে শ্বেতকেতু নীরব হলেন।

Loading